গোবরডাঙা, 19 অগাস্ট : সব দিক থেকেই উলট পুরাণ! ঘূর্ণিঝড় আমফানে যাঁর বাড়ি ধুলিস্যাৎ হয়েছে সেই তিনিই বলছেন ক্ষতিপূরণের টাকা নেব না, তৃণমূল নেতাদের দান করব । ত্রাণশিবিরে ঠাঁই নেওয়া বৃদ্ধ দম্পতির এমন সিদ্ধান্তে হতবাক গোবরডাঙা। দম্পতির সিদ্ধান্তে বিড়ম্বনায় শাসকদল। যদিও তৃণমূল নেতা তথা পৌর প্রশাসক বাড়ি ভাঙায় দোষী করেছেন বৃদ্ধ দম্পতিকেই ৷ তাঁর বক্তব্য, কেন বটগাছের তলায় বাড়ি ?
গোবরডাঙা পৌরসভার 10 নম্বর ওয়ার্ডের সরকার পাড়ায় বাড়ি শংকর চক্রবর্তী ও চায়না চক্রবর্তীর । দু'জনেরই ষাটোর্ধ্ব বয়স। দম্পতির ছেলে দীপঙ্কর চক্রবর্তী পেশায় ড্রাইভার। লকডাউনে কাজ নেই । শংকরবাবু লটারির টিকিট বিক্রি করেন। বর্তমানে তাঁর সামান্য রোজগারে কোনওরকমে তিন সদস্যের পরিবারের দিন গুজরান। এই সেদিনও চক্রবর্তী দম্পতি থাকতেন সরকার পাড়ার রাস্তার পাশের টিন ছাওয়া ইটের বাড়িতে। গত 20 মে-র বিধ্বংসী ঝড়ে বাড়ির পাশের প্রকাণ্ড বটগাছ ভেঙে পড়ে বাড়িটির উপর। কার্যত গুঁড়িয়ে যায় বসতবাটি। সেই রাত থেকেই বৃদ্ধ দম্পতি আশ্রয় নেন স্থানীয় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ত্রাণ শিবিরে । যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য 20 হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। যা পেলে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে বলে আশা করেছিলেন চক্রবর্তী দম্পতি।
চক্রবর্তী পরিবারের মতোই উত্তর 24 পরগনা জেলায় ঝড়ে বাড়ি ভেঙেছে 4 লাখ 50 হাজার । এর মধ্যে 1 লাখ 20 হাজার বাড়ি পুরোপুরি ভেঙেছে ৷ অন্যদিকে, সরাকারি নিয়মে পুরো বাড়ি ভাঙলে ক্ষতিপূরণ মিলবে 20 হাজার টাকা৷ অল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ 5 হাজার টাকা। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গোবরডাঙায় এখনও অবধি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন 3 হাজার 700 জন । যদিও শংকর ও চায়না চক্রবর্তীর সুরাহা হয়নি ৷ যথাসাধ্য দৌড়াদৌড়ির পরেও!
শংকরবাবু নিয়মিত ব্যাঙ্কে খোঁজ নিচ্ছিলেন। কিন্তু টাকা ঢোকেনি। তবু, দিনের পর দিন ত্রাণশিবিরে থাকতে চায় কে! ঘর মেরামতের জন্য ছটফট করছিলেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা । অভিযোগ, এরপর ক্ষতিপূরণ পেতে তৃণমূল নেতাদের দুয়ারে দুয়ারেও ঘোরেন বৃদ্ধ । একাধিকবার আশ্বাস পেলেও কাজের কাজ হয়নি৷ এভাবেই প্রায় তিন মাস কেটে যায়। এর মধ্যে গত 8 অগাস্ট শংকরবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা ঢোকে । যদিও তাঁর বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে৷ হতবাক হন দম্পতি। বটগাছটা এখনও মুখ থুবড়ে পড়ে বাড়ির উপরে। 5 হাজার টাকায় ভাঙা ঘরের মেরামতি তো দূর, গাছ সরানোর খরচও হবে না। এরপরই রাগে, অভিমানে চরম সিদ্ধান্ত নেন চক্রবর্তী দম্পতি। ঠিক করেন, ক্ষতিপূরণের টাকা তৃণমূল নেতাদের দান করবেন।
শংকর চক্রবর্তীর কথায়, "বাড়িটা পুরো ভেঙেছে। কিছু অবশিষ্ট নেই। আমাকে রোজ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত, সরকার ঘর মেরামত করবে। যাঁদের ঘর ভাঙেনি তাঁরা 20 হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। আর আমরা ত্রাণশিবিরে রয়েছি! আমাদের দেওয়া হল 5 হাজার টাকা !"