পুরুলিয়া, 12জুন : দূষণে পরিপূর্ণ পুরুলিয়া শহরের জলাশয়গুলি । একইঅবস্থা জাতীয় সরোবরের । নর্দমার নোংরা জল ঢুকছে পুকুরগুলিতে । আবর্জনায় পরিপূর্ণহয়ে উঠেছে জলাশয়গুলি । সেই সঙ্গে ভরতি কচুরিপানায় । নিয়মিত সাফাই,জল পরিশোধন ও সংস্কারের অভাবে বেহাল অবস্থা সাহেববাঁধ ঝিলসহ অন্যান্য জলাশয়গুলি । একই সঙ্গে পুকুর ভরাট করে অবৈধ বাড়ি নির্মাণেরওঅভিযোগ উঠেছে । ক্ষোভ জমেছে পুরুলিয়া শহরবাসীর ।
পুরুলিয়ায় বৃষ্টিপাতের হার এমনিতেইঅন্যান্য জেলার থেকে কম । জলকষ্ট দূর করতে1938 সালে তৎপর হন তৎকালীন মানভূম জেলার ( বর্তমানেপুরুলিয়া জেলা)ব্রিটিশ ডেপুটি কমিশনার কর্নেল টিকলে । জেলবন্দী কয়েদিদের নিয়ে পুরুলিয়া শহরেরবুকে প্রায়85 একর জায়গাজুড়ে সাহেববাঁধ খননের কাজ শুরু করেন । পাঁচ বছর ধরে এই পুকুর খনন করা হয় । বর্তমানে সেটিজাতীয় সরোবরের তকমা পেয়েছে । সেই থেকেই পুরুলিয়া শহরবাসী এই সাহেব বাঁধের জলইপরিশোধিত করে পানীয় হিসেবে এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে থাকেন । এছাড়াও পুকুরেরজল পরিশোধিত করার জন্য পৌরসভা চত্বরে একটি ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হয় তৎকালীন সময়ে ।সেই পরিশোধিত জল পুরুলিয়া শহরের খাবারের দোকানে সাপ্লাই দেওয়া হয় । এমনকী শহরবাসীসেই জল পানও করেন । কিন্তু বর্তমানে সাহেব বাঁধের চারপাশে বড় বড় হোটেল রেস্তরাঁগড়ে উঠেছে । গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল । এমনকী সাহেব বাঁধের চারপাশেগাড়ির গ্যারেজও রয়েছে । এই সমস্ত জায়গা থেকে দূষিত জল প্রবেশ করছে সাহেব বাঁধঝিলের জলে । ফলে দূষিত হয়ে পড়েছে সাহেব বাঁধের জল । পুকুরে থাকা বিভিন্নপ্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে দিন দিন । জলের উপরে ভেসে উঠছে মরা মাছ । শুধু তাই নয়পুরুলিয়া শহরের নতুন বাঁধ, রাজাবাঁধ, বুচা বাঁধ, পোকা বাঁধ, দুলমি-নডিহা এলাকার বাঁধগুলিও আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে ।দূষিত হয়ে পড়েছে ওই সমস্ত জলাশয়ের জল । নোংরা ড্রেনের জল মিশছে পুকুরগুলিতে ।
অভিযোগ, পুরুলিয়া পৌরসভার পক্ষ থেকে সাহেব বাঁধ ঝিল থেকে শুরু করেশহরের অন্যান্য জলাশয়গুলির দূষণ রোধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি । এছাড়াওজলাশয়গুলি নিয়মিত সংস্কার করা হয় না বলে অভিযোগ । শহরবাসী সুশান্ত বাউরি,অর্ধেন্দু বাউরিরা বলেন, "সাফাই করা হয় না জলাশয়গুলি । নোংরাআবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে । তবুও সেই জলাশয়গুলি ব্যবহার করছেন পুরুলিয়া শহরবাসী। সাহেব বাঁধের জল দূষিত হয়ে পড়েছে । পুরুলিয়া পৌরসভার তরফে জলদূষণ ঠেকাতে এখনওকোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি ।" এই বিষয়ে পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদকতথা চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, "রুক্ষপুরুলিয়ায় জল সংকট মেটাতে তৎকালীন সময়ে পুরুলিয়া শহরে বহু পুকুর খনন করা হয়েছিল ।কিন্তু সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারণে দূষিত হয়ে পড়েছে প্রতিটি জলাশয় । প্রচুরনোংরা আবর্জনা ফেলে দেওয়া হয় জলে । এছাড়াও গাড়ির গ্যারেজের বিষাক্ত জল, ড্রেনের জল পুকুরগুলিতে ঢুকছে । যার ফলেপ্রতিটি জলাশয়ে জল আজ দূষিত হয়ে পড়েছে । এমন কী পুরুলিয়া শহরের জাতীয় সরোবর সাহেববাঁধ ঝিলও আজ দূষণের কবলে পড়েছে । কিন্তু দূষণ রোধে অসমর্থ পুরুলিয়া পৌরসভা ।নিয়মিত সাফাই না করা, জলাশয়ের জল পরিশোধিতনা করা, সংস্কার না করার ফলেদূষিত হয়ে চলেছে । তবুও নিরুপায়ভাবে পুরুলিয়া শহরবাসী দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করেচলেছেন জলাশয়গুলি । এভাবে চলতে থাকলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন রকম রোগব্যাধি দেখাদেবে । চামড়ার রোগ দেখা দেবে । এমনকী ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে । এছাড়াও বেশকয়েকটি পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়ি । এরফলে জলাশয়গুলি আজ ধ্বংসের মুখে।"
পুরুলিয়া শহরBJP সভাপতি সত্যজিৎ অধিকারীর অভিযোগ, "পুরুলিয়া শহরের সাহেব বাঁধ ঝিল-সহ সমস্ত পুকুরগুলি নোংরাআবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে । নিয়মিত সংস্কারও করা হয় না জলাশয়গুলি । ড্রেনেরদূষিত জল নিয়মিত মিশছে জলাশয়গুলিতে । কিন্তু উদাসীন পুরুলিয়া পৌরসভা । জলাশয়গুলিরদূষণ রোধে উদ্যোগ নেওয়া উচিত পৌরসভাকে ।" যদিও পুরুলিয়া পৌরসভার প্রশাসকশামীম দাদ খান বলেন, "বিগত40 বছরের তুলনায় পুরুলিয়া শহরের জাতীয়সরোবর "সাহেব বাঁধ ঝিল"-এ অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে । আগে কচুরিপানায়পরিপূর্ণ হয়ে থাকত জলাশয়টি । কিন্তু বর্তমানে একবারে সাফ করা হয়েছে । সাহেব বাঁধেরচারপাশে ড্রেনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে । তবুও কয়েকটি জায়গা থেকে দূষিত জল ঢুকছে,সেগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হবে । তবেশহরের অন্যান্য জলাশয়গুলি সংস্কারের জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনজানিয়েছে । ফান্ড না এলে এতগুলো পুকুর সংস্কার করা এবং সাফাই করার মতো ক্ষমতাপুরুলিয়া পৌরসভার নেই । যেমন যেমন পুরুলিয়া পৌরসভার ফান্ডে টাকা আসবে তেমন তেমনকাজ হবে । একইসঙ্গে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে ।" এছাড়াও তিনি জানান,"পুকুর ভরাটের অভিযোগ আসছিল কয়েকদিন ধরে। আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিয়েছি। বর্তমানে পুকুর ভরাট করে নির্মাণের কাজ বন্ধরয়েছে । এসব ঘটনা যদি ঘটে থাকে তাহলে পৌরসভা ব্যবস্থা নেবে ।"