রাজারহাট, 15 অগাস্ট : ভারতবর্ষ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক স্মৃতি৷ সেই তালিকা থেকে বাদ নেই রাজারহাট ৷ উঁকি মারলে রাজারহাটের আনাচে কানাচে মিলবে নীল বিদ্রোহ কিংবা ডান্ডি অভিযানের অনেক স্মৃতি । সেরকমই একটি স্মৃতির নাম পল্লি নিকেতন স্কুল ৷ স্বাধীনতার পর সমাজকে সমৃদ্ধ করতে বিপ্লবীরা এই স্কুল তৈরি করেছিলেন ৷ কিন্তু পরিচর্যার অভাবে সেই স্কুলের আজ বেহাল দশা ৷
স্বাধীনতা আন্দোলনে অনেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ৷ সমাজে তাঁদের পরিচিতি হয় বিপ্লবী হিসেবে ৷ স্বাধীনতার পর এই বিপ্লবীদের মধ্যে অনেকে রাজারহাটে থাকতে শুরু করেন ৷ এরা অনেকেই জেল খেটেছেন ৷ আবার মোহিনী রায়ের মতো বিপ্লবী শহিদও হয়েছেন ৷ এই বিপ্লবীরা কেউ আজাদ হিন্দের যোদ্ধা, কেউ গান্ধিপন্থী স্বাধীনতা সংগ্রামী ৷ এমন কী, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের অনেক বিপ্লবীও রাজারহাটে থাকতে শুরু করেন । সরকারের দেওয়া তাম্রপত্র বা পেনশন কিছুই নেননি তাঁরা ৷ বরং রাজারহাটের বাগু এলাকায় একটি স্কুল তৈরি করেন । এই স্কুলেরই নাম পল্লি নিকেতন ৷ সমাজকে সমৃদ্ধ করতে শুরু করেন শিক্ষকতা । আজাদ হিন্দ বাহিনীর মেজর সত্যভূষণ গুপ্ত, রসময় বসু ও নিকুঞ্জ সেনের প্রতিষ্ঠা করা সেই স্কুল এখন পরিচর্যার অভাবে ধুঁকছে । স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ব্যবহার করা জিনিসপত্র কোথায় ? উত্তর জানা নেই কারও ৷ তাঁদের লেখা চিঠি , বই ও পুঁথি এখন উইপোকায় খাচ্ছে ৷ স্কুলের কর্মীদের এখন একটাই আবেদন ৷ যেটুকু বেঁচে আছে অন্তত সেইটুকু সংরক্ষণ করা হোক ।
আজাদ হিন্দ বাহিনীর মেজর ছিলেন সত্যভূষণ গুপ্ত । নেতাজির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি । দেশ স্বাধীন হওয়ায় পর তিনি সরকার থেকে কোনও সুবিধা নেননি । বরং ব্রতী হয়েছিলেন দেশসেবায় । একইপথে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন গান্ধিবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক কুমুদ রঞ্জন সরকার । এলাকার স্বনামধন্য ব্যবসায়ী সর্বেশ্বর মণ্ডলের দান করা 9 বিঘে জমিতে তাঁরাই গড়ে তোলেন পল্লিনিকেতন স্কুল । এই স্কুলে পরবর্তীকালে শিক্ষকতার কাজে যুক্ত হয়েছিলেন নিকুঞ্জ সেন, রসময় বসু , উপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায় ও উজ্জ্বল রক্ষিত রায়ের মতো বিনয়-বাদল-দীনেশের তৈরি বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সহযোগিরা । এরা কেউই সরকারের দেওয়া তাম্রপত্র নেননি ৷ এমন কী, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দেওয়া পেনশন নিতে অস্বীকার করেছিলেন ৷ দেশসেবার জন্য রাজারহাটের স্কুলে যোগদান করেন । এলাকার কেউ অসুস্থ হলে তাঁদের পাশে দাঁড়াতেন । কারও কোনও সমস্যা হলে যথাসাধ্য চেষ্টা করতেন । অসহায়দের স্কুলেরই বিভিন্ন ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দিতেন ।