কাশীপুর (পুরুলিয়া), 13 জুলাই : তিন জন বিডিও বদলির অর্ডার । তাও আবার মাত্র 9 মাসের ব্যবধানে ! আজ্ঞে হ্যাঁ । ঠিকই শুনেছেন । বিডিওদের ঘন ঘন বদলিটাই যেন এখন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরুলিয়ার কাশীপুরে । কিন্তু কেন বারবার বিডিও বদলি হচ্ছে কাশীপুরে ? কেন কোনও বিডিও টিকতে পারছেন না এখানে ? এরকম নানা প্রশ্ন ইতিমধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করেছে ।
কাশীপুর ব্লক । আদ্রা থেকে প্রায় নয় কিলোমিটারের রাস্তা । পঞ্চায়েত সমিতি এখানে তৃণমূলের । কাশীপুরে কান পাতলেই কানাঘুষো শোনা যায়, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গে তালে তাল না মিলিয়ে কাজ করতে না পারলেই নাকি বদলি । কাশীপুরের বিডিও হয়ে থাকতে হলে পথ একটাই -- সভাপতির মন জুগিয়ে চলতে হবে ! নাহলেই কোপ । রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নাকি বদলি করে দেওয়া হচ্ছে বিডিওদের ।
সম্প্রতি কাশীপুরের বিডিও পদ থেকে বদলির নির্দেশ পেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা হাটি । কিন্তু নতুন যাঁকে তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি এখনও কাশীপুরে এসে না পৌঁছানোর কারণে প্রিয়াঙ্কা হাটিই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন । নতুন বিডিও এলে, তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন কাশীপুর ব্লকের ।
এদিকে কিছুদিন আগেই পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের কাছে বিডিওর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুপ্রিয়া বেলথরিয়া । আর তার দিন কয়েকের মধ্যেই বদলির নির্দেশ হাতে পেয়ে যান প্রিয়াঙ্কা হাটি ।
জেলাশাসকের কাছে কী এমন অভিযোগ করেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ?
সুপ্রিয়া বেলথরিয়ার অভিযোগ, পুরুলিয়ার বিডিও প্রিয়াঙ্কা হাটি সরকারি টাকার অপব্যবহার করছেন । আর সেই কারণেই নাকি তিনি একাধিকবার জেলাশাসকের কাছে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছেন । পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বক্তব্য, তাতে কাজ না হওয়াতেই নাকি তিনি লিখিত অভিযোগ জানাতে বাধ্য হন । প্রথমে 6 জুলাই । তারপর আবার 9 জুলাই । দুটি লিখিত অভিযোগ জমা করেন জেলাশাসকের কাছে ।
আর প্রিয়াঙ্কা হাটি কাশীপুরের বিডিও পদ থেকে বদলি নির্দেশ পান 5 জুলাই । অর্থাৎ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বক্তব্য অনুযায়ী, জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ার আগেই বদলির নির্দেশ পেয়ে যান প্রিয়াঙ্কা হাটি । কিন্তু একাধিকবার যে মৌখিক অভিযোগ জানানো হয়েছে, তার জেরেই কি বদলি ? অভিযোগের ভিত্তিতে কি জেলাশাসক কাশীপুরের বিডিওকে ডেকে জানতে চেয়েছিলেন ? নাকি অপরপক্ষের থেকে কোনও কথাই শোনা হয়নি ? এমন বেশ কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, যার উত্তরগুলিতে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে ।
শুধু প্রিয়াঙ্কা হাটিই নন । এর আগেও একাধিকবার বিডিও বদলি হয়েছেন কাশীপুরে । প্রত্যেকবারই একই অভিযোগ শোনা যায় । প্রিয়াঙ্কা হাটির আগে কাশীপুর ব্লকের দায়িত্বে ছিলেন শাশ্বতী দাস । তাঁরও আগে ছিলেন সুদেষ্ণা দে মৈত্র । শোনা যায়, তাঁদের সঙ্গেও নাকি সভাপতির খুব একটা বনিবনা ছিল না । সেই কারণেই হোক বা অন্য কোনও কারণে, শেষ 9 মাসে তিন জন বিডিওর বদলির নির্দেশ এসেছে কাশীপুরে ।