হাবড়া, 23 মে : বিধ্বংসী আমফান ৷ আর এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে তছনছ পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা ৷ দুপুর আড়াইটার সময় স্থলভাগে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ৷ তারপর থেকেই দাপট দেখাতে শুরু করে আমফান ৷ সামনে যা কিছু পাচ্ছিল খড়কুটোর মতো উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল ৷ উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া-০১ ব্লকের কুমড়া পঞ্চায়েতের মাঠপাড়ার বাসিন্দা অমল মণ্ডল ETV ভারতকে শোনালেন সেই রাতের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা ৷
প্রাণ বাঁচাতে সবাই চৌকির নিচে লুকিয়ে ছিলাম, শেষ রক্ষা হল না - সাইক্লোন আমফান
বিকাল সাড়ে তিনটে নাগাদ দমকা হাওয়া শুরু হল। আমরা সবাই প্রথমে আমাদের টিনের ঘরেই ছিলাম। ধীরে ধীরে ঝড়ের বেগ বাড়তে শুরু করে । সন্ধে সাড়ে ছ'টা নাগাদ হঠাৎ তীব্র শব্দ করে টিনের ঘরের চাল উড়ে গেল ।
তিনি বলেন, ''কয়েকদিন ধরেই টিভিতে খবর শুনছিলাম ধেয়ে আসছে সাইক্লোন আমফান ৷ সেদিন সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা ৷ টিভির খবরে শুনলাম আজই আছড়ে পড়বে আমফান । এদিকে পঞ্চায়েত থেকে মাইকে প্রচার করছিল। ফলে জানতাম বিকেলে একটা ঝড় উঠবে । কিন্তু সে ঝড় এমন দাপট দেখাবে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি ৷ মা-বাবা-স্ত্রী-পুত্র সহ আমার পরিবারে মোট ছয় জন। ঝড় উঠবে। তাই, দুপুরের পর আমরা কেউ বাড়ি থেকে বেরোইনি। বিকাল সাড়ে তিনটে নাগাদ দমকা হাওয়া শুরু হল। আমরা সবাই প্রথমে আমাদের টিনের ঘরেই ছিলাম। ধীরে ধীরে ঝড়ের বেগ বাড়তে শুরু করে । সন্ধে সাড়ে ছ'টা নাগাদ হঠাৎ তীব্র শব্দ করে টিনের ঘরের চাল উড়ে গেল । তখন থেকেই ভয়ের শুরু ৷ বাঁচার তাগিদে আমরা সবাই তখন অন্য ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিলাম । রাত সাড়ে আটটা নাগাদ অনুভব করি এই ঘরটাও ঝড়ে দুলছে । কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই ঘরেরও চাল উড়ে গেল। কী করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । দূরে শঙ্খের আওয়াজ । ঝড়ের বেগ আরও বাড়ছে ।''
অমলবাবু বলে চলেন, "তখন বাবা-মা-বউ-ছেলেকে নিয়ে শেষ ঘরটায় আশ্রয় নিলাম । বাইরে তখন তাণ্ডব নৃত্য করছে আমফান। কী সাংঘাতিক! কী ভয়ঙ্কর ৷ প্রাণে বাঁচার জন্য সবাই চৌকির নীচে লুকিয়ে পড়লাম ৷ তখনও এটা বুঝতে পারছি না, ঘর ভেঙে পড়লে চৌকির নীচে লুকিয়েও বাঁচব না। চাপা পড়ে সবাই মরব। সাড়ে দশটার সময় বাইরে আরও তীব্র হল ঝড়ের আওয়াজ । বাবা-মা হরির নাম করছেন । স্ত্রী ছেলে কাঁদছে । বাড়ির পাশেই একটা গাছ ভেঙে পড়াপর শব্দ পেলাম ৷ আর ধৈর্য ধরতে পারলাম না ৷ গোয়ালঘরে গোরুগুলোর গলার দড়ি খুলে দিয়ে । ঘর থেকে বেরিয়ে সবাই প্রাণপণে দৌড়াচ্ছি । ঘোর অন্ধকারে কোথায় যাচ্ছি জানি না। রাস্তার পাশে দেখলাম, একটা দালানবাড়ি। উঠে পড়লাম। সেখানে বাবা জ্ঞান হারালেন। তাঁকে সেবা করছে মা ও স্ত্রী। এই অবস্থায় কোনওক্রমে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলাম ৷ রাত একটার পর থেকে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে ঝড়ের দাপট ৷ রাত পোহাতেই দেখি, আমার সাধের সমসার যেন শ্মশান হয়ে গিয়েছে। ঘরবাড়ি ভেঙে তছনছ। আমাদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সেই রাতের কথা মনে পড়লে এখনও বুক কাঁপছে । সেদিন ঝড় নয়, সাক্ষাৎ মরণের ঘর থেকে ফিরে এসেছি ।''