তমলুক, 21 মে : সুপার সাইক্লোন আমফানের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত পূর্ব মেদিনীপুর । গাছ পড়ে জেলায় এখনও পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে । আহত কমপক্ষে 10 জন । নন্দীগ্রাম, কাঁথি, হলদিয়া-সহ ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ব্লক । ক্ষতি হয়েছে চাষের জমিরও । গাছ ভেঙে পড়ায় অবরুদ্ধ একাধিক রাস্তা । যান চলাচল বন্ধ রয়েছে রাজ্য সড়কেও ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুরে বৃষ্টি ও ঝড় শুরু হয় । যার জেরে সন্ধের দিকে ভগবানপুরের মুগবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ছবি সিটের বাড়ির উপর গাছ ভেঙে পড়ে । তাতেই মৃত্যু হয় তাঁর । আহত হন তাঁর ছেলেও । বর্তমানে তিনি স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ।
হলদিয়ার সুতাহাটার মহম্মদপুর গ্রামে টালির চালে গাছ পড়ে মৃত্যু হয়েছে দুই ভাইয়ের । নাম রঞ্জিত সিং(18) ও প্রসেনজিৎ সিং(16) । এছাড়াও, হলদিয়ার HPL-এর কাছে একজনের মৃত্যু হয়েছে । পাশাপাশি দেউলপোতায় একজন ও রামনগর 2 নম্বর ব্লকে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে ।
বাড়ির উপর খুঁটি ও গাছ ভেঙে পড়ায় হলদিয়া, নন্দীগ্রাম ও তমলুকে বহু মানুষ আহত হয়েছেন । জেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় কয়েকশো খুঁটি ভেঙে পড়েছে । বর্তমানে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জেলার একাধিক জায়গা ।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাইক্লোনের আগেই প্রায় 90 শতাংশ বোরো ধান তুলে ফেলেছিলেন চাষিরা । গতকাল ঝড়ের প্রভাবে বাকি 10 শতাংশ পুরোপুরি মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে । এগরা, পাঁশকুড়া, পটাশপুর-সহ বেশ কিছু ব্লকের প্রায় 16 হাজার হেক্টর জমিতে চিনা বাদাম চাষ হয় । ঝড়ের দাপটে ও বৃষ্টিতে জল জমায় প্রায় সবটাই নষ্ট হয়েছে । রামনগর, মহিষাদল, তমলুক, ময়না ও নন্দকুমার ব্লকের 6 হাজার হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । পাশাপাশি জেলায় নয় হাজার হেক্টর ফুল চাষের জমি ও 20 থেকে 25 হাজার হেক্টর সবজি চাষের জমি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত ।
আমফানের দাপটে নষ্ট চাষের জমি জেলা কৃষি বিভাগের সহ-অধিকর্তা মৃণালকান্তি বেরা জানিয়েছেন, ঝড়ের দাপটে গোটা পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় সবজি, ফুল, পান ও মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে । ব্লকগুলি থেকে যে রিপোর্ট উঠে আসছে তাতে কৃষকদের প্রায় সমস্ত ফসল নষ্ট হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে । প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, সমগ্র জেলায় কৃষকদের 100 কোটি টাকার উপর ফসল নষ্ট হয়েছে । গোটা জেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে । এছাড়া পূর্ব মেদিনীপুর জেলার 25 টি ব্লকে কয়েক হাজার বাড়ি ভেঙে পড়েছে ।
বর্তমানে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বাড়ি ও রাস্তার উপর ভেঙে পড়া গাছগুলি সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন । সেই সঙ্গে ভেঙে পড়া বিদ্যুতের খুঁটিগুলিও সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে ।