পুরুলিয়া, 18 ফেব্রুয়ারি : কালী পুজো হয়েছিল সেই গত বছরের অক্টোবর ৷ তবে এখনও নিরঞ্জন করা হয়নি ৷ অস্থায়ী প্যান্ডেল করে সাড়ে তিন মাস ধরে রাখা ছিল প্রতিমাটি ৷ শুধু রাখা নয়, প্রতিদিন পুজোও করা হয়েছে মূর্তিটিকে ৷ তবে, কেন এতদিন ধরে মূর্তিটি এভাবে রাখা রয়েছে ? জানা যায়, পুকুরের মালিকের আপত্তিতেই আটকে গিয়েছিল প্রতিমার নিরঞ্জন ৷ তবে, পুজো কমিটির উদ্যোক্তারাও জেদ ধরেছিল প্রতিমার নিরঞ্জন ওই পুকুরেই হবে ৷ পরে কলকাতা হাইকোর্টে মাতৃসেবক পুজো কমিটির বিরুদ্ধে মামলা করেন জলাশয়ের মালিক ৷ অবশেষে সাড়ে তিন মাস পর জয় হল পুকুরের মালিক পক্ষের ৷ শীঘ্রই প্রতিমা নিরঞ্জন করে জায়গা খালি করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ ৷
68 বছর ধরে পুরুলিয়া শহরের ভাগাবাঁধ পাড়ায় পুজো করে আসছে মাতৃসেবক কালী পুজো কমিটি ৷ গত বছর একইভাবেই পুজো হয় ৷ সবই ঠিকঠাক ছিল ৷ প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় শুরু বিপত্তির ৷ প্রতিমা নিয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের মূল গেটে ঝুলছে তালা ৷ যেখানে পুজো হয় ও যে পুকুরে প্রতিমা নিরঞ্জন দেওয়া হয়, দু'টি জায়গারই মালিক এলাকার বাসিন্দা শান্তি দে ৷ প্রতিমা নিরঞ্জন করতে দেবেন না বলে তালা ঝুলিয়ে দেন তিনি ৷ আর তা নিয়েই ঝামেলা বাধে শান্তি দে ও পুজো কমিটির মধ্যে ৷ পুজো কমিটির পক্ষে অভিযোগ, স্থানীয় সদর থানায় অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি ৷ তাই নিরঞ্জন না করে প্রতিমা রেখে দেওয়া হয় সেখানেই ৷
শান্তি দে কমিটির বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে ৷ সাড়ে তিন মাস পর শুক্রবার মামলার শুনানি হয় ৷ অবিলম্বে প্রতিমা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয় আদালত ৷ সঙ্গে পুলিশি ব্যবস্থাপনার খরচ মামলাকারীকে বহন করার নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ শান্তি দে বলেন, "যে স্থানে কালী পুজো হয়ে আসছে ও যে পুকুরে নিরঞ্জন দেওয়া হত সেটাও আমার ৷ এতদিন আমি কিছু বলিনি ৷ তবে 2018 সালেই জানিয়ে দিয়েছিলাম, 2019 থেকে যেন কালী পুজোর স্থান বদলে দেওয়া হয় ও ওই পুকুরে যেন আর নিরঞ্জন না দেওয়া হয় ৷ কিন্তু, তারপরও আমার অনুমতি ছাড়া আবার পুজো করে ও নিরঞ্জনের চেষ্টা করে ৷ তাই আমি পুকুরের মূল গেটে তালা লাগিয়ে দিই ৷ হাইকোর্টে মামলা করি ৷ আদালতের রায় এসেছে ৷ এবার প্রতিমা সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে পুজো কমিটিকে ৷"
শীঘ্র প্রতিমা নিরঞ্জনের রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট পুজো কমিটির উদ্যোক্তা চিন্ময়কান্তি দাসের অভিযোগ, "ভাগাবাঁধ পাড়ার একমাত্র ব্যবহারযোগ্য পুকুর এটি ৷ এলাকাবাসীরা সবাই ব্যবহার করেন ৷ পুকুরের মালিক বেড়া দিয়ে ঘিরে তালা লাগিয়ে দিয়েছে ৷ যার ফলে কেউ পুকুর ব্যবহার করতে পারছে না ৷ এমনকি, প্রতিমা নিরঞ্জনের বাধা দেওয়া হয়েছে ৷ 68 বছর ধরে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে আসছি আমরা ৷ তাই অস্থায়ী মন্দির করে প্রতিমা রেখে দিয়েছি ৷ আমরাও আদালতে পালটা মামলা করব ৷" হাইকোর্টের আইনজীবী সৌগত মিত্র বলেন, "সাড়ে তিনমাস উচ্চ আদালতে সব্যসাচী ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন শীঘ্রই ওই কালী প্রতিমা সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার ৷ শান্তি দে'র অনুমতি ছাড়া ওই জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়াতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় ৷ তবে, পুলিশি ব্যবস্থাপনার খরচ বহন করতে হবে মামলাকারীকে ৷"