দত্তপুকুর, 29 সেপ্টেম্বর : কৃষ্ণনগর থেকে নৌকা বিহারে এসে বর্তমান দত্তপুকুরে শুরু করেছিলেন বুড়িমার দুর্গাপুজো । কেটে গেছে 350 বছর । কিন্তু অটুট বুড়িমার পুজোর ঐতিহ্য । নিয়ম মেনে আজও বুড়িমার পুজো শুরু হওয়ার পরই এলাকার অন্যান্য পুজো শুরু হয় । শুধু তাই নয়, বিসর্জনের ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম মানা হয় । এছাড়াও রয়েছে নানারকম বিশেষত্ব ।
প্রায় 350 বছর আগে কৃষ্ণনগর থেকে নৌকা বিহারে বেরিয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র । পছন্দ হয় দত্তপুকুরের শিবালয় এলাকা । তারপর সেখানেই একটি দালান বাড়ি তৈরি করেন । সেখানেই আচার রীতি মেনে শুরু হয় বুড়িমার পুজো । পরবর্তীকালে কৃষ্ণচন্দ্রের নাতি শিবচন্দ্রের হাত ধরে এই পুজো চলতে থাকে । এই বুড়িমার মূর্তির গড়ন আর পাঁচটা দুর্গা প্রতিমার মতো নয় । এখানে দুর্গা নৃসিংহ রূপে পুজিত হন । প্রতিমার দুটি হাত সামনে থাকে । আর বাকি আটটি হাত লুকোনো থাকে চুলের মধ্যে । মায়ের বাহন এখানে সিংহ নয়, ঘোড়া । তবে তার কেশর আছে ।
পুজোর রীতিতেও রয়েছে বিশেষত্ব । এখানে দেবীর বোধন কৃষ্ণপক্ষে হয় । তারপর নবমী পর্যন্ত চলে চণ্ডীপাঠ । বুড়িমার পুজো শুরু হলেই এলাকার অন্যান্য জায়গায় দুর্গাপুজো শুরু হয় । আবার প্রতিমা নিরঞ্জনের ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম পালন করা হয় । অর্থাৎ, বুড়িমার নিরঞ্জনের পরই এলাকার অন্যান্য প্রতিমার নিরঞ্জন হয় ।
বুড়িমার পুজোয় শুধু ঐতিহ্য নেই । লুকিয়ে রয়েছে সম্প্রীতিও । মানুষ মুখে শোনা যায়, পুজো চলাকালীন এলাকারই এক মুসলমান ব্যক্তি বুড়িমার দর্শন পেয়েছিলেন । তারপর অজ্ঞান হয়ে যান তিনি । তখন থেকে নিরঞ্জনের দিন এলাকার ওই মুসলমান পরিবারের বাড়ির সামনে বুড়িমাকে রাখা হয় । ওই মুসলমান পরিবারের সদস্যরা বুড়িমার দর্শন করে । তারপর নিরঞ্জন হয় বুড়িমার ।
রাজা শিবচন্দ্র রায়ের বর্তমান চার শরিকের হাতেই দত্তপুকুরের শিবালয়ের বুড়িমার পুজোর দায়ভার রয়েছে । এই চার শরিকের মধ্যে রয়েছেন রাজ বংশের ষষ্ঠ পুরুষ ভৃকুরাম রায়, তপন রায়, বাদল রায় ও বংশের দুই মেয়ে । রায় বংশের এই শরিকরাই বুড়িমার পুজোর জন্য বড় মাপের মন্দির তৈরি করেছেন । বলি দেওয়ার জন্য আলাদা জায়গাও করা হয়েছে । চিরাচরিত ঐতিহ্য মেনেই রথযাত্রার দিনেই মায়ের কাঠামো পুজো হয় ।