নন্দীগ্রাম, 10 নভেম্বর : শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে বঙ্গ রাজনীতিতে ৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায়, দল নিয়ে সন্তুষ্ট নন শুভেন্দুবাবু ৷ বারবার কথার প্যাঁচে সেকথা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি ৷ আজ ফের নন্দীগ্রামে শহিদ স্মরণসভায় নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা উস্কে দিলেন তিনি ৷ ভাষণ শেষ করার সময় তাঁর মুখে শোনা যায়, ‘‘ জয় বাংলা, ভারতমাতা জিন্দাবাদ ৷’’
গোকুলনগর হাইস্কুলের সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "খুব ভালো লাগছে । 13 বছর পরে নন্দীগ্রামের কথা মনে পড়েছে । খুব ভালো লাগছে ।" এই ভাষাতেই প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে দলকে খোঁচা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী । রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শুভেন্দুবাবু এই মন্তব্য তৃণমূলের পৃথক শহিদ দিবসকে খোঁচা দিয়ে করেছেন । প্রতিবছরের মতো শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে এবারও ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি 10 নভেম্বর শহিদ স্মরণ সভার আয়োজন করে ।
2007 এর রক্তাক্ত সূর্যোদয় কাণ্ডের স্মরণে প্রতিবারই সভার আয়োজন করে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি । তাতে তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা হাজির থাকলেও দলীয় কোনও সংযোগই থাকত না । কিন্তু 13 তম বছরে এই কর্মসূচিতে নতুন মাত্রা জুগিয়েছে তৃণমূলের শহিদ সভার কর্মসূচি । নন্দীগ্রামে যার প্রচলন এই প্রথম । আজ, বিকেলেই নন্দীগ্রামের হাজরাকাটায় ফিরহাদ হাকিমসহ একগুচ্ছ নেতার উপস্থিতিতে সংগঠিত হয় তৃণমূলের শহিদ সভা । তার আগেই ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির শহিদ স্মরণের মঞ্চে সেই কর্মসূচিকে আকারে-ইঙ্গিতে বিঁধলেন শুভেন্দু অধিকারী । বললেন, "খুব ভালো লাগছে 13 বছর পর নন্দীগ্রামের কথা মনে পড়েছে । খুব ভালো লাগছে । 7 জানুয়ারি সূর্য ওঠার আগে বন্ধুরা আসবেন তো ? ভোটের আগে আসছেন । ভোটের পরেও তো আসতে হবে ।"
জল্পনা উস্কে শুভেন্দুর বক্তব্যে , ‘‘ভারতমাতা জিন্দাবাদ’’ আজ সভার শুরুতেই শুভেন্দু রক্তঝরা দিনের কথা স্মরণ করেন । সম্মান ও শ্রদ্ধা জানান শহিদ পরিবারের মানুষদের । তারপরই তুলে ধরেন শহিদ দিবসের সূচনার কথা । তিনি বলেন, ‘‘ 4 জানুয়ারি আমরা ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেছিলাম ৷ রক্তাক্ত সূর্যোদয়কে জনগণ অস্তমিত করেছিল ৷ তারপর মিটিংয়ে অনেকেই বলেছিলেন, ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি রাখার দরকার নেই ৷ কিন্তু আমরা এই ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি বা BUPC নামটাকে সম্মান দিয়েছিলাম ৷ তখন আমরা ঠিক করেছিলাম সারাবছর আমরা BUPC করব না । BUPC -র নামে ভোটে লড়ব না । ভোটের সময় এই ব্যানারে ভোট চাইব না । কিন্তু, ওই দিনগুলি আমরা প্রতি বছর ওই ব্যানারে শ্রদ্ধা জানাব । এটা আজকে নতুন কিছু নয় ।’’
আজকের মঞ্চে শুভেন্দুবাবু নন্দীগ্রামের লড়াইয়ে রাজনীতির ছোঁয়া লাগতে না দেওয়ার শপথবাক্য পাঠ করেন । বলেন, ‘‘আমি সেদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে এসে লড়াই করেছিলাম । এই আন্দোলন শুভেন্দু অধিকারীর আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন কোনও ব্যক্তির আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের আন্দোলন । সম্মিলিত শক্তির আন্দোলন । আজকে আমাদের লোকেরা যখন তেঁতুলতলা, কলাগাছিয়া, কামারদায় ঢুকেছে, ভাঙাবেড়িয়া পেরিয়ে বটতলা পেরিয়ে গেছে, আমি ফোন করে ফিরিয়ে এনেছি । বলেছি, তোমরা ওখানে যাচ্ছ কেন ? এ তো রাজনৈতিক এলাকা দখলের লড়াই নয় । তোমাদের জমি রক্ষার লড়াই । এ লড়াইয়ে যদি জিততে হয় তবে নন্দীগ্রামে মানব প্রাচীর করে জিততে হবে । এটাই ছিল আমার কথা ।"
তবে সভায় নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ফের জল্পনা উস্কে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী । বলেন, "সংবাদমাধ্যমের লোকেরা, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অপেক্ষা করে আছেন, শুভেন্দু অধিকারী কী করবেন ! আমি রাজনীতির প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজনীতির কথা বলব । আমার মত কী, পথ কী, আমার চলার পথ কোথায় স্বাচ্ছন্দ্য, কোথায় গর্তে ভরা, কোথায় আমি হোঁচট খাচ্ছি, কোন রাস্তা দিয়ে আমি সহজে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারব, পায়ে হোঁচট খাব না সেটা আমি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে বলব । এই প্ল্যাটফর্মে বলব না । এই পবিত্র প্ল্যাটফর্মে আমি রাজনীতি করি না । এবং ভবিষ্যতেও করব না ।" তবে বক্তব্য শেষ করার সময় শুভেন্দু অধিকারীর গলায় শোনা যায়, ‘‘ ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি জিন্দাবাদ । ভারত মাতা জিন্দাবাদ ।" যা নিয়ে ফের রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে ৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূল ও শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে এতদিন পারস্পরিক লড়াই সীমাবদ্ধ ছিল শব্দের খেলায় । কিন্তু নন্দীগ্রামের পৃথক দুই শহিদ সভাকে ঘিরে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তৃণমূল-শুভেন্দু সংঘাত । যা নিয়ে এখন চলছে রাজনৈতিক চর্চা । বারবারই নিজেকে নন্দীগ্রামের আপনজন পরিচয় দিয়ে এসেছেন শুভেন্দু অধিকারী । আজ ফের সেকথা স্মরণ করান তিনি । বলেন, ‘‘এখানকার প্রধান ছিলেন অশোক মণ্ডল । তাঁকে মেরে হাত-পা ভেঙে ফেলে দিয়ে যাওয়া হয়েছিল । আমি তাঁকে উদ্ধার করে নন্দীগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম । এগুলি 2003 সালের গল্প । আমি নতুন লোক নই ৷ চেনা বামুনের পৈতা লাগে না ।"
আজকের সভায় শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী, বিধায়ক ফিরোজা বিবি, বনশ্রী মাইতি, রণজিৎ মণ্ডল, জেলা পরিষদের কর্মাধ্য়ক্ষ মধুরিমা মণ্ডল, আবু তাহেরসহ তৃণমূল ও ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতৃত্ববৃন্দ ।