পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

লকারেই থাকবে সোনার দুর্গা, পুরুলিয়ার জয়পুরের রাজবাড়ির পুজো রীতি মেনেই

এখানকার অন্যতম আকর্ষণ সোনার দ্বিভুজা দুর্গা ও রূপোর চালচিত্র ৷ এছাড়াও পুজোর চারদিন হয় নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ৷ জেলা তথা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই, প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকেও দর্শনার্থীরা ভিড় জমান জয়পুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় ৷

By

Published : Oct 19, 2020, 10:48 PM IST

Updated : Oct 19, 2020, 10:53 PM IST

worship-of-jaipur-palace-of-purulia-
worship-of-jaipur-palace-of-purulia-

পুরুলিয়া, 19 অক্টোবর: বছরের 361 দিন মা দুর্গা থাকেন ব্যাঙ্কের লকারে ৷ রাজবাড়িতে মা আসেন কড়া পুলিশি পাহারায় ৷ দুর্গা পুজোর চারদিন জেলা পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় নাটমন্দিরে বিরাজমান থাকেন মা ৷ দশমী পুজো শেষে ব্যাঙ্কের লকারে ফিরে যান ৷ জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার জয়পুরের সিংদেও পরিবারের পুজো ৷ এখানকার অন্যতম আকর্ষণ সোনার দ্বিভুজা দুর্গা ও রূপোর চালচিত্র ৷ এছাড়াও পুজোর চারদিন হয় নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ৷ জেলা তথা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই, প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকেও দর্শনার্থীরা ভিড় জমান জয়পুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় ৷ কিন্তু এবছর কোরোনা পরিস্থিতিতে দর্শনার্থীদের ভিড় এড়াতে চাইছে রাজপরিবার ও স্থানীয় প্রশাসন ৷ তাই সোনার দুর্গা আসবে না বাড়িতে ৷ লকারেই থাকবে মায়ের মূর্তি ও চালচিত্র ৷ তবে পুজো হবে রীতি মেনেই ৷

রাজবাড়ির সোনার দুর্গা ৷

জয়পুর রাজবাড়ির পুজোর ইতিহাস সম্পর্কে রাজ পরিবারের অন্যতম সদস্য শঙ্কর নারায়ণ সিংদেওর কাছ থেকে জানা যায়, চারশো বছর আগে 1600 খ্রিস্টাব্দে রাজা জয়সিংহ পুরুলিয়ায় আসেন ৷ যাঁর নামে এই অঞ্চলের নাম জয়পুর ৷ জয় সিংহ উজ্জ্বয়নী থেকে এসে এলাকার মুণ্ডা সর্দার খামার মুণ্ডাকে হত্যা করে জঙ্গলমহলের এই এলাকা দখল করেন ৷ খামার মুণ্ডা একটি খাঁড়াকে ইষ্ট দেবী হিসেবে পুজো করতেন ৷ জয় সিংহ খাঁড়াটিও ছিনিয়ে নেন ৷ সেই খাঁড়া ও কলা বউয়ের পুজোর প্রচলন হয় সিংদেও পরিবারে ৷ এর বহু বছর পরে সপ্তম রাজা কাশিনাথ সিংহের আমলে দুর্গাপুজোর দিন একটি অঘটন ঘটে ৷ আগুন লেগে যায় কলা বউয়ে ৷ পুড়ে ছাই হয়ে যায় মন্দির ৷ এরপরই রাজা কাশিনাথ সিংহ মানত করেন, সোনার প্রতিমা তৈরি করে তাতে রূপোর চালচিত্র লাগিয়ে মায়ের পুজো করবেন ৷

পুরুলিয়ার জয়পুর রাজবাড়ির পুজো ৷

সোনার বিগ্রহ তৈরির জন্য বেনারসের স্বর্ণ শিল্পীদের ডাকা হয় ৷ 1 সের (1 কেজি) সোনার দ্বিভুজা দুর্গা মূর্তি ও দেড় মন (60 কেজি) রুপার চালচিত্র তৈরি করান রাজা ৷ সেই থেকে সোনার বিগ্রহ পুজোর প্রচলন জয়পুর রাজবাড়িতে ৷ এরপর 1970 সালে ঘটে যায় বিপত্তি ৷ ডাকাত হানা দেয় রাজবাড়িতে ৷ তারা সোনার মূর্তির হদিশ না পেয়ে মন্দিরে রাখা মায়ের সমস্ত অলঙ্কার ও অন্যান্য দামি সামগ্রী নিয়ে যায় ৷ এই ঘটনার পরই টনক নড়ে রাজপরিবারের ৷ তৎকালীন জেলা পুলিশের উদ্যোগে রাজবাড়ির স্বর্ণ বিগ্রহের নিরাপত্তায় চালু হয় বিশেষ ব্যবস্থা ৷ ঠিক হয় পুজোর চার দিন ছাড়া 361 দিন ব্যাঙ্কের লকারে থাকবে বিগ্রহ ৷ এই রীতিই আজও চলছে ৷ সেই মতো গত বছরও পুজোর চার দিনের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় সোনার দুর্গা ও রূপোর চালচিত্র আনা হয়েছিল রাজবাড়িতে ৷ পুজো শেষে দশমীতে পুলিশি পাহারায় ব্যাঙ্কে ফিরেছিল মূর্তি ৷ কিন্তু, কোরোনা পরিস্থিতিতে সেই রীতি বদলাচ্ছে এবার ৷

পুরোনো রাজবাড়ি ৷

রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য শঙ্কর নারায়ণ সিংদেও বলেন, "এবছর কোরোনা পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ভিড় এড়াতে মায়ের সোনার মূর্তি ও চালচিত্র ব্যাঙ্কের লকারেই থাকবে ৷ তবে পুজো হবে রীতি মেনেই ৷ মন্দিরে প্রবেশের ক্ষেত্রে থাকবে একাধিক নির্দেশিকা ৷ মাস্ক পরে মন্দিরে প্রবেশ করতে হবে সকলকে ৷ থাকবে স্যানিটাজারের ব্যবস্থাও ৷"

স্থানীয় বাসিন্দা অম্বুজ কুমার হাজরা বলেন, "রাজবাড়ির পুজো ঘিরে এলাকায় উৎসবের মেজাজ তৈরি হয় ৷ প্রতি বছর বহু দর্শনার্থী ভিড় করেন মন্দিরে ৷ আনন্দে মেতে ওঠেন সকলে ৷ কিন্তু, এবছর কোরোনা পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজো হওয়ায় উৎসবের মেজাজ তেমন নেই !"

Last Updated : Oct 19, 2020, 10:53 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details