শুনুন পুরুলিয়ার জয়পুর রাজবাড়ির সোনার দুর্গার কাহিনি জয়পুর (পুরুলিয়া), 18 অক্টোবর:পুজোর দিনগুলি ছাড়াবছরের 361 দিন মা দুর্গা থাকেন ব্যাংকের লকারে ৷ পুজোর সময় রাজবাড়িতে মাকে নিয়ে আসা হয় কড়া পুলিশি পাহারার মধ্য দিয়ে ৷ দুর্গাপুজোর চারদিন জেলা পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় রাজবাড়িতে বিরাজমান থেকে পুজো নেন মা সোনার দুর্গা ৷
দশমীতে বিসর্জনের দিন আবার ব্যাংকের লকারেই ফিরে যান দেবী ৷ প্রাচীন ঐতিহ্য ও আচারবিধি বজায় রেখে পুরুলিয়ার জয়পুরের রাজপরিবারে ঠিক এভাবেই দুর্গাপুজো হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে ৷ সোনার তৈরি দেবীমূর্তি এখানে দ্বিভুজা ৷ পিছনে থাকে রূপোর চালচিত্র ৷ ভিন জেলা এবং রাজ্য থেকে যা দেখতে প্রচুর দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে জয়পুর রাজবাড়িতে ৷ রাজার রাজত্ব না থাকলেও, পুজোর চারটি দিন যেন সেই পুরনো রাজতন্ত্র ফিরে আসে জয়পুরে । এই চারটে দিন আয়োজিত হয় নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ৷
ইতিহাস বলছে, প্রায় 400 বছর আগে 1600 খ্রিস্টাব্দে রাজা জয়সিংহ পুরুলিয়ায় আসেন ৷ যাঁর নামে এই অঞ্চলের নাম হয় জয়পুর ৷ জয় সিংহ উজ্জয়িনী থেকে এসে মুণ্ডা সর্দার খামার মুণ্ডাকে হত্যা করে জঙ্গলমহলের এই এলাকা দখল করেন ৷ খামার মুণ্ডা একটি খাঁড়াকে ইষ্টদেবী হিসেবে পুজো করতেন ৷ জয় সিংহ সেই খাঁড়াটিও ছিনিয়ে নেন ৷ সেই খাঁড়া ও কলা বউয়ের পুজোর প্রচলন হয় সিংদেও পরিবারে ৷ এর বহু বছর পর সপ্তম রাজা কাশীনাথ সিংহের আমলে দুর্গাপুজোর দিন একটি অঘটন ঘটে ৷ আগুন লেগে যায় কলাবউয়ে ৷ পুড়ে ছাই হয়ে যায় মন্দির ৷ এরপরই রাজা কাশীনাথ সিংহ দেবীর কাছে ক্ষমা চান ৷ সেদিনই স্বপ্নাদেশ পান সোনার প্রতিমা তৈরি করে পুজো করার ৷ সেই মতোই সোনার বিগ্রহ তৈরির জন্য বেনারসের স্বর্ণশিল্পীদের ডাক পড়ে ৷ এক সের ওজনের (দেড় কেজি) সোনার দ্বিভুজা দুর্গামূর্তি ও দেড় মন (60 কেজি) রূপো দিয়ে চালচিত্র তৈরি করান রাজা ৷ সেই থেকে সোনার বিগ্রহ পুজোর প্রচলন শুরু জয়পুর রাজবাড়িতে ৷
পুরুলিয়ার জয়পুর রাজবাড়ির সোনার দুর্গা এরপর 1970 সালে ঘটে যায় আরেক বিপত্তি ৷ একদল ডাকাত হানা দেয় রাজবাড়িতে ৷ তারা সোনার মূর্তির হদিশ না-পেয়ে মন্দিরে রাখা মায়ের সমস্ত অলঙ্কার ও অন্যান্য দামি সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যায় ৷ এই ঘটনার পরই টনক নড়ে রাজ পরিবারের ৷ তৎকালীন জেলা পুলিশের উদ্যোগে রাজবাড়ির স্বর্ণ বিগ্রহের নিরাপত্তায় চালু হয় বিশেষ ব্যবস্থা ৷ ঠিক হয় পুজোর চার দিন ছাড়া বাকি 361 দিন ব্যাংকের লকারে থাকবে সোনার বিগ্রহ ৷ এই রীতিই আজও চলছে ৷ পুজোর চার দিনের জন্য ব্যাংক থেকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় সোনার দুর্গা ও রূপোর চালচিত্র আনা হয় রাজবাড়িতে ৷ পুজো শেষে দশমীতে পুলিশি পাহারায় আবার ব্যাংকে লকারবন্দি করা হয় মা দুর্গাকে ।
আরও পড়ুন : নিখুঁত কারুকার্যে কাগজের দুর্গা তৈরি বহরমপুরের শিল্পীর, যোগ্য সঙ্গত খুদে ছেলের