পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Oct 8, 2020, 10:55 PM IST

ETV Bharat / state

সাত মাস বাড়িতে বসে, সংকটে পুরুলিয়ার পাড়দ্দার ঢাকিরা

এক ঢাক শিল্পী বলেন, "দুর্গাপুজোয় আশা ছিল কিন্তু কোরোনা পরিস্থিতির জেরে বাইরে থেকে ঢাক বাজানোর বরাত একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে । বাধ্য হয়ে কম বাজেটের পুজোয় ঢাক বাজানোর বরাত ধরতে হয়েছে ।"

সংকটে পুরুলিয়ার ঢাকিরা
সংকটে পুরুলিয়ার ঢাকিরা

পুরুলিয়া, 8 অক্টোবর : সাত মাস ধরে বরাত নেই । বংশপরম্পরায় চলে আসা পেশা ধরে রাখতে সংকটে পুরুলিয়ার বলরামপুর থানার বিখ্যাত ঢাকি গ্রাম পাড়দ্দার ঢাক শিল্পীরা । একটা সময় জেলা তথা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তো বটেই দিল্লি সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই গ্রামের ঢাক শিল্পীরা ডাক পেতেন । কিন্তু এবছর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কোরোনা সংক্রমণ । তাই সাত মাস ধরে ঢাক বাজানোর বরাত না পেয়ে বাড়িতেই বসে রয়েছেন ঢাক শিল্পীরা । দুর্গাপুজোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন অনেকে । কিন্তু বাইরে থেকে ডাক পাননি কোনও শিল্পীই । সংসারে পড়েছে টান । ঢাকে পড়েছে ধূলো । তাই অনেকেই বংশপরম্পরায় চলে আসা এই পেশা বদলে অন্য কাজে ঝুঁকছেন । কেউ জেলাতেই কম বাজেটের পুজোর বরাত নিয়েছেন। এভাবে চললে নিজেদের পেশা কীভাবে ধরে রাখবেন তা ভেবে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ঢাকিদের ।

পাড়দ্দা গ্রামের বৃদ্ধ শিল্পী হাঁড়িরাম কালিন্দী বলেন, "12 বছর বয়স থেকে ঢাকির কাজ করে আসছি । একটা সময় ছিল যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাক বাজানোর ডাক আসত । সেই সময় জেলা তথা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তো বটেই কলকাতা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হাজারিবাগ, রাজস্থান, বিহার, ঝাড়খণ্ড সহ বহু রাজ্যে ঢাক বাজিয়ে এসেছি সদলবদলে । অনেক চাকরির জন্য ডাক পেয়েছিলাম কিন্তু বংশপরম্পরায় চলে আসা এই কাজের জন্য তাতে যোগ দিইনি । আমার ছেলেদের সেই শিক্ষাই দিয়েছি । এখন বয়স হয়েছে তবুও যতটুকু পারি ঢাক বাজাই । প্রতি বছরই দুর্গাপুজো তো বটেই কালী, বাসন্তী, গণেশ পুজোতেও ডাক আসত ভিন জেলা ও ভিন রাজ্য থেকে । রোজগারও হত ভালোই ৷ কিন্তু সময় এমনভাবে বদলে যাবে ভাবতে পারিনি । এবছর কোরোনার জেরে গত সাত মাস ধরে গ্রামের কোন ঢাকিই ডাক পাননি । দুর্গাপুজোয় আশা ছিল কিন্তু কোরোনা পরিস্থিতির জেরে বাইরে থেকে ঢাক বাজানোর বরাত একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে । বাধ্য হয়ে 400-500 টাকায় কম বাজেটের পুজোয় ঢাক বাজানোর বরাত ধরতে হয়েছে । এবছর এই ঢাকি গ্রামের ঢাকিদের অবস্থা খুবই খারাপ ।’’

সংকটে পুরুলিয়ার পাড়দ্দার ঢাকিরা

আর এক ঢাক শিল্পী নিরু কালিন্দীও বললেন একই কথা । তিনি বলেন, "পাড়দ্দা গ্রামে জওয়ান বুড়ো মিলিয়ে প্রায় 50 থেকে 60 জন ঢাক শিল্পী রয়েছেন । এই গ্রামের কালিন্দী পাড়ার প্রত্যেক পরিবারের ঢাক বাজানোই মূল পেশা । বংশপরম্পরায় চলে আসছে এই শিল্প । বছরের সব সময়ই জেলা তো বটেই ভিন জেলা ও ভিন রাজ্য থেকে ঢাক বাজানোর ডাক পেত সকলেই । এতে আয়ও হত প্রচুর । কিন্তু এবছর কোরোনার জেরে ঢাকিদের কদর নেই । সাত মাস ধরে সকলেই বাড়িতে রয়েছে । রোজগার একেবারেই বন্ধ । ছেলেরা বাধ্য হয়ে ঢাক বাজানো ছেড়ে অন্য ব্যবসায় ঝুঁকছে ।"

ঢাক বাজানোর জন্য প্রতি বছর ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়া কমাউন্ডার কালিন্দী, বীরেন কালিন্দীরা বলেন, "বংশপরম্পরায় চলে আসা নিজেদের এই ঢাক বাজানোর পেশা কীভাবে ধরে রাখব ভেবে পাচ্ছি না । কোরোনা পরিস্থিতি যেন কেড়ে নিয়েছে সবকিছু । এবার দুর্গাপুজোতেও বরাত একেবারেই নেই । সাত মাস ধরে বাড়িতে বসে রয়েছি । এরকম চললে সংসার চালাব কীভাবে । তাই কেউ বাঁশের কাজ, কেউ দিনমজুরের কাজ করছেন । এখন শুধু পরিস্থিতি বদলানোর দিকে তাকিয়ে রয়েছি ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details