পুরুলিয়া, 11 এপ্রিল : দেশজুড়ে কোরোনার আতঙ্ক । জারি হয়েছে লকডাউন । বন্ধ যানবাহন চলাচল, বন্ধ দোকানপাট, বন্ধ স্কুল-কলেজ থেকে অফিস-আদালত । সাধারণ মানুষ গৃহবন্দী । বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোতে নারাজ তাঁরা । চারিদিকের রাস্তাঘাট খালি । ঠিক সেই সময় কোরোনার আতঙ্ককে সঙ্গী করেই নীল বাতি জ্বেলে অনবরত মানুষকে সেবা দিয়ে চলেছেন অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা । কেউ মুখে গামছা বেঁধে, কেউ নিম্নমানের মাস্ক বেঁধে, কেউ আবার মুখে রুমাল বেঁধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন দিনরাত । চিকিৎসক থেকে পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী, দমকলকর্মীদের মতো এঁরাও কোরোনা মোকাবিলার যুদ্ধে শামিল । অথচ PPE-তো দূরের কথা জেলা প্রশাসন বা স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের মেলে না কোনও মেডি কিট বা মাস্ক বা স্যানিটাইজা়র । আতঙ্কে এঁদের মধ্যে অনেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে গেলেও বেশিরভাগই কিন্তু দিয়ে যাচ্ছেন ক্রমাগত পরিষেবা ।
পুরুলিয়া জেলায় এমনিতেই যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট অনুন্নত । জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীদের একমাত্র ভরসা পুরুলিয়া দেবেন মাহাত সদর হাসপাতাল । আর এই হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা বেসরকারি ও সরকারি মিলিয়ে 60 । চালকের সংখ্যাও সমতুল্য । ব্লক স্তরের হাসপাতালগুলি থেকেও নিয়মিত রোগী আনতে হয় অ্যাম্বুলেন্স চালকদের । তাই দিনে 24 ঘণ্টাই পরিষেবা দিয়ে থাকেন চালকেরা । এর পাশাপাশি কোরোনা পরীক্ষার এখানে কোনও ব্যবস্থা না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স চালকরা বুঝতে পারেন না কোনটা কোরোনা রোগী আর কোনটা নয় । তাই আতঙ্ক থাকলেও জীবনের ব্রতকে সঙ্গী করে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন চালকরা ।
নেই পর্যাপ্ত সুরক্ষা, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পরিষেবা অ্যাম্বুলেন্স চালকদের - ambulanc
নেই মাস্ক, স্যানিটাইজা়র । নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে 24 ঘণ্টাই পরিষেবা দিয়ে চলেছেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ।
পুরুলিয়া অ্যাম্বুলেন্স চালক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দুলাল সিং বলেন, " বহু অসুবিধার সম্মুখীন হয়েও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে 24 ঘণ্টা সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিয়ে চলেছি । কিন্তু কোরোনা মোকাবিলায় আমাদের জন্য প্রশাসন বা স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে স্যানিটাইজা়র বা মাস্ক কিছুই দেওয়া হয়নি । তবুও আমরা মুখে কাপড় বেঁধে, রুমাল বেঁধে পরিষেবা দিয়ে চলেছি । রাতদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসতে হয় । এমনকী বাইরের রাজ্যের হাসপাতালগুলিতেও রোগীদের নিয়ে যেতে হয় । এর ফলে মনের মধ্যে একটা আতঙ্কও রয়েছে । এমনকী পরিবারের লোকজনেরাও এই সময়ে আমাদের নিয়ে আতঙ্কে থাকেন । কারণ কোন রোগী কী উপসর্গ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে যাচ্ছেন সেটা আমরা যাচাই করি না । আমাদের কাছে রোগীর জীবন বাঁচানোটাই বড় ।" সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক শুভঙ্কর মাহাত বলেন, " আমরা মানুষের পরিষেবায় সারাদিন থাকি । ইতিমধ্যে প্রশাসন দুটো অ্যাম্বুলেন্সকে কোরোনা রোগীর জন্য বরাদ্দ করেছে । কিন্তু আমাদের চালকদের জন্য কোনও স্যানিটাইজা়র বা মাস্ক, গ্লাভসের ব্যবস্থা নেই । তাই আতঙ্ক তো রয়েছেই । কিন্তু তবুও আমরা পরিষেবা দিয়েই চলেছি । আমাদের জন্য প্রশাসন বা স্বাস্থ্য দপ্তর অন্তত স্যানিটাইজা়র, মাস্ক এবং গ্লাভসের ব্যবস্থা করলে খুবই উপকৃত হতাম ।"
এ বিষয়ে হাসপাতালের সুপার সুকমল বিষয়ি জানান, " কোরোনা মোকাবিলায় সকল স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুলেন্স চালককে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । তাঁরা যেন কোনও রোগীকে হাসপাতালে বয়ে নিয়ে আসার আগে মাস্ক পরে থাকেন, অন্তত সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করেন এটাই যথেষ্ট । সবথেকে বড় কথা তাঁরা সত্যিই কোরোনা যুদ্ধে স্বাস্থ্য দপ্তরকে সঙ্গ দিয়ে চলেছেন । তাই তাঁদের স্বাস্থ্যের দিকেও আমরা নজর দিচ্ছি ।"