বারুইপুর, 8 নভেম্বর: বারুইপুরে শুরু হল ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা (Baruipur Rash Mela)। বারুইপুরের জমিদার মদন মাল্য আজ থেকে প্রায় দুশো সত্তর বছর আগে ইংরেজ শাসনের গোড়ায় রায়চৌধুরী উপাধি লাভ করেন । অবিভক্ত বাংলার 12 ভূঞার মধ্যে অন্যতম হিসাবে জমিদারির পত্তন হয় । বর্তমান দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ থেকে সূদূর সাগর-সহ সুন্দরবনের জমিদারির অধিকার লাভ করেন মদন রায়চৌধুরী ।
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন ৷ এরপরই সব পার্বণ চালু হয় জমিদার বাড়িতে । দুর্গা, কালী, বিপত্তারিণী পুজোর পাশাপাশি রথ ও রাস উৎসব চালু হয় দেউড়ির মাঠে । সেই মেলায় জায়গা পায় বাদাম, খেলনা, মাটির জিনিস, গাছ-সহ হরেক জিনিসের দোকান । বিশেষ করে জিলিপি ও গজার দোকান । মেলায় বারুইপুর-সহ আশপাশের কানিং, জয়নগর, কুলতলি, মগরাহাট, বিষ্ণুপুর ও সোনারপুর-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসতো ।
তখন রাতে বারুইপুর বর্ধিষ্ণু এলাকা হলেও পল্লি গ্রামে ফিরে যাওয়ার উপায় ছিল না দর্শকদের । তাই রাতে খাওয়া ও পুতুল নাচের আসর বসত মেলার মাঠে । স্বাধীনতার পর আস্তে আস্তে কিছুটা হলেও জৌলুস হারায় পুতুল নাচ । কারণ দস্যু ডাকাতের ভয় কমায় মেলায় আর রাত কাটাতে হতো না মনুষজনের । এরই কয়েক বছর পর মেলায় যোগ হয় সার্কাস । আর সার্কাসের খেলা দেখতে সেই সময় থেকে মেলায় ভিড় জামাতে শুরু করে হাজার হাজার মানুষ । আর এই সার্কাসের আসর বসায় অন্য মাত্রা পায় রাসমেলা (Baruipur Famous Rash Mela) ।
আরও পড়ুন:লক্ষ্মীপুজোর দিন উপোস করে রাসচক্র তৈরির কাজ শুরু করলেন আলতাফ
বর্তমানে বিধিনিষেধের গেরোয় আর সার্কাসে জায়গা পায় না বাঘ, সিংহ, হাতি, ঘোড়া থেকে জলহস্তিরা । তাই এখন জোর দেওয়া হয়েছে জিমন্যাস্টিকসের উপর । এবার বসেছে আফ্রিকান ডায়মন্ড সার্কাস । যার শুভারম্ভ হল বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে । মেলা কমিটির সম্পাদক মাধব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "পশু আইনের জটিলতায় মেলায় হয়তো বাঘ সিংহ নেই । কিন্তু আফ্রিকান ও ভারতীয় খেলোয়াড়ের মেলবন্ধনে এই সার্কাস খুব ভালো আনন্দ দেবে দর্শকদের । সঙ্গে ছোটদের জন্য রয়েছে স্পেশাল জোকারের খেলা ।" তাই জমিদারি প্রথা বিলোপ হলেও আজও ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রাচীন রীতি ও গরিমা বয়ে নিয়ে চলেছে বারুইপুরের রাসমেলা (Rash Mela 2022) ।