দত্তপুকুর, 17 সেপ্টেম্বর : আইএসএফ কর্মী খুনের মামলায় শুক্রবার ফের দত্তপুকুরের উলা গ্রামে তদন্তে আসে সিবিআইয়ের বিশেষ টিম । এদিন মূলত সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল খুনের মামলায় আসামীদের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালায় । কথা বলেন পরিবারের লোকজনের সঙ্গে । লিপিবদ্ধ করা হয় তাঁদের বয়ানও । দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে এই তল্লাশি অভিযান । তল্লাশির পর আসামীর পরিবারের হাতে একটি করে কাগজ দেওয়া হয় সিবিআইয়ের তরফে । সেখানে আসামীর নাম, তথ্য-সহ তল্লাশির বিশদ বিবরণ লেখা রয়েছে বলে খবর সিবিআই সূত্রে । তবে,তল্লাশিতে সেরকম কোনও তথ্য মেলেনি বলে দাবি করেছেন আসামীদের পরিবারের লোকজন ।
ভোট-পরবর্তী হিংসায় দত্তপুকুরের উলা গ্রামে খুন হন আইএসএফ কর্মী হাসানুজ্জামান (37) । ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরের দিন অর্থাৎ 3 মে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে চাষের জমিতে রক্তাক্ত দেহ মেলে ওই আইএসএফ কর্মীর । অভিযোগ, তাঁকে বোমা মেরে কুপিয়ে খুন করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা । ঘটনায় দশ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয় কদম্বগাছি ফাঁড়িতে । চারজন ধরা পড়লেও বাকিরা এখনও ফেরার । যার ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ।
বিশেষ করে মামলার তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন নিহতের পরিবারের লোকজন । হাইকোর্টের নির্দেশে ইতিমধ্যে সেই খুনের তদন্তে নেমেছেন সিবিআইয়ের বিশেষ টিম । এর আগেও দু'বার খুনের তদন্তে উলা গ্রামে গিয়েছিলেন তাঁরা । প্রথমবার তো সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে পক্ষপাতদুষ্ট তদন্তকারী পুলিশ অফিসারকে দেখে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন নিহতের পরিবার থেকে এলাকার লোকজন । পরিস্থিতি শান্ত করতে তখন হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের । যদিও কোনও কিছুতে কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মামলার তদন্তকারী অফিসারকে খুনের ঘটনাস্থান থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় ।
এরপর এদিন তৃতীয়বারের জন্য সিবিআইয়ের বিশেষ টিম উলা গ্রামে গেলেন এই খুনের তদন্ত করতে । তাঁদের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীও । এদিন আসামীদের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় অবশ্য নিহত আইএসএফ কর্মীর পরিবারের কাউকেই ধারে কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি ।
এদিকে, এই নিয়ে সিবিআইয়ের কোনও আধিকারিক মন্তব্য করতে না চাইলেও মর্জিনা বিবি নামে এক আসামীর মায়ের বক্তব্য, "আমার ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেনকে এই খুনের মামলায় ফাঁসানো হয়েছে । ঘটনার দিন সকালে জাহাঙ্গীর ও আমার বড় ছেলে কাজে বেরিয়েছিল । তা সত্ত্বেও খুনের মামলায় ষড়যন্ত্র করে জাহাঙ্গীরের নাম দিয়ে দেওয়া হয়েছে । ও সম্পূর্ণ নিরপরাধ । ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে ও তিনমাস ধরে বাড়িতে আসছে না । কোথায় আছে, তাও আমরা জানিনা ।সিবিআই এসে ছেলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাঁদেরকেও একই কথা জানিয়েছি । বাড়ির ভিতর বিভিন্নভাবে তল্লাশি চালালেও কোনও কিছুই পায়নি সিবিআই আধিকারিকরা ।"
হাসানুজ্জামানের খুনের মামলায় তাঁদের স্বামীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ধৃত সাবির আলি এবং আব্দুল হান্নানের স্ত্রীও । তাঁদের দু'জনেরই দাবি, "সিবিআই তল্লাশিতে কোনও কিছুই মেলেনি বাড়ি থেকে ।"