শাসন, 20 জুন: 'শাসন আছে শাসনেই', বহু চর্চিত এই শব্দবন্ধগুলি প্রযোজ্য ভোট-রাজনীতির ক্ষেত্রেও ৷ তা না হলে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শাসন পঞ্চায়েত বিরোধী-শূন্য হতে পারে না ৷ 2013 সাল থেকে 2023, পরপর তিনটি পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনও মনোনয়নই দাখিল করতে পারল না বিরোধী দলগুলি ৷ যার জেরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসন পঞ্চায়েতে জয়ের হ্যাটট্রিক বজায় রইল তৃণমূল কংগ্রেসের ৷ তবে, বিষয়টিকে সহজভাবে নিতে নারাজ বিরোধী শিবির ৷ শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি-সহ অন্যান্যরা ৷ বিরোধী-শূন্য পঞ্চায়েত আসলে 'গণতন্ত্রের হত্যা' বলেই মনে করছে তারা ৷ যদিও, বিরোধীদের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে তৃণমূল ৷
বাংলার রাজনীতিতে শাসন বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, আছে এবং আগামীতেও থাকবে ৷ তা বাম আমল হোক কিংবা পরিবর্তনের পর তৃণমূল জমানায় ! এর মূলে অবশ্য রয়েছে ভেড়ি দখলের রাজনীতি ৷ কারণ, শাসন অঞ্চলজুড়ে বিঘার পর বিঘা ভেড়ি রয়েছে ৷ যেখানে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে ৷ বলাই বাহুল্য, শাসনের রাজনীতি আবর্তিত হয় ভেড়িকে কেন্দ্র করেই ৷ যে যখন রাজ্যপাটে থাকে, তখনই ভেড়ির নিয়ন্ত্রণ থাকে তার হাতে ৷ লোকমুখে প্রচলিত হয়ে গিয়েছে ‘‘ভেড়ি যার, শাসন তার ৷’’
একসময় বাম আমলে বিঘার পর বিঘা এই ভেড়ির নিয়ন্ত্রণ হত শাসনের তৎকালীন বেতাজ বাদশা তথা সিপিএমের দাপুটে নেতা মজিদ মাস্টারের হাত ধরে ৷ অভিযোগ, তখনও সিপিএমের সন্ত্রাসে বিরোধীদল তৃণমূল কংগ্রেস সেখানে মনোনয়ন তোলার সাহস দেখাতে পারেনি ৷ একচেটিয়া ভোট করে শাসন পঞ্চায়েত-সহ বারাসত 2 নম্বর ব্লকের একাধিক পঞ্চায়েতের দখল নিত তৎকালীন ক্ষমতাসীন সিপিএম ৷ এরপর শাসন দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে ৷ রাজ্যে শাসক দলের পরিবর্তন হয়েছে ৷ তবু, তৃণমূলের জমানাতেও বদলায়নি শাসনের ভোট ছবি ৷ মনোনয়ন তুলতে বাধা, হুমকি, সন্ত্রাস, বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত ৷ সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলে আসছে ৷
আরও পড়ুন:আগে সুষ্ঠু ভোট পরে মিষ্টি, তৃণমূল প্রার্থীর সৌজন্যে 'না' বিজেপি প্রার্থীর
প্রশাসন সূত্রে খবর, শাসন পঞ্চায়েতে এ বছর আসন সংখ্যা বেড়ে 29 হয়েছে ৷ এর একটিতেও মনোনয়ন তুলতে পারেনি বিরোধীরা ৷ 2013 ও 2018 সালে পঞ্চায়েতের 22টি আসনে কোনও মনোনয়ন জমা পড়েনি বিরোধীদের থেকে ৷ সেবারও শাসন পঞ্চায়েত এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে ৷ ফলে, পরপর তিনবার এই পঞ্চায়েত বিরোধী-শূন্য করে জয়ের হ্যাটট্রিক গড়ল শাসকদল ৷ শুধু শাসনের কথা বললেই ভুল হবে ৷ হাড়োয়ার বকজুড়ি এবং মিনাখাঁ ব্লকের আটপুকুর পঞ্চায়েতও বিরোধী-শূন্য হতে চলেছে ৷ এই পঞ্চায়েতের 41টি আসনের একটিতেও মনোনয়ন তুলতে পারেনি বিরোধীরা ৷ ইতিমধ্যে উত্তর 24 পরগনার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলাপরিষদের আসন শাসকদলের ঝুলিতে এসেছে বলে জানা গিয়েছে ৷ যা ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে ৷