সিপিআই থেকে তৃণমূল, রাজনীতির অলিন্দে বরাবরই সক্রিয় এগরার বাজিওয়ালা ভানু এগরা (পূর্ব মেদিনীপুর), 17 মে: অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘিরে হইচই পড়ে গিয়েছে বাংলাজুড়ে ৷ সেই ঘটনাতেই উঠে এসেছে কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানুর নাম ৷ পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার ওই খাদিকুল গ্রামেই তাঁর বাড়ি ৷ এলাকায় যিনি পরিচিত ভানু বাগ বাজিওয়ালা নামে ৷ কারণ, তিনিই ওই অবৈধ বাজি কারখানার মালিক ৷
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে কে এই ভানু বাগ ? স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ ৷ তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন তুলে ধরলেন ভানু বাগের অতীত ৷ তাঁদের বক্তব্য, ভানু বাগ বরাবরই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ৷ বাম আমলে সিপিআই নেতা ছিলেন ৷ পরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন ৷ 2013 থেকে 2018 সাল পর্যন্ত তিনি এগরা-1 ব্লকের সাহাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন ৷
স্থানীয়দের দাবি, 2011 সালের পর থেকেই তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি অনেক বেড়েছে ৷ সঙ্গে বেড়েছে ব্যবসার বহর ৷ বাম আমলে তিনি ছিলেন ছোট বাজি ব্যবসায়ী ৷ তখন বাড়ি থেকেই ব্যবসা চালাতেন ৷ কিন্তু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর স্থানীয় একটি জমি দখল করেন ৷ সেখানেই শুরু করেন নতুন কারখানা ৷ সেখানে যাওয়ার রাস্তা করান ৷ সেই পিচ রাস্তা তৈরিতে তিনি রাজনৈতিক প্রভাবও খাটিয়েছিলেন ৷ পুকুর কাটান ৷ ওই পুকুরেই বাজি তৈরির পর পরীক্ষা করা হত ৷
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধিতে তাঁর পরিচয় ছড়িয়ে বাংলা ছাড়িয়ে ওড়িশা পর্যন্ত ৷ তাঁকে ভানু বাগ বাজিওয়ালা নামেই চেনেন সবাই ৷ পুজোর সময় থেকে বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর কারখানায় বাজি কিনতে অনেকেই আসতেন ৷ অনেকেই সেখানে বাজি ফাটিয়ে পরীক্ষা করে দেখতেন ৷
স্থানীয় একটি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর থানার বাধিয়া এলাকা থেকে দুই যুবক বাজি সংগ্রহ করতে আসেন ভানু বাগের কারখানায় । বাজি নেওয়ার পরে পাশের মাঠে তা পরীক্ষা করতে শুরু করেন ওই দুই যুবক । সেই সময় বাজি ফাটার পরে আগুনের অংশ এসে কারখানায় পড়তেই বিষ্ফোরণ ঘটে ৷
তবে ভানু বাগের কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা নতুন নয় ৷ বছর পনেরো আগে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল ৷ তখন তাঁর কারখানা বাড়িতেই ছিল ৷ ওই দুর্ঘটনায় তাঁর ভাই বাদল বাগের মৃত্যু হয় ৷ তার পর তৃণমূল ক্ষমতায় আসতেই বাড়ি থেকে 400 মিটার দূরে এই কারখানা তৈরি করেন ৷ ভানু ও তাঁর ছোট ভাই বাদলই এই বাজির ব্যবসা শুরু করেছিলেন ৷ বাদলের মৃত্যুর পর একাই সেই কাজ করতেন ৷ তাঁর মেজ ভাই কালী বাগ দিনমজুরের কাজ করেন ৷
এখন প্রশ্ন হল, যাঁকে ঘিরে এত হইচই, সেই ভানু বাগ গেলেন কোথায় ? স্থানীয়দের দাবি, বিস্ফোরণে ভানুও ঝলসে যান । ঝলসে যাওয়ার পর মাঠ দিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়িতে পৌঁছান তিনি । সেখান থেকে বাদাম জঙ্গল দিয়ে ওড়িশার দিকে রওনা দেন ৷ তাঁর সন্ধান পুলিশ শুরু করেছে ৷ এখন দেখার তাঁকে কত তাড়াতাড়ি পাকড়াও করতে পারে পুলিশ !
স্থানীয়রা বলছেন, ভানু বাগের কারখানায় বিস্ফোরণ নতুন নয় ৷ এর আগে চারবার বিস্ফোরণ হয়েছে ৷ অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে ৷ প্রতিবারই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বেঁচে গিয়েছেন তিনি ৷ এবারও কি তাই হবে ? প্রশ্ন ঘুরছে খাদিকুলের বাসিন্দাদের মুখে মুখে ৷ তাছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা শিখু সিংহ নিহতদের পরিবারকে সুবিচার পাইয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন ৷ আবার স্বপন মাইতি নামে স্থানীয় যুবকের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ঘটনাস্থল আসুন ৷ নিহতদের পরিবারের জন্য সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করুন ৷
আরও পড়ুন:এগরা বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে ভিনরাজ্যের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ সিআইডির