ইছাপুর , 17 জুলাই : কয়েকদিন আগে বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছিল কোরোনায় আক্রান্ত ইছাপুরের 18 বছরের যুবক শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায় ৷ এই বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল সে ৷ সেই শুভজিৎ এবার উচ্চমাধ্যমিকে 75 শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করল ৷ তার প্রাপ্ত নম্বর 360 ৷ শুভজিতের বাবা-মায়ের আক্ষেপ এটাই যে, ছেলে ভালো ফল করেও নিজে সেই আনন্দটা উপভোগ করতে পারল না ৷
উচ্চমাধ্যমিকে 75 শতাংশ নম্বর, জানতেই পারল না শুভজিৎ - Higher Secondary
ইছাপুরের নেতাজিপল্লির বাসিন্দা অসুস্থ শুভজিতকে চিকিৎসার জন্য ভরতি নেয়নি কলকাতার তিন হাসপাতাল । বিনা চিকিৎসাতেই তার মৃত্যু হয় । সেই মৃত্যুর ঘটনায় গোটা রাজ্য তোলপাড় পড়ে গিয়েছে । শুক্রবার তার উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হয় । সেখানে দেখা যায়, সে 75 শতাংশ নম্বর পেয়েছে ।
কয়েকদিন আগে ওই যুবকের ইউরিনে সমস্যা দেখা দেয় । স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খায় সে । এরপর বমি হতে থাকে । গত বৃহস্পতিবার কামারহাটির ESI হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় । সেদিনের মতো সুস্থ হয়ে উঠলেও হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে ৷ কিন্তু, অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার অর্থাৎ 10 জুলাই সকালে আবার কামারহাটির ESI হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । চিকিৎসা পরিষেবা না থাকায় সেখান থেকে তাকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় ৷ কিন্তু, সেখানেও অব্যবস্থার অভিযোগ ওঠে ৷ পরে জানানো হয়, ওই যুবক কোরোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৷ ওই নার্সিংহোম থেকে আক্রান্তকে তখন কামারহাটির ESI হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় । কামারহাটির ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে থেকে কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয় । তবে কামারহাটির এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা মেলেনি যুবকের ৷ এরপর তাঁরা কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আসার সিদ্ধান্ত নেন । তবে কীভাবে আসবেন? কোনও গাড়ি ভাড়া করতে পারছিলেন না । কারণ তাঁর ছেলে COVID-19 পজ়িটিভ । অবশেষে অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে একটি ক্লাবের অ্যাম্বুলেন্সে করে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শুক্রবার দুপুর দু'টো নাগাদ এই আক্রান্তকে নিয়ে আসা হয় । তাঁদের এম আর বাঙুর কিংবা বেলেঘাটার ID&BG হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় । শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটে নাগাদ কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই যুবককে ভরতি নেওয়া হয় । সেদিনই সন্ধ্যার পরে তাকে স্থানান্তর করা হয় এই হাসপাতালে COVID-19 রোগীদের চিকিৎসার বিল্ডিংয়ে । ওই দিন ওই কিশোরের মৃত্যু হয় ৷
আজ উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হয় । সেখানে দেখা যায়, শুভজিৎ স্টার নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে । ছেলের উচ্চমাধ্যমিকের ফল জানার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও মা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায় । শ্রাবণীদেবী বলেন, "ছেলেকে পড়াশোনার জন্য কত মেরেছি । কত বকেছি । ছেলে আমার ভালো ফল করল । অথচ ও জানতেই পারল না । " বাবা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ছেলে বলেছিল ভালো ফল করবে । ছেলে আমার কথা রেখেছে । কথা রাখতে পারলাম না আমরাই । ওকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি ।"