বারাসত, 23 মে: এগরা, বজবজ, মালদা । একের পর এক বিস্ফোরণ । প্রাণহানি । তারপরও পুলিশের নজরদারি কোথায় ? প্রশ্নটা উঠছে, কারণ এখনও উত্তর 24 পরগনার বহু জায়গায় রমরমিয়ে চলছে অবৈধ বাজির কারবার । তা যে শুধু কথার কথা নয় ! তা স্পষ্টত উঠে এসেছে ইটিভি ভারতের অন্তর্তদন্তে । দত্তপুকুরের ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েত এলাকা হোক, কিংবা বারাসত পৌরসভার টালিখোলা অথবা আরিফবাড়ি এলাকা । সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেআইনি বাজির কারবার । সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ, সকলেই একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন এই কারবারের কথা । ফলে প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা ।
কিন্তু তারপরও প্রশ্ন থেকেই যায়, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরও কীভাবে অবৈধ এই বাজির কারবার চলতে পারে ! পুলিশ-প্রশাসন কি আদৌও তৎপর রয়েছে বেআইনি বাজি কারবার বন্ধ করতে ? তা না হলে কেন এই অবৈধ কারবার বন্ধ করা যাচ্ছে না ? তাহলে কি এর পিছনে কারও মদত রয়েছে ?এমনই সব প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে । আর এই ঘটনা সামনে আসতেই পুলিশ এবং শাসকদলকে একযোগে দুষেছে বিরোধীরা ।যদিও অবৈধ বাজি ব্যবসা বন্ধ করতে পুলিশ যাবতীয় পদক্ষেপ করছে বলে দাবি করেছেন জেলার পুলিশ সুপার ।
এগরা বিস্ফোরণ কাণ্ডের পরই অবৈধ বাজি কারবার বন্ধ করতে উদ্যোগী হন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান । এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একগুচ্ছ নির্দেশিকাও জারি করেছেন পুলিশ ও প্রশাসনের উদ্দেশে । যেখানে বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি তা নিষ্ক্রিয় করার উদ্যোগ যেমন নিতে বলা হয়েছে, তেমনই সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে ৷ কিন্তু, তারপরও কি পরিস্থিতি আদৌও বদলেছে ? বাস্তব পরিস্থিতিই বা কী বলছে ! তারই অন্তর্তদন্ত করতে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছিল উত্তর 24 পরগনার ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নারায়ণপুর এলাকায় ।
এটাই অবৈধ বাজি কারবারের আঁতুড় ঘর । সেখানে গিয়ে দেখা গেল, পঞ্চায়েতের একেবারে নাকের ডগায় এখনও চলছে বেআইনি এই বাজি কারবার । কখনও লুকিয়ে চুরিয়ে । আবার কখনও তা প্রকাশ্যে । সূত্রের খবর, এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক বাজির গুদাম এবং দোকানঘর রয়েছে । তাতে যুক্ত রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ । বেশিরভাগেরই বৈধ অনুমতি নেই বলে অভিযোগ । তা সত্ত্বেও কীভাবে চলছে এই অবৈধ কারবার ? স্থানীয়রা বলছেন, "সবটাই হচ্ছে পুলিশ এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের মদতে । বিনিময়ে পকেটে ঢুকছে মোটা টাকা ৷"
অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে বৈধতার লাইসেন্স মেলে অবৈধ কারবারে । এমন অভিযোগও আবার তুলছেন কেউ কেউ । তবে, ভয়ে এই নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি তাঁরা । উপরমহলের চাপে পুলিশ কখনও কখনও বেআইনি এই বাজির গুদামগুলিতে অভিযান চালায় ঠিকই ৷ সেখান থেকে প্রচুর বাজি এবং বাজির মশলাও বাজেয়াপ্ত হয় । এর ফলে কিছুদিনের জন্য বেআইনি এই কারবার বন্ধ থাকলেও পরিস্থিতি থিতিয়ে গেলে আবারও যে কে সেই ! তখন ফের নতুন উদ্যমে শুরু হয়ে যায় অবৈধ বাজি কারবার ।
বছর চারেক আগে এই নারায়ণপুরেই অবৈধ বাজি গুদামে বিস্ফোরণে ঝলসে মৃত্যু হয়েছিল দু'জনের । তারও আগে মজুত বাজিতে আগুন লেগে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল সেখানে । ফলে, বাজি বিস্ফোরণের পুরনো ইতিহাস রয়েছে নারায়ণপুরে । এগরা, বজবজ ও মালদা বিস্ফোরণের পর সেখানেও যে আবার কোনও অঘটন ঘটবে না, তা জোর গলায় কেউই বলতে পারছেন না । ফলে সবসময় আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে ।যদিও পুলিশের দাবি, সোমবার সন্ধ্যায় দত্তপুকুর এবং বেলঘরিয়া থেকে প্রায় সাড়ে সত্তর টন বাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে । গ্রেফতার করা হয়েছে দু'জনকে । এই ধরনের অভিযান আগামী দিনেও চলবে বলে খবর পুলিশ সূত্রে ।