নন্দীগ্রাম, 14 মার্চ : নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের 13 বছর পর খুনিদের শাস্তির দাবিতে মিছিল কর্মসূচি করলেন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী । আজ সন্ধে নাগাদ নন্দীগ্রাম বাজার থেকে মিছিলের সূচনা করেন শুভেন্দু । কর্মসূচি ঘোষণা হতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর । প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে 2007 সালের সেই ঘটনার দোষীদের শাস্তির দাবিতে এখন কেন জ্যোতি মিছিল? তাহলে কী ঘরে বাইরে চাপের মুখে এখন নন্দীগ্রাম আন্দোলন কেই ঢাল করে বাঁচতে চাইছেন শুভেন্দু অধিকারী? পূর্বে "দিদিকে বলো" কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি শুভেন্দুবাবু ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য নেতাদের । সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত হওয়া "বাংলার গর্ব মমতা" কর্মসূচিতেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অনুপস্থিত থেকেছেন শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী, তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী ও কাঁথি পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন্দু অধিকারী । যে কারণে দলীয়ভাবে অধিকারীদের গড় হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভায় "বাংলার গর্ব মমতা" কর্মসূচি পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি তথা বিধায়ক অখিল গিরির ছেলে যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুপ্রকাশ গিরিকে । তারপর থেকেই রাজনৈতিক মহলের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অধিকারী পরিবারের দূরত্বে তৈরি হওয়ার ছবিটা । তাঁদের মতে ঘরে-বাইরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন শুভেন্দুবাবু ৷ তাই নিজের অস্তিত্ব বাঁচানোর তাগিদেই ফের নন্দীগ্রাম আন্দোলনের আবেগকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকে থাকার জন্যই ঘটনার 13 বছর পর ফের জ্যোতি মিছিল করার কর্মসূচি নিয়েছেন তিনি ।
প্রসঙ্গত, 2007 সালের 14 মার্চ নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব করার জন্য তৎকালীন বাম সরকার জমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করে । সে সময় নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় । পুলিশের গুলিতে প্রাণ যায় আন্দোলনকারীদের । তারপর থেকেই নন্দীগ্রামে এই দিনটিতে ভাঙাবেড়ায় শহিদ মিনারে শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতা শুভেন্দু অধিকারী । আজ সোনাচূড়ায় শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দ্রুত খুনিদের শাস্তির দাবি জানান তিনি ৷
তিনি বলেন, "আজকে আমরা একটা নতুন কর্মসূচি নিয়েছি । জ্যোতি মিছিল করব, প্রজ্বলিত দীপশিখা নিয়ে এই মিছিল হবে । সন্ধ্যার মুখে নন্দীগ্রাম বাজারে এই মিছিল করা হবে ৷ মিছিলে অংশগ্রহণ করবে পাঁচ হাজার মানুষ । শহিদদের স্মরণ ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে এই মিছিল করা হবে । নন্দীগ্রাম গণহত্যার তদন্তকারী সংস্থা CBI-র বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, "যদি 84 সালের শিখ দাঙ্গার এতদিন পরে মামলা পুনরায় শুরু করে দোষীরা শাস্তি পায় । যদি 96 সালের ভাগলপুর দাঙ্গার শাস্তি হতে পারে তাহলে নন্দীগ্রামের গণহত্যার দোষীরা বাইরে ঘুরে বেড়াবে কেন? যারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গুলি করল সুপ্রিয় জানা, বাসন্তী করদের ৷ তাঁরা পালাচ্ছিল তাঁদের পিঠে গুলি করা হয়েছে । যা ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে । যদি আন্দোলনকারীরা আক্রমণ করে থাকে তাহলে ওদের বুকে গুলি লাগত, পিঠে কেন? 45 জন মেয়েকে ধর্ষণ করেছে । সেই সময় নন্দীগ্রামের ভাঙাবেড়া থেকে দুই কিলোমিটার দূরে গোকুননগরে কোন মহিলার সম্মান রেখেছে? আঙ্গুর দাস ও কবিতা দাসকে মায়ের সামনে... (ধর্ষণ করেছে) মুখে বলা যাবে না । রাধারাণী আড়িকে কতবার করেছে । 2007 এর 15 মার্চ করেছে 2008 এর পঞ্চায়েত ভোটের আগে করেছে । বিচার তো চাইতেই হবে 84 সালের শিখ দাঙ্গার যদি বিচার হয় মামলা পুনরায় চলতে পারে তাহলে নন্দীগ্রামের ক্ষেত্রে হবে না কেন?"