মিনাখাঁ, 9 জুন: এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা । অমাবস্যার ভরা কোটালের আগেই বিদ্যাধরীর প্রায় 50 ফুট বাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে চলে গেল । যার জেরে ভাঙা বাঁধ দিয়ে হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করেছে লোকালয়ে । নতুন করে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবন লাগোয়া মিনাখাঁর বেশ কয়েকটি গ্রাম । ঘটনায় আতঙ্কিত সুন্দরবনের বানভাসি মানুষরা । অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের দাবিতে সরব হয়েছেন দুর্গত মানুষজন । যদিও এবার আর কাঁচা বাঁধ নয়,পাকাপাকি নদী বাঁধের মেরামত চাইছেন সুন্দরবনবাসী । তা না হলে প্রতিবার এভাবেই কোনও না কোনও বিপর্যয়ের নরক যন্ত্রণা তাদের বয়ে বেড়াতে হবে বলে মনে করছেন দুর্গত মানুষরা । ইতিমধ্যে বিদ্যাধরীর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে উদ্যোগী হয়েছে সেচ দফতর । তবে জলের প্রবাহে সেই কাজে আদৌও করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে । 26 মে যশ এবং পূর্ণিমার ভরা কোটালের প্রবল জলোচ্ছ্বাসের জেরে বিপর্যস্ত হয় সুন্দরবন লাগোয়া বসিরহাটের অন্তত ছ'টি ব্লক । সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সন্দেশখালি 1 ও 2 ব্লক,হিঙ্গলগঞ্জ এবং মিনাখাঁ ব্লকে ।
জলের স্রোতে একের পর এক কাচাঁ নদী বাঁধে ফাটল দেখা দেয় । বাঁধ ভেঙে হুহু করে জল ঢোকে লোকালয়ে । জলের তোড়ে ভেসেছে গ্রামের পর গ্রাম । সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে বানভাসি মানুষকে । বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমি, মাছের ভেড়ি, ঘরবাড়ি এখনও জলের তলায় । সপ্তাহ খানেকের বেশি সময় পরও যশ বিধ্বস্ত সুন্দরবনের অনেক এলাকা থেকে এখনও জল ঠিকমতো নামেনি । কোথাও হাঁটু সমান জল । আবার কোথাও কোমর অবধি জল । ফলে,জলবন্দী অবস্থাতেই দিন কাটছে অনেকের । গৃহহীন হয়ে আবার অনেকের ঠাঁই হয়েছে উচুঁ জায়গায় রাস্তার ধারে কিংবা আশ্রয় শিবিরে । কেউ কেউ রাস্তার ধারে ত্রিপল টাঙিয়ে কোনও রকমে দিনযাপন করছেন । জলবন্দী এলাকার কোথাও যেতে হলে এখনও বানভাসি মানুষের ভরসা বলতে কলাগাছের ভেলা । এরকম দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে যখন দিন গুজরান করতে হচ্ছে বানভাসি মানুষকে, তখনই তাদের চিন্তা বাড়িয়েছে অমাবস্যার ভরা কোটালের ভ্রুকুটি । 11 ও 26 জুন পরপর দুটি ভরা কোটালের সম্ভবনার কথা ইতিমধ্যে জানিয়েছে প্রশাসন । আর তার জেরে তটস্থ সুন্দরবনের দুর্গত মানুষ । ফের প্লাবনের আশঙ্কায় প্রখর গুনছেন তারা । আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে বানভাসি মানুষের । প্রশাসন পাশে থাকার ভরসা দিলেও শঙ্কা কিছুতেই কাটছে না সুন্দরবন অঞ্চলের বাসিন্দাদের । তারই মধ্যে কোটালের ঠিক 24 ঘন্টা আগে বুধবার দুপুরে হঠাৎই বিদ্যাধরী নদী ও খালের সংযোগস্থলের বাঁধ ভেঙে যায় । প্রায় 50 ফুট বাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে চলে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর । জানা গিয়েছে,যশের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত এই নদীবাঁধের মেরামতের কাজ চলছিল কয়েকদিন ধরে । জেসিবি মেশিন এনে মাটি ও বালির বস্তা ফেলে কাজ করছিলেন সেচ দফতরের কর্মীরা । কাজ চলাকালীন হঠাৎই জলের তীব্র স্রোতে ভেঙে যায় সেই নদী বাঁধ ।