পুরুলিয়া, 27 অক্টোবর: কালীপুজোর (Kali Puja 2022) সঙ্গে সঙ্গে পুরুলিয়া (Purulia news) জেলার মানুষজন মেতে ওঠেন বাঁধনা পরবে (Badna Parab)। এ জেলার মানুষের অন্যতম প্রাণের উৎসব হল এই বাঁধনা পরব ।
কালীপুজোর অমাবস্যার রাত থেকে উৎসবে মেতে ওঠেন ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের তামাম গ্রাম বাংলার মানুষ । মূলত গো বন্দনা হিসেবে এই উৎসব বেশি পরিচিত । বাঁধনা পরব আসলে আমন ধান বাড়িতে তোলার আগে গরু গাভীদের বন্দনা করে কৃতজ্ঞতা জানানোর রীতি । তবে এই বিষয়ে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে গ্রাম বাংলায় ৷ বলা হয়, মানুষ যখন গরু মহিষদের নৃশংস ভাবে নির্যাতন করত, তখন তারা নিরুপায় হয়ে মহাদেবের স্মরণাপন্ন হলে মহাদেব তাদের কথা দেন, মানুষ তাদের কেমন রেখেছে, যত্ন আত্তি করছে কি না, তা দেখতে বছরের এই দিনটিতে মর্ত্যে হাজির হবেন তিনি । আর তাই এখানকার মানুষের বিশ্বাস, কালীপুজোর রাতে মর্ত্যলোকের প্রতিটি বাড়িতে আসেন স্বয়ং শিব ।
তাই বাড়ির মহিলারা পুজোর আগে মাটির প্রলেপ দিয়ে ঘরকে সাজিয়ে তোলেন । অমাবস্যার রাতে পুরুষেরা দল বেঁধে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ঢোল ধামসা সহকারে অহিরা গান গেয়ে গরুকে জাগিয়ে রাখেন । পরের দিন আলপনা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয় প্রতিটি বাড়ির আঙিনা । গোয়াল ঘরকেও সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলা হয় । তারপর গোয়ালে পুজো করে গরু ও মহিষদের তেল-সিঁদূর দিয়ে বরণ করা হয় । তিনদিন ধরে গরু-বাছুরদের পা ধোয়ানো হয় । গরু, বাছুর, মহিষদের মাথায় বেঁধে দেওয়া হয় ধানের শীষ দিয়ে তৈরি মুকুট । পুজোয় যে ব্যক্তির গরু ডিম ভেঙে দেয়, তাকে ভাগ্যবান মনে করা হয় । সবাই বাজনা বাজিয়ে তাঁর বাড়ি হাজির হন ।
আরও পড়ুন:বাড়ির কালীপুজোয় মুখ্যমন্ত্রী নন, দেখা মিলল গৃহকর্ত্রী মমতার
এই পরবে তিনদিন ধরে গরুদের পেট ভরে ঘাস, খড় খাওয়ানো হয় । তারপর গরুগুলিকে স্নান করিয়ে বিভিন্ন রং দিয়ে সারা শরীরে ছোপ দেওয়া হয় । বিকালে হয় গরু খুঁটা । যাতে একটি খুঁটিতে গরুকে বেঁধে তাকে একটি মৃত গরুর চামড়া শুঁকিয়ে উত্যক্ত করা হয় । আর সমান তালে চলে ঢোল নাগড়া বাজানো, পুরুলিয়ার গ্রামাঞ্চলে এই রীতি গরু খুঁটা বলে পরিচিত । গ্রামের সকলেই এতে উপস্থিত হন । জেলাবাসীর বিশ্বাস, এইভাবেই এই উৎসবগুলি পালনের মধ্যে দিয়ে গ্রাম বাংলার মানুষ ধরে রেখেছেন তাঁদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ।