দেগঙ্গা, 26 অগস্ট : কারো থেকে পাঁচ হাজার, আবার কারো থেকে দশ কিংবা পনেরো হাজার টাকা ৷ দাবি মতো কাটমানি না দিলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (Pradhan Mantri Awas Yojana) ঘরের টাকা মিলছে না ৷ দেগঙ্গার চৌরাশী পঞ্চায়েত এলাকার অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের দাবি মতো কাটমানির টাকা দিতে না পারায় অনেক উপভোক্তারই টাকা আটকে রয়েছে গত দু'বছর ধরে । ফলে সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তাঁরা ৷ প্রশাসনের দরজায় বারবার ঘুরেও কোনও সুরাহা হয়নি ৷ উল্টে প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ায় কয়েকজনকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে ৷ অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন দেগঙ্গার বিডিও । পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ৷ তবে এনিয়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির ।
সরকারি প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ দেগঙ্গায় এই প্রথম নয় ৷ আগেও এই ধরনের অভিযোগ সামনে আসায় সরগরম হয়েছিল দেগঙ্গার রাজনীতি । সম্প্রতি রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে আবেদনকারী বেশ কয়েকজন মহিলার হাতে লক্ষ্মীর ভাঁড়ের সঙ্গে নগদ পাঁচশো টাকা করে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল চাঁপাতলা পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান হুমায়ুন রেজা চৌধুরীর বিরুদ্ধে, যা ঘিরে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক । সরকারি প্রকল্পের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বদলে কেন নগদে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আক্রমণ শানান বিরোধীরা । তোলা হয় দুর্নীতির অভিযোগও । তা সত্ত্বেও পঞ্চায়েতের ওই তৃণমূল প্রধানকে শুধু সতর্ক করেই ছেড়ে দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে । সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এবার একেবারে সরকারি প্রকল্প থেকে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ সামনে এসেছে চৌরাশী পঞ্চায়েত এলাকায় । অভিযোগে নাম জড়িয়েছে পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যদের ।
অভিযোগ, 2018-19 অর্থবর্ষে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আবেদনকারী অন্তত 60-70 জন উপভোক্তা এখনও অবধি কিস্তির পুরো এক লাখ কুড়ি হাজার টাকা হাতে পাননি ৷ পঞ্চায়েত সদস্যদের দাবি মতো কাটমানির টাকা দিতে না পারার কারণেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে ৷ তাতেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে চৌরাশী পঞ্চায়েত এলাকায় । এনিয়ে শাসকদলের পঞ্চায়েত প্রধান এবং সদস্যদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন উপভোক্তাদের একাংশ ।
আলতাফ মণ্ডল নামে এক উপভোক্তা বলেন, "প্রথম কিস্তির 60 হাজার টাকায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বরাদ্দকৃত ঘরের লিন্টন তোলা অবধি কাজ করা হয়েছিল । কিন্তু দ্বিতীয় কিস্তির টাকা অ্যাকাউন্টে ঢোকার আগেই পাঁচ হাজার টাকা কাটমানি চায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য । সেই টাকা দিতে হয় মেয়ের কানের দুল বন্ধক রেখে । কিন্তু সেই টাকা নেওয়ার পরও তোলা হয়নি ঘরের ছবি ।ফলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এখনও অবধি হাতে পাইনি । এখন আরও দশ হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে । নইলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির টাকা মিলবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে । আমার পক্ষে আর টাকা দেওয়া সম্ভব নয় । বলে দিয়েছি সরকারি ঘর আর লাগবে না ৷"
একই সুর শোনা গিয়েছে বক্কার গাজী এবং রেজাউল মণ্ডল নামে আরও দুই উপভোক্তার গলাতেও । তাঁদের কথায়, "দাবি মতো হয়তো টাকা দিতে পারব না, সেই কারণে ঘরের কিস্তির আটকে রাখা হয়েছে । বহুবার পঞ্চায়েত এবং প্রশাসনের কাছে দরবার করার পরও কোনও সুরাহা হয়নি । আজও কুঁড়ে ঘরে কোনও রকমে দিন যাপন করছি আমরা ৷"