পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

পদ্মাখালের জবরদখলে জলমগ্ন হাবড়া, শিশুর প্রাণ গেলেও নেই হুঁশ - জলমগ্ন হাবড়া

চার মাস ধরে জলবন্দী উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা ।

পদ্মাখালের জবরদখলে ডুবেছে হাবড়া, এক প্রাণেও নেই হুঁশ
পদ্মাখালের জবরদখলে ডুবেছে হাবড়া, এক প্রাণেও নেই হুঁশ

By

Published : Oct 28, 2020, 7:26 PM IST

হাবড়া, 28 অক্টোবর : পদ্মাখাল জুড়ে বেআইনি নির্মাণ । যার অনিবার্য পরিণতিতে হাবড়া শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় জমে রয়েছে বৃষ্টির জল । তাতে প্রাণ গিয়েছে এক শিশুর । তবু হেলদোল নেই প্রশাসনের । জলবন্দী বাসিন্দারা ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন প্রশাসনের বিরুদ্ধেই ।

উত্তর 24 পরগনার হাবড়া শহরের উত্তর দিক দিয়ে বয়ে গিয়েছে পদ্মাখাল । কিন্তু জবরদখলের গেরোয় সেই পদ্মাখাল আর খাল নেই । দেখে চেনাও যায় না । খালজুড়ে গড়ে উঠেছে বসতি । অভিযোগ, পদ্মাখাল জবরদখল শুরু হয় বামেদের সময় । বিদায়ের আগে CPI(M) রাতারাতি পদ্মাখালের উপর 52টি পরিবারকে বসিয়ে দেয় । তৃণমূলের জমানাতেও জবরদখলের বিরাম নেই । গত কয়েক বছরে ধরে সেই খালের উপর একের পর এক বেআইনি নির্মাণ হয়েছে । আর তাতেই বন্ধ হয়ে গেছে হাবড়া শহরের জল নিকাশি ব্যবস্থা । বর্তমানে বৃষ্টির জল জমে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে হাবড়া শহরের 8 নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা । বিশেষ করে উত্তর হাবড়া ও হাসপাতাল পাড়া, সেবা সংঘ এলাকা জলে ডুবে । জলবন্দী হয়ে রয়েছে কয়েকশো পরিবার ।

জলে ডুবে গোটা এলাকা

সম্প্রতি হাবড়ার বিধায়ক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জলবন্দী এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন । মন্ত্রীর নির্দেশে কয়েকটি পাম্প বসিয়ে জল সরানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে । কিন্তু স্থায়ী সমাধান কিছুই হয়নি । এদিকে জবরদখল করে নির্মাণকাজ সম্পর্কে মন্ত্রী কোনও কথা বলেননি । তারই মধ্যে গত রবিবার ঘরের মধ্যেই জমা জলে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর । এই ঘটনার পর বাসিন্দাদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে ।

পদ্মাখালের জবরদখলে ডুবেছে হাবড়া

দুর্গত এলাকায় গিয়ে দেখা গেল গোটা উত্তর হাবড়া এলাকা জলবন্দী । বাসিন্দারা বড় টিউব দিয়ে ভেলা বানিয়ে যাতায়াত করছেন । কোথাও আবার বাঁশের সাঁকো বানানো হয়েছে । বেশ কিছু পরিবার বাড়ি ছেড়েছে । রাস্তার উপরে মিনতি সাহার বাড়ি । বাইরে বেরোনোর উপায় নেই । তাই বাড়ির জানালা থেকেই বললেন, "বেশ কিছুদিন জলবন্দী হয়ে রয়েছি । প্রশাসনের কোনও হুঁশ নেই । পদ্মাখালের উপর জবরদখল করে বাড়ি তৈরির ফলেই হাবড়া শহরের জল সরছে না ।"

মিনতি সরকারের বাড়ি পেরিয়ে ভেলায় চেপে কিছুটা গেলেই গোপাল সরকারের টিনের বাড়ি । তাঁর বাড়িতে কোমর সমান জল । মাত্র দু'দিন আগে ঘরের মধ্যে জমা জলে পড়ে গিয়ে তাঁর ছ'মাসের শিশুসন্তানের মৃত্যু হয়েছে । সদ্য সন্তানহারা পিতা বলছেন, "সরকারি বাড়ির জন্য আবেদন করেছিলাম । বাড়ি পাইনি, টিনের ঘরে থাকি । বাচ্চাটা খাট থেকে জলে পড়ে ডুবে মারা গেল । আমরা তার খেসারত দিলাম ।"

গোপালবাবুর পড়শি রাজীব সরকার বললেন, "আমার বাড়িতেও ছোটো বাচ্চা রয়েছে । ভয়ে ভয়ে থাকি । জল জমে যাওয়ায় এখন কোনও নেতাও আসেন না । পদ্মাখালের জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না ।" প্রায় একই কথা বললেন স্থানীয় বাসিন্দা শংকরী সাহাও । গোটা এলাকাটি হাবড়া পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা BJP নেত্রী লীনা সিংহ বলেন, "গত কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় জল আটকে যাচ্ছে । কারণ পদ্মাখালের উপর জবরদখল করে বেআইনি নির্মাণ হয়েছে । আমরা বহুবার বলেছি । কিন্তু পৌর প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি । প্রত্যেকবার পৌরসভা থেকে পদাধিকারীরা আসেন । আর চাল, ডাল, আলু দিয়ে যান । কিন্তু এখানকার মানুষ ওসব চান না । চান জল সরানোর পাকাপাকি ব্যবস্থা হোক । বেআইনি নির্মাণ ভেঙে পদ্মাখালকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক ।"

যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ হাবড়া পৌরসভার প্রশাসক নীলিমেশ দাস । তিনি বলেছেন, "জল সরানোর জন্য পৌরসভা থেকে চারটি পাম্প বসানো হয়েছে । বেআইনি নির্মাণ যেগুলো হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা চলছে ।" যদিও বেআইনি বাড়িগুলো ভেঙে দেওয়া হবে কি না সে ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details