বনগাঁ, 16 জুলাই : আস্থা ভোটকে ঘিরে ধুন্ধুমার বনগাঁ পৌরসভা চত্বর । পৌরসভা চত্বরে বোমাবাজি । জখম 2 । বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে । কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় । ঘটনায় জখম বনগাঁর SDPO অশেষ ঘোষ দস্তিদার ।
বেলা 3টে 15 নাগাদ বনগাঁ পৌরসভার পৌরপ্রধান শংকর আঢ্য 9 জন তৃণমূল কাউন্সিলরসহ বাইরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দাবি করেন, তাঁরা জিতে গিয়েছেন । আস্থাভোটে BJP-র কোনও কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন না । অন্য কাউন্সিলররা জানান, তাঁরা শংকর আঢ্যকে চেয়ারম্যান হিসেবে সমর্থন করছেন ।
এর ঠিক কিছুক্ষণ পর BJP-র পক্ষ থেকে পালটা দাবি করা হয় তৃণমূলের কোনও কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন না । তাদের 11 জন কাউন্সিলরই আস্থা ভোটে অংশগ্রহণ করেন । তারা জিতে গেছেন ।
আস্থাভোটে এগজ়িকিউটিভ অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন গৌরাঙ্গ বিশ্বাস । আস্থা ভোটের ফলাফল নিয়ে তিনিও মুখ খুলতে চাননি । সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে পৌরসভা থেকে তিনি চলে যান । ফলে আস্থা ভোটের ফলাফল সরকারিভাবে এখনও জানা যাচ্ছে না ।
আস্থা ভোট ঘিরে উত্তপ্ত বনগাঁ এপ্রসঙ্গে BJP নেতা প্রতাপ ব্যানার্জির অভিযোগ, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী তিনজন কাউন্সিলরকে মিটিং ডাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু এই তিনজনকে সরিয়ে কে বা কারা মিটিং ডেকেছিল তা জানা যায়নি । এরপরই শুরু হয় অশান্তি । BJP-র কাউন্সিলরদের একটা ঘরে তালাবন্ধ করে রেখে দেওয়া হয় । তিনি বলেন, "এখন জানতে পারছি 11 জন কাউন্সিলর সেখানে গিয়েছেন । তাঁরা সই করেছেন । সরকারি আধিকারিক সেটা মেনে নিয়েছেন । অর্থাৎ 11-0 ভোটে আমরা জিতেছি । তবে পরবর্তীকালে আবার তৃণমূল পৌরসভা দখল করলে আমরা আইনের পথে যাব । তবে বনগাঁ পৌরসভা BJP-র আছে এবং আগামীদিনে থাকবে ।" তিনি আজকের অশান্তির জন্য তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদেরই দায়ি করেছেন । অভিযোগ করেন, পুলিশও তৃণমূলের হয়ে লাঠিচার্জ করেছে । কারণ তৃণমূলের জনসমর্থন নেই ।
বনগাঁ পৌরসভায় মোট 22 টি ওয়ার্ড । যার মধ্যে CPI(M) ও কংগ্রেসের দখলে একটি করে এবং তৃণমূলের দখলে 20 টি ওয়ার্ড রয়েছে । কিছুদিন আগে তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েকজন কাউন্সিলর পৌরপ্রধান শংকর আঢ্যর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে । তারপর তৃণমূল থেকে 11 জন কাউন্সিলর BJP-তে যোগ দেয় । যাদের মধ্যে দু'জনের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ আনে এক BJP মহিলা কর্মী । গতকাল আগাম জামিনের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় হিমাদ্রি মণ্ডল ও কার্তিক মণ্ডল নামে ওই দু'জন । আজ হাইকোর্ট জানায়, আগামী এক সপ্তাহ দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা যাবে না । এই নির্দেশের পর তারা দু'জন আজ ভোট দিতে যায় বনগাঁ পৌরসভার আস্থা ভোটে । কিন্তু মামলা চলছে তাই ভোট দেওয়া যাবে না, এই কথা বলে বনগাঁ পৌরসভায় তাদের ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ । সেই নিয়েই পুলিশ ও BJP কাউন্সিলরদের মধ্যে বচসা বাধে । পুলিশ জানায় এক ঘণ্টার মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশের হার্ড কপি আনতে হবে । হোয়াটস অ্যাপে পাঠানো কোনও নথি তারা দেখবে না ।
বনগাঁ পৌরসভায় কাউন্সিলর সংখ্যা 22 । 20 জন তৃণমূলের । বাম ও কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল কাউন্সিলরের সংখ্যা 2 । জুন মাসের 6 তারিখ 11 জন তৃণমূল কাউন্সিলর চেয়ারম্যান শংকর আঢ্যর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন । তার তিনদিন পর আরও 3 জন কাউন্সিলরও তাতে যোগ দেন । ওই 14 জন কাউন্সিলরের মধ্যে 12 জন দিল্লিতে গিয়ে BJP-তে যোগ দেন । তবে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিলেও প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ । পরে কলকাতা হাইকোর্ট মামলা করেন 3 জন কাউন্সিলর । হাইকোর্ট চলতি মাসের 11 জুলাই নির্দেশ দেয়, 72 ঘণ্টার মধ্যে আস্থা ভোট প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে । ঠিক হয়, চলতি মাসের 16 তারিখ অনাস্থা ভোট হবে ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : BJP-তে যোগ দেওয়ার পর অপহরণের অভিযোগ, এখনই গ্রেপ্তার নয় জানাল আদালত
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আস্থা ভোটকে ঘিরে যে কোনওরকম রাজনৈতিক অশান্তি এড়াতেই আজ 144 ধারা জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । শহরের বিভিন্ন এন্ট্রি ও এগজ়িট পয়েন্ট ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেয় পুলিশ । কিন্তু এই বচসার জেরে তৃণমূল ও BJP উভয়ই 144 ধারা ভাঙে । এখনও পৌরসভা চত্বরে উত্তেজনা চলছে ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : কাল বনগাঁ পৌরসভার আস্থা ভোট, জারি 144 ধারা