তমলুক, 22 মে : আমফানের দাপটে তছনছ হয়ে গিয়েছে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক এলাকা । সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর ও দুই 24 পরগনায় । ঝড় থেমে গেলেও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারেনি সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলা পূর্ব মেদিনীপুর । জেলার প্রায় 10 হাজারেরও বেশি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা । সজল ধারা প্রকল্পের মাধ্যমে বাসিন্দারা যে পানীয় জল সংগ্রহ করতেন তা বিদ্যুতের অভাবে পুরোপুরি বন্ধ । স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেনারেটর ভাড়া করে কয়েকটি জায়গায় জল পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তা খুবই অপ্রতুল । একদিকে লকডাউনের জেরে খাদ্যের সংকট, অন্যদিকে আমফানের দাপটে বিদ্যুতের অভাবে জল সংকট এই দুই সমস্যায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দাদের জনজীবন । তবে দ্রুত পরিষেবা চালু করতে এলাকায় এলাকায় বিদ্যুৎ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়র, আধিকারিক, কর্মী ও ঠিকাদার সংস্থাগুলি দিনরাত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ।
জেলা প্রশাসন ও বিদ্যুৎ দপ্তর সূত্রে খবর, বুধবার 12টার পর থেকে সাইক্লোনের দাপটে সমুদ্র উপকূলবর্তী কাঁথি, নন্দীগ্রাম, খেজুরি, দিঘা, তমলুক, পাঁশকুড়া-সহ গোটা জেলাতেই কয়েক হাজার বড় বড় গাছ ভেঙে পড়েছে । জেলার অধিকাংশ বিদ্যুতের খুঁটিগুলি গাছ পড়ে ভেঙে গিয়েছে । একাধিক ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে গিয়েছে । যে কারণে পূর্ব মেদিনীপুরের 25টি ব্লকের অধিকাংশ জায়গা বর্তমানে বিদ্যুৎহীন । দিঘা উপকূলে ঝড় আছড়ে পড়ে আমফানের অভিমুখ সাগরের দিকে হওয়ার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে ঢোকে হলদিয়া- নন্দীগ্রামে । ফলে জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় খেজুরি, হলদিয়া, মহিষাদল, তমলুক, পাঁশকুড়া, রামনগর ও এগরা-সহ বেশ কিছু এলাকার । ভেঙে পড়ে একের পর এক বিদ্যুতের খুঁটি । কয়েক হাজার বিদ্যুতের লাইন ছিড়ে পড়ে । কয়েকশো ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে যায় । যে কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় জেলার অধিকাংশ এলাকায় । বিদ্যুতের অভাবে পাম্প হাউস না চলায় তীব্র জল সংকটে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা ।
লকডাউনের জেরে এমনিতেই রোজগার না থাকায় অনেকে সমস্যায় রয়েছে । তার উপর আমফানের দাপটে সবকিছু তছনছ হয়ে যায় । মহিষাদল এলাকার বাসিন্দা রুমা হাজরা অভিযোগ করে বলেন, "আমরা জল সংকটে রয়েছি । সেই সঙ্গে বাজারে তেমনভাবে কিছু খাবার-দাবার পাওয়া যাচ্ছে না । বিদ্যুৎ না থাকায় কোনওভাবেই জল পাচ্ছি না আমরা ।" অন্য এক বাসিন্দা সুদীপা হাজরা বলেন, "বিদ্যুৎ না থাকায় একদিকে যেমন বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে ঠিক তেমনই আমরা তিন দিন ধরে জল পাচ্ছি না । খুবই সমস্যায় রয়েছি ।"
তীব্র জল সংকটে রয়েছেন পাঁশকুড়ার শহর ও গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারাও । পাঁশকুড়া এক নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মঞ্জিরা বিবি বলেন, "ঝড় থেমে যাওয়ার পর এলাকার কাউন্সিলর একবারও এসে দেখে যাননি আমরা কি পরিস্থিতিতে রয়েছি । ঝড়ে বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে । বাড়িতে খাবার নেই । জল পাচ্ছি না বিদ্যুতের অভাবে । আমরা চাই দ্রুত প্রশাসন সমস্যাগুলির সমাধান করুক ।" একই সমস্যায় পড়েছে পাঁশকুড়ার দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও । শেখ সাব্বিরের অভিযোগ, "কাউন্সিলর জেনারেটরের মাধ্যমে জলের ব্যবস্থা করে দেবে বলেও তার ব্যবস্থা করে দেননি । উলটে আমরা জেনারেটর ভাড়া করে এনে জল তোলায় তাঁর দলবল এসে ঝামেলা করে । গ্রামবাসীদের সঙ্গে হাতাহাতি হয় । কোনওরকম সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছি না । খুব সমস্যায় রয়েছি ।"
যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রশাসনের তরফে কাজ চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের সভাধিপতি দেবব্রত দাস । তিনি জানান, "আমফান গোটা জেলাজুড়ে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে । সেই ক্ষতি একদিনে কোনওভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয় । জেলার অধিকাংশ জায়গাতেই বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে । ঝড়ের পর দিন থেকেই বিদ্যুৎ দপ্তরের আধিকারিকরা জোরকদমে কাজ শুরু করেছেন । অল্প ক্ষতি যেসব এলাকায় হয়েছিল, সেখানে ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে । তিন-চার দিনের মধ্যেই গোটা জেলায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি । যেসব এলাকায় জলের সমস্যা হচ্ছে সেই সব এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের তরফে উদ্যোগ নিয়ে ছোটো ছোটো DG ভাড়া করে জল পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি । কোরোনার পর আমফান আমাদের জেলাকে নতুন সংকটে ফেলেছে । আমারা জনজীবন স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছি ।"