পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

9 মাসে 3 বিডিও বদলি... কী চলছে কাশীপুরে ? - TMC in Purulia

সম্প্রতি কাশীপুরের বিডিও পদ থেকে বদলির নির্দেশ পেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা হাটি । শুধু প্রিয়াঙ্কা হাটিই নন । এর আগেও একাধিকবার বিডিও বদলি হয়েছেন কাশীপুরে । পরিসংখ্যান বলছে, শেষ তিন বছরে 6 জন বিডিওর বদলি হয়েছে কাশীপুর থেকে । তাঁদের মধ্যে 4 জনেরই বদলি হয়েছে শেষ দুই বছরে । আপাত ভাবে এই পরিসংখ্যান বেশ অস্বাভাবিক নয় কি ?

কাশীপুরে বিডিও বদলি
কাশীপুরে বিডিও বদলি

By

Published : Jul 13, 2021, 5:20 PM IST

Updated : Jul 13, 2021, 5:31 PM IST

কাশীপুর (পুরুলিয়া), 13 জুলাই : তিন জন বিডিও বদলির অর্ডার । তাও আবার মাত্র 9 মাসের ব্যবধানে ! আজ্ঞে হ্যাঁ । ঠিকই শুনেছেন । বিডিওদের ঘন ঘন বদলিটাই যেন এখন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরুলিয়ার কাশীপুরে । কিন্তু কেন বারবার বিডিও বদলি হচ্ছে কাশীপুরে ? কেন কোনও বিডিও টিকতে পারছেন না এখানে ? এরকম নানা প্রশ্ন ইতিমধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করেছে ।

কাশীপুর ব্লক । আদ্রা থেকে প্রায় নয় কিলোমিটারের রাস্তা । পঞ্চায়েত সমিতি এখানে তৃণমূলের । কাশীপুরে কান পাতলেই কানাঘুষো শোনা যায়, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গে তালে তাল না মিলিয়ে কাজ করতে না পারলেই নাকি বদলি । কাশীপুরের বিডিও হয়ে থাকতে হলে পথ একটাই -- সভাপতির মন জুগিয়ে চলতে হবে ! নাহলেই কোপ । রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নাকি বদলি করে দেওয়া হচ্ছে বিডিওদের ।

সম্প্রতি কাশীপুরের বিডিও পদ থেকে বদলির নির্দেশ পেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা হাটি । কিন্তু নতুন যাঁকে তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি এখনও কাশীপুরে এসে না পৌঁছানোর কারণে প্রিয়াঙ্কা হাটিই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন । নতুন বিডিও এলে, তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন কাশীপুর ব্লকের ।

এদিকে কিছুদিন আগেই পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের কাছে বিডিওর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুপ্রিয়া বেলথরিয়া । আর তার দিন কয়েকের মধ্যেই বদলির নির্দেশ হাতে পেয়ে যান প্রিয়াঙ্কা হাটি ।

জেলাশাসকের কাছে কী এমন অভিযোগ করেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ?

সুপ্রিয়া বেলথরিয়ার অভিযোগ, পুরুলিয়ার বিডিও প্রিয়াঙ্কা হাটি সরকারি টাকার অপব্যবহার করছেন । আর সেই কারণেই নাকি তিনি একাধিকবার জেলাশাসকের কাছে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছেন । পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বক্তব্য, তাতে কাজ না হওয়াতেই নাকি তিনি লিখিত অভিযোগ জানাতে বাধ্য হন । প্রথমে 6 জুলাই । তারপর আবার 9 জুলাই । দুটি লিখিত অভিযোগ জমা করেন জেলাশাসকের কাছে ।

দুই বছরের মধ্যে 4 জন বিডিওর বদলি হয়েছে কাশীপুর থেকে

আর প্রিয়াঙ্কা হাটি কাশীপুরের বিডিও পদ থেকে বদলি নির্দেশ পান 5 জুলাই । অর্থাৎ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বক্তব্য অনুযায়ী, জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ার আগেই বদলির নির্দেশ পেয়ে যান প্রিয়াঙ্কা হাটি । কিন্তু একাধিকবার যে মৌখিক অভিযোগ জানানো হয়েছে, তার জেরেই কি বদলি ? অভিযোগের ভিত্তিতে কি জেলাশাসক কাশীপুরের বিডিওকে ডেকে জানতে চেয়েছিলেন ? নাকি অপরপক্ষের থেকে কোনও কথাই শোনা হয়নি ? এমন বেশ কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, যার উত্তরগুলিতে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে ।

শুধু প্রিয়াঙ্কা হাটিই নন । এর আগেও একাধিকবার বিডিও বদলি হয়েছেন কাশীপুরে । প্রত্যেকবারই একই অভিযোগ শোনা যায় । প্রিয়াঙ্কা হাটির আগে কাশীপুর ব্লকের দায়িত্বে ছিলেন শাশ্বতী দাস । তাঁরও আগে ছিলেন সুদেষ্ণা দে মৈত্র । শোনা যায়, তাঁদের সঙ্গেও নাকি সভাপতির খুব একটা বনিবনা ছিল না । সেই কারণেই হোক বা অন্য কোনও কারণে, শেষ 9 মাসে তিন জন বিডিওর বদলির নির্দেশ এসেছে কাশীপুরে ।

পরিসংখ্যান বলছে, শেষ তিন বছরে 6 জন বিডিওর বদলি হয়েছে কাশীপুর থেকে । তাঁদের মধ্যে 4 জনেরই বদলি হয়েছে শেষ দুই বছরে । আপাত ভাবে এই পরিসংখ্যান বেশ অস্বাভাবিক বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের ।

9 মাসে 3 বিডিও বদলি... কী চলছে কাশীপুরে ?

যদিও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুপ্রিয়া বেলথরিয়া তাঁর এই অভিযোগের মধ্যে কোনওরকম রাজনৈতিক অভিসন্ধি ছিল না । ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দেন । বললেন, "বিডিও বদলি করা তো আর আমার পক্ষে সম্ভব নয় ! উনি কিছু ক্ষেত্রে সরকারি টাকার অপব্যবহার করেছেন । আমি জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলাম । আর এর আগে যে বিডিও বদলি হয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আমার কোনও খারাপ সম্পর্ক ছিল না । তবে ব্লকের অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে তাঁর ব্যবহার ভাল ছিল না । আর বাদ বাকি বিডিওদের বদলি নির্বাচনের কারণে এবং নির্বাচনের ফল খারাপের জন্য হয়ে থাকতে পারে ।"

অন্যদিকে কাশীপুর ব্লক থেকে সদ্য বদলির চিঠি পাওয়া প্রিয়াঙ্কা হাটির বক্তব্য, "উনি (সুপ্রিয়া বেলথরিয়া) যেটিকে আমার সম্বর্ধনা সভার অনুষ্ঠান ভাবছেন, সেটি আসলে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী ডাকা একটি বৈঠক । আর পাঁচটা প্রশাসনিক বৈঠকের মতো সেই বৈঠকেও আগতদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল মাত্র । এই এটিকে যদি টাকার অপচয় করা বলা হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই ।" প্রিয়াঙ্কা হাটির জানান, বৈঠকে আগতদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করাটা তাঁর কাছে একটি ভদ্রতা । তিনি যা করেছেন, সরকারি নিয়ম মেনেই করেছেন । তাঁর আরও বক্তব্য, "আমি এখনও বদলিই হলাম না । তাহলে কীসের সম্বর্ধনা সভা !"

যদিও সুপ্রিয়াদেবীর বক্তব্য, বৈঠক যদি হয়েই থাকে তাহলে প্রমাণ দেওয়া হোক । বৈঠকে কোনও জনপ্রতিনিধি ছিল না । সারাদিন নাকি অফিস বন্ধ করে নাচ-গান চলেছে । সুপ্রিয়াদেবীর কাছে নাকি তার প্রমাণও রয়েছে ।

তাহলে কি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার জন্যই বদলি ?

প্রিয়াঙ্কা হাটি অবশ্য নিজে এমন কোনও অভিযোগ করতে চাইছেন না । বিডিওর বক্তব্য, "বদলিটা আমাদের সরকারি চাকরির একটি অংশ । সেই অনুযায়ীই বদলি হয়েছে । এই নিয়ে আমি এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাই না ।"

এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নিতে ফোন করা হয়েছিল জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি গুরুপদ টুডুর সঙ্গে । তিনি অবশ্য কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, তা পর্যালোচনা করে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন । বলেন , "কেন এমন হচ্ছে বা এমন যাতে না হয় সেই জন্য জেলাশাসক ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব ।"

এই ঘন ঘন বিডিও বদলি নিয়ে পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় । কিন্তু তিনি উত্তর দেননি । হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজও করা হয় । তারও উত্তর মেলেনি । তবে যে যাই বলুক না কেন, ঘন ঘন বিডিও বদলি নিয়ে যে কাশীপুর এখন চর্চার কেন্দ্রবিন্দু তা বলাই যায় ।

Last Updated : Jul 13, 2021, 5:31 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details