পুরুলিয়া, 26 জানুয়ারি : অধ্যাপক খুনে স্ত্রী ও তার প্রেমিককে গ্রেপ্তার করল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ ৷ ধৃতদের নাম পাপড়ি চট্টরাজ ও অজয় আম্বানি ৷ গতকাল রাতে ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে মূল অভিযুক্ত অজয় আম্বানিকে আটক করা হয় ৷ অন্যদিকে পুরুলিয়ার নর্থ লেক রোডের স্বামীর বাড়ি থেকে পাপড়ি চট্টরাজকে আটক করে পুলিশ৷ সারারাত থানায় দফায় দফায় জেরা করা হয় অভিযুক্তদের ৷ জেরার খুনের কথা স্বীকার করে পাপড়ি বিশ্বাস চট্টরাজ ৷ তারপর আজ সকালে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তদের৷
পুরুলিয়ার নর্থ লেক রোড এলাকার বাসিন্দা অরূপ চট্টরাজ৷ পেশায় অধ্যাপক ৷ পুরুলিয়া নিস্তারিণী বালিকা মহাবিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে পড়াতেন অরূপবাবু ৷ বছর দশেক আগে পুরুলিয়ার বাসিন্দা পাপড়ি বিশ্বাসের সঙ্গে বিয়ে হয় অরূপবাবুর ৷ স্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে নর্থ লেক রোডের বাড়িতেই থাকতেন অরূপ৷ ছয় বছরের একটি কন্যাসন্তান ও রয়েছে তাদের ৷ 17 জানুয়ারি রাতে নিজের বাড়িতেই খুন হন অরূপ ৷ 18 জানুয়ারি বিকেলে পুরুলিয়া থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করে মৃতের পরিবার ৷ তারপর থেকেই ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ ৷ সেই ঘটনার ন'দিন পর গতকাল রাতে খুনের মূল অভিযুক্ত অজয় আম্বানি ও অরূপবাবুর স্ত্রী পাপড়ি বিশ্বাস চট্টরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলার আমখেরার বাসিন্দা অজয় আম্বানি ৷ প্রায় 20 বছর আগে বাবার চাকরির সূত্রে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলায় থাকতে শুরু করে সে ৷ পুরুলিয়ার জগন্নাথ কিশোর কলেজে ভরতি হয় সে৷ সেখানেই অজয়ের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় পাপড়ির ৷কলেজে পড়াকালীন দু'জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ৷ কলেজে পড়াশোনা শেষ করার পর কাজের সূত্রে পুনরায় ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে চলে যায় অজয়৷ তারপর থেকেই অজয় ও পাপড়ির সম্পর্কে ভাঙন ধরে৷ এই ঘটনার কয়েক বছর পর পুরুলিয়া শহরের নর্থ লেক রোডের বাসিন্দা অরূপবাবুর সঙ্গে বিয়ে হয় পাপড়ির ৷ তাদের একটি কন্যাসন্তান হয় ৷ এরপর কেটে যায় বেশ কয়েকটি বছর৷
কিন্তু বছর দুয়েক আগে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে পাপড়ির সঙ্গে পুনরায় পরিচয় হয় অজয়ের৷ পাপড়ির সঙ্গে দেখা করতে পুরুলিয়াতেও আসে সে৷ পুরুলিয়ার রবীন্দ্রপল্লিতে একটি ঘরও ভাড়া নেয় ৷ মাঝে মধ্যে অজয়ের বাড়িতেও দেখা করতে যেত পাপড়ি৷ পুলিশ জানিয়েছে, 17 জানুয়ারি সন্ধ্যায় স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগে প্রেমিককে নিজের বাড়িতে ডাকে পাপড়ি ৷ পাপড়ির কথায় অরূপবাবুর বাড়িতে যায় অজয়৷ কিন্তু আচমকা অরূপবাবু বাড়ি ফিরে আসেন৷ স্বামী বাড়ি ফেরায় প্রেমিককে নিজের বেডরুমে লুকানোর জায়গা করে দেয় পাপড়ি ৷ রাতের খাওয়া সেরে বেডরুমে ঘুমোতে গেলে অজয়কে দেখে ফেলেন অরূপবাবু৷ তখনই অরূপকে মাফলার দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে অজয় ৷ তারপর সেখান থেকে পালিয়ে যায় ৷
এরপরই 18 জানুয়ারি পুরুলিয়া সদর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করে মৃতের পরিবার৷ ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুরুলিয়া সদর থানার বিশেষ তদন্তকারী দল৷ ঘটনার 9 দিনের মাথায় মূল অভিযুক্ত অজয় আম্বানি ও অধ্যাপকের স্ত্রী পাপড়ি বিশ্বাস চট্টরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছে অভিযুক্তরা ৷ আজ অভিযুক্তদের পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হয়৷ অভিযুক্তদের 14 দিনের জেল হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক ৷ পাশাপাশি পুলিশকে ঘটনার পুনর্নির্মাণেরও নির্দেশ দেন ৷