মালদা, 20 সেপ্টেম্বর : মালদা জেলায় ফের শাসক দলের গোষ্ঠীকোন্দল । উপলক্ষ, ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর 1 গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় থাকা একটি বন্ধ কালভার্টের মুখ খুলে দেওয়া । BDO ও জেলা পরিষদ সদস্যের উপস্থিতিতে দু’বছর ধরে বন্ধ থাকা ওই কালভার্টের মুখ আজ খুলে দেওয়া হয় । ঘটনাস্থান থেকে প্রশাসনিক কর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা চলে যেতেই সেখানে এসে ওই কালভার্টের মুখ ফের বন্ধ করে দেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি ৷ তাঁর অভিযোগ, এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য এখানে জমি প্রোমোটিং করছেন ৷ কোটি কোটি টাকা হাতাচ্ছেন ৷ এ নিয়ে তিনি BDO ও এক পুলিশ অফিসারকেও একহাত নেন তিনি ৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিনভর উত্তপ্ত ছিল যদুপুর গ্রাম ৷
উল্লেখ্য, যদুপুর গ্রামে রেলওয়ে ক্রশিং পাড় করেই রয়েছে কালভার্টটি ৷ এই কালভার্টের একদিকে রয়েছে যদুপুরের একাংশ, কচুয়াহি ও স্কুলপাড়া গ্রাম ৷ তিনটি গ্রামে হাজার খানেক পরিবারের বসবাস ৷ দু’বছর আগে কালভার্টটির মুখ কেউ বা কারা বন্ধ করে দেয় ৷ ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই ওই তিনটি গ্রামে জল জমতে শুরু করে ৷ বর্ষাকালে জলবন্দী হয়ে পড়ে প্রতিটি বাড়ি ৷ এলাকার বিস্তীর্ণ কৃষিজমিও জলের তলায় চলে যায় ৷ বছরখানেক আগে এলাকার মানুষজন নিজেরাই কালভার্টটির মুখ খুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন ৷ কিন্তু সেই সময় স্থানীয় কিছু সমাজবিরোধীর হুমকিতে তাঁরা পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন । এদিকে বর্ষার কয়েক মাস বদ্ধ জলের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করায় অনেকেই চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ৷ বাড়ছে জলবাহিত ও মশাবাহিত রোগও ৷ এ নিয়ে তাঁরা একাধিকবার প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আর্জি জানিয়েছেন ৷ অবশেষে আজ এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য প্রতিভা সিং সহ আরও কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে ওই কালভার্টের মুখ খুলতে যান ইংরেজবাজারের BDO ৷ প্রথমে তাঁদেরও কালভার্টের মুখ খুলতে বাধা দেওয়া হয় ৷ কিন্তু BDO - এর নির্দেশে পুলিশ সেই কালভার্টের মুখ খুলে দেয় ৷
এপ্রসঙ্গে BDO সৌগত চৌধুরি বলেন, “কয়েক মাস ধরে এই এলাকায় প্রচুর মানুষ জলবন্দী হয়ে ছিলেন ৷ মানুষের বাড়িতে বিষধর সাপ সহ অন্য পোকামাকড় ঢুকে যাচ্ছিল ৷ এখানে একটি কালভার্ট রয়েছে ৷ কেউ বা কারা জোর করে সেই কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় এত মানুষকে বিপদের মুখে পড়তে হয়েছে ৷ তাই আজ আমরা সেই কালভার্ট খুলে দিয়েছি ৷ বদ্ধ জল বেরিয়ে গেলে আপাতত প্রায় এক হাজার পরিবার উপকৃত হবে ৷ আমরা এখানে একটি বড় ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছি ৷ সেই কাজ হয়ে গেলেই এখানকার জল জমার সমস্যা পুরোপুরি মিটে যাবে ৷” এদিকে কালভার্টের মুখ খুলে দেওয়ার খবর পেয়ে 30 মিনিট পরেই সেখানে উপস্থিত হন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি ৷ সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসনের কোনও শীর্ষকর্তাকে তিনি ফোন করেন ৷ ফোনে তিনি বলেন, এই কালভার্টের একদিকে তাঁর একটি আমবাগান রয়েছে ৷ ওই বাগানের দাম কয়েক কোটি টাকা ৷ কালভার্টের মুখ খুলে দেওয়ায় নোংরা জল তাঁর বাগান দিয়ে বইছে ৷ এতে বাগানের সব গাছ মরে যাবে ৷ কালভার্টের মুখ না খোলার জন্য তিনি BDO ও ইংরেজবাজার থানার পুলিশ অফিসার অনুপ সিংকে জানিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, তাঁরা সেকথা শোনেননি ৷ তাই তিনি এই কালভার্ট ফের বন্ধ করে দিচ্ছেন ৷ এরপরেই কৃষ্ণেন্দুবাবুর নির্দেশে সেই কালভার্ট ফের বন্ধ করে দেওয়া হয় ৷ এ প্রসঙ্গে কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “এই কালভার্টের একপাশে আমাদের বাগান রয়েছে ৷ অন্যদিকে এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য, যদুপুর 1 গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী সহ স্থানীয় কিছু নেতা প্রোমোটিং করে বসতি তৈরি করেছে । তাঁরা থানাকে হাত করে এসব কাজকর্ম চালাচ্ছে । আজ তাঁরা প্রশাসনকে দিয়ে কালভার্টের মাটি কেটে দিয়েছে ৷ ফলে আমাদের বাগান এখন জলে ভাসছে ৷ আমাদের একটা পুকুরও ডুবে গিয়েছে ৷ আমি সব শুনে অশৌচের মধ্যেও ছুটে আসতে বাধ্য হয়েছি ৷ আমি সমস্ত ঘটনা জেলা প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালাম ৷ তাঁরা বললেন, তাঁদের না জানিয়েই এই কাজ করা হয়েছে ৷ আজ রাতেই আমি যেখানে জানানোর, সেখানে সব ঘটনা জানাব । এরা আমাদের দলের হলেও সব পরিযায়ী ৷ এখানে প্রোমোটিং করে । এরা এখানে সরকার ও সাধারণ মানুষের টাকা লুটছে ৷”
যদুপুর 1 গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান ইমতিয়াজ ওরফে হামেল হোসেন অবশ্য কৃষ্ণেন্দুবাবুর এহেন মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, “এলাকার হাজারো মানুষের স্বার্থে এই কালভার্টের মুখ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন ৷ এই এলাকায় একটি বড় ড্রেন নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ে পড়ে রয়েছে ৷ জলে জমে থাকায় সেই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না ৷ জল বেরিয়ে গেলে মাস দুয়েকের মধ্যেই সেই কাজ শেষ হয়ে যাবে৷ তখন এই কালভার্টের কোনও গুরুত্ব থাকবে না ৷ কিন্তু এদিন কৃষ্ণেন্দুবাবু নিজের বাগানের কথা বলে ওই কালভার্ট ফের বন্ধ করে দিয়েছেন ৷ যে আমবাগানের কথা বলে তিনি এই কাজ করেছেন, সেই বাগান তিনি অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন ৷ কিছু মানুষের স্বার্থে তিনি এলাকা উন্নয়নের কাজে বাঁধা দিচ্ছেন ৷ এসব কারণেই মানুষ এখন আর তাঁর পাশে নেই ৷ আমরা গোটা ঘটনাটি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে চলেছি ৷”