ভাটপাড়া, 22 জুন : মাত্র তিন মাস । আর এই তিন মাসে কতটা পট-পরিবর্তন । রক্তে ভাসছে ভাটপাড়া । গোলাগুলি, বোমাবাজি, খুন - এ যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা । এলাকায় এলাকায় পুলিশের ভারী বুটের শব্দ । এর মাঝেও লোক-মনে আতঙ্ক, এই বোধহয় পড়ল বোমা । চলল গুলি । আবার হয়তো, ঝরল একটা প্রাণ । অথচ তিন মাসে আগেও এই পরিস্থিতির কথা কেউ ভাবতেও পারেননি ।
14 মার্চ 2019 । দল বদলে BJP-তে গেলেন অর্জুন সিং । পরিস্থিতি তখনও শান্ত । তলায় তলায় তৈরি হচ্ছিল বারুদের স্তূপ । ঠাওর করতে পারেনি প্রশাসন । ঘোষণা হল উপনির্বাচনের । মদন মিত্রকে প্রার্থী করল তৃণমূল । BJP-র প্রার্থী হলেন রাজনীতিতে আনকোরা অর্জুন-পুত্র পবন । লোকে বলে, ভাটপাড়ার রাজনীতিতে অর্জুনই শেষ কথা । মদন মিত্রও ছাড়বার পাত্র নন । অস্তিত্বরক্ষার তাগিদে লড়াই শুরু করলেন জোরকদমে । 19 মে ভাটপাড়া কেন্দ্রে উপনির্বাচন হল । ঝামেলার শুরু সেদিন থেকেই । বোমা, গুলির শব্দে ভরে উঠল এলাকা । BJP-র অভিযোগ, ভোটে জিততে পারবে না বুঝেই এলাকায় অশান্তি ছড়ায় তৃণমূল । পালটা অভিযোগ আনে শাসকদলও । লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেন অর্জুন । ভাটপাড়াও অর্জুনের হাতেই থাকে । মদন মিত্রকে হারিয়ে জয়লাভ করেন পবন । ভাটপাড়া পৌরসভারও হাতবদল হয় । ভাইপো সৌরভ সিংকে চেয়ারম্যান করেন অর্জুন ।
এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ভাটপাড়া অশান্ত । রাজনৈতিক সংঘর্ষ লেগেই রয়েছে । স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকা দখলে নেমেছে তৃণমূল । হারানো জমি পুনরুদ্ধারে গিয়ে বারবার বাধা পাওয়ায় গুলি-বোমা চলছে । যদিও তৃণমূলের অভিযোগ, গোটাটাই BJP-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল । অর্জুন সিংকে মেনে নিতে পারছেন না পুরোনো BJP কর্মীরা ।
ভাটপাড়ায় অশান্তির কথা মাথায় রেখেই সেখানে থানা করার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । 20 জুন উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল থানার । আসার কথা ছিল একাধিক পুলিশকর্তার । সকাল থেকে প্রস্তুত ছিল পুলিশ প্রশাসন । উদ্বোধনী প্রস্তুতিতে জল ঢেলে বেলা গড়াতেই শুরু হল বোমাবাজি, গুলি । ভাটপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা । হাতে বোমা, শূন্যে চলছে গুলি । কয়েকটা বোমা এসে পড়ল ভাটপাড়া ফাঁড়ির (তখনও থানার উদ্বোধন হয়নি) সামনে । আত্মরক্ষার তাগিদে পালটা গুলি চালায় পুলিশ । এরমাঝেই দুই যুবকের (অসমর্থিত সূত্রে খবর তিনজনের মৃত্যু হয়েছে) মৃত্যু হয় । কার গুলিতে মৃত্যু তা এখনও পরিষ্কার নয় । তৃণমূল নেতারা বলছেন, "নিজেদের মধ্যে লড়াই করেই ওরা মারা গেছে ।" এদিকে, BJP নেতৃত্ব দাবি করছে, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ওই দুই যুবকের ।
উত্তপ্ত পরিস্থিতির কথা জানতে পেরেই তড়িঘড়ি বৈঠক শুরু হয় নবান্নে । কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরিকে সরিয়ে দেওয়া হয় । তাঁর জায়গায় দায়িত্বে নিয়ে আসা হয় মনোজ বর্মাকে । 72 ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী ।