আইএসএফ নেতার মন্তব্যে বিতর্ক মধ্যমগ্রাম, 28 মে: পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই শাসক এবং বিরোধীর কুকথায় তেতে উঠছে বঙ্গ রাজনীতি । এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হল আইএসএফের রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ মাইতির নামও । শাসকদলকে আক্রমণ করতে গিয়ে বেলাগাম ভাষা প্রয়োগ করে বিতর্কে জড়ালেন তিনি । 'ভোট লুট করতে এলে তৃণমূলের দাদাদের হাত কেটে নেওয়ার' নিদান দিলেন তিনি । যা ঘিরে রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠেছে মধ্যমগ্রামের রাজনীতি ।
দলীয় নেতার এই বিতর্কিত মন্তব্যকে অবশ্য সমর্থন করেননি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী । এ নিয়ে জলঘোলা শুরু হতেই ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টায় আসরে নামেন বিধায়ক স্বয়ং । এই নিজের বক্তব্যের সাফাই দিয়েছেন বিতর্কিত আইএসএফ নেতাও ।তবে, তাতে বিতর্ক থামছে না । তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়ই এই মন্তব্যের সমালোচনা করে বিঁধেছে আইএসএফ দলকে ।
শনিবার রাতে উত্তর 24 পরগনার মধ্যমগ্রামে এক জনসভা আয়োজিত হয় আইএসএফ-এর উদ্যোগে । সেই সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে হাজির ছিলেন বিধায়ক তথা আইএসএফ-এর রাজ্য চেয়ারম্যান নওশাদ সিদ্দিকী । তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ মাইতি-সহ আইএসএফ-এর অন্য়ান্য নেতারা । তবে, নওশাদ সিদ্দিকীর বদলে সেই সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায় আইএসএফ নেতা বিশ্বজিৎ মাইতির বিতর্কিত মন্তব্য !
ঠিক কী বলেছেন তিনি ? নওশাদের সামনেই প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে শাসকদলের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে আইএসএফ নেতা বিশ্বজিৎ মাইতি বলেন, "মধ্যমগ্রামে যে দাদারা দাদাগিরি করছেন, করুন । কিন্তু কোনও দাদা যদি পঞ্চায়েত নির্বাচনে আবারও হাতে লাল দাগা এবং বালা পড়ে ভোট লুট করতে যায়, সেই দাদাদের হাতটা কেটে নিতে পারবেন তো ?"
এ দিকে, দলের চেয়ারম্যানের সামনেই আইএসএফ-এর রাজ্য নেতা বিশ্বজিৎ মাইতির এমন নিদান ঘিরে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েন বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী । চোখের ইশারাতে তিনি বুঝিয়ে দেন, ওই আইএসএফ নেতা সঠিক কথা বলেননি । এরপর অবশ্য আর এ নিয়ে মঞ্চ থেকে কোনও গরম বক্তব্য দিতে শোনা যায়নি আইএসএফ নেতা বিশ্বজিৎ মাইতিকে । মাঝপথেই তাঁর বক্তব্য থামিয়ে দেওয়া হয় ।
পরে এই নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সাফাই দিয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, "আমরা সংবিধানে বিশ্বাস করি । সংবিধানের উপর ভরসা রয়েছে । দলীয়ভাবে আমরা একটা কথাই বারবার বলে এসেছি যে, ভারতের মানুষের সামনে সংবিধানকে তুলে ধরা হোক । পশ্চিমবঙ্গের পাঠ্যসূচিতে স্থান পাক দেশের সংবিধান । অথচ, তৃণমূল যেভাবে ভোট লুঠ করছে, দেশের গণতন্ত্রকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, তাতে সাধারণ ও গরিব খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার লুন্ঠিত হচ্ছে । যাতে গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হাত কেটে নেওয়া যায়, তার বন্দোবস্ত করতেই এই কথা বলেছি ৷" তাঁর দাবি, হিংসার রাজনীতিতে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বিশ্বাসী নয় ৷
অন্যদিকে, অস্বস্তির মুখে পড়ে বিতর্কিত এই মন্তব্যের দায় ওই আইএসএফ নেতার ঘাড়েই ঠেলেছেন দলের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী । তিনি বলেন, "এই হুমকি-বক্তব্যকে দল কোনওভাবেই সমর্থন করে না । গণতন্ত্রের পরিসরের মধ্যেই সকলের থাকা উচিত । শালীনতা বজায় রেখে ।তবে, এটুকু বলব আইনের মাধ্যমে শুধু হাত কাটা নয়, কীভাবে জেলা রাখা যায় তার ব্যবস্থা করব আমরা । সেটা অবশ্যই আইন মেনে ৷" কুড়মি, আদিবাসী এবং সাঁওতালি সমাজের বঞ্চিত হওয়ার ইস্যুর প্রভাব আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে পড়বে বলে মনে করেন নওশাদ সিদ্দিকী ।
অপরদিকে, এই হুঁশিয়ারি মন্তব্যের সমালোচনা করে মধ্যমগ্রাম শহর তৃণমূলের সভাপতি সুভাষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, "যাঁরা অভিযোগ করছেন তাঁদের নিজেদেরই কোনও শালীনতা নেই । সেই কারণে তৃণমূলের বদনাম করার চেষ্টা চলছে । আমরা ভোট লুঠে বিশ্বাসী নই । অভিষেকের জনজোয়ার দেখে বাংলার মানুষ এমনিই তৃণমূলকে ভোট দেবে । তারপরও বলব, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের শালীনতা থাকা উচিত ৷"
আরও পড়ুন:নওশাদদের পিঠের চামড়া তোলার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফের বিতর্কে আরাবুল