কলকাতা, 7 মার্চ : আচমকা রাত নেমেছিল জীবনে। যে কালো রাত ফুরোবে না, আর কোনও দিন ভোর হবে না বলে ভেবেছিলেন পিয়ালি। আর পাঁচজন অ্যাসিড আক্রান্তের যেমন হয় আর কী! অন্যদিকে যুদ্ধ চলছিল মনের ভিতরে। বিপুল অন্ধকারে আত্মার তলানি আলোটুকু জ্বেলে পথ খুঁজছিলেন তিনি। এদিকে সমাজের নিরন্তর উপহাস বিঁধত কাঁটার মতো। শেষ পর্যন্ত পিয়ালির হার না মানা মনোভাবই জিতল৷ নিজেকে যেমন তিনি নতুন করে খুঁজে পেলেন, সেইসঙ্গে তাঁর মতো হতভাগ্য অ্যাসিড আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর ব্রত নিলেন ৷ "আমি নারী, আমিও পারি"-র জলজ্যান্ত উদাহরণ শ্যামনগরের পিয়ালি দত্ত ৷ যিনি আজ অ্যাসিড আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সক্রিয় কর্মী।
সংস্থার নাম- অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া ৷ পিয়ালি এখানে নিজের দুঃখ ভুলে অন্যের দুঃখ মোছার কাজে ব্যস্ত৷ পিয়ালি যাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের কেউ স্বামীর ছোড়া অ্যাসিডে পুড়েছেন, প্রেম প্রস্তাবে “না" বলায় কারও ভাগ্যে জুটেছে অ্যাসিড হামলা। কেউ হয়ত কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়ে শ্বশুর-বাড়ির নির্দয় আক্রমণের শিকার। এঁদের সাহস ফিরিয়ে দেওয়াই অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার কাজ। যে কঠিন কাজের অন্যতম যোদ্ধা আজ শ্যামনগরের পিয়ালি। কিন্তু তাঁর জীবনে অ্যাসিড-অন্ধকার নামল কীভাবে?
সেটা 2005 সাল। মূল ঘটনার সঙ্গে কোনও যোগই ছিল না পিয়ালির৷ অন্যের “দোষে" সাজা পেতে হয়েছিল তাঁকে। পিয়ালিদের বাড়ির ভাড়াটে "কাকু" অ্যাসিড ছুড়েছিল তার স্ত্রীর দিকে। সেই অ্যাসিডের বেশ কিছুটা এসে পড়ে পিয়ালির মুখে। মুহুর্তে জ্বলেপুড়ে গিয়েছিল বালিকা বয়স! লোডশেডিঙের মতো অন্ধকার নেমেছিল জীবনে। হাসপাতাল থেকে ফিরে আয়নায় পোড়া মুখটাকে দেখে চিনতেই পারছিলেন! তবুও কিছুদিন পর সাহস করে ওই ঝলসানো চেহারা নিয়েই স্কুলে যেতে শুরু করেন পিয়ালি। প্রথমদিকে উপহাস জুটত। পরবর্তীকালে পিয়ালির অদম্য সাহসের জন্যই হয়ত পাশে দাঁড়ান স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষিকারা৷ ফলে, স্কুলবেলা বোঝা হয়ে ওঠেনি পিয়ালির কাছে। কিন্তু, সমাজ ছাড়বে কেন 'দুর্বলতা'কে!