পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Specially-Abled Man: একটা পা না থাকলেও সর্বদা মানুষের জন্য বাড়ানো সাহায্যের হাত, তবে অনির্বাণের প্রয়োজন চাকরির - প্রতিবন্ধী

Midnapore handicapped man needs job: একটা পা নেই ৷ তবে মেদিনীপুরের অনির্বাণ বসুর সাহায্যের হাত সর্বদা বাড়ানো থাকে মানুষের জন্য ৷ কিন্তু সংসার চালানোর জন্য তাঁর চাই একটা চাকরি ৷

Specially-Abled Man
Specially-Abled Man

By

Published : Jul 25, 2023, 7:34 PM IST

মেদিনীপুরের অনির্বাণ বসু

মেদিনীপুর, 24 জুলাই: একটা পা নেই ৷ কিন্তু সে জন্য সহযোগিতার হাত বাড়তে কখনও দু'বার ভাবেননি মেদিনীপুরের অনির্বাণ ৷ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই বিনামূল্যে গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়ান মাধ্যমিক পাশ এই ব্যক্তি । সে জন্য কখনও মেলে 10 বা 20 টাকা ৷ তবে অনির্বাণের আক্ষেপ, জীবনে একটা কাজ তাঁর জুটল না, যা দিয়ে তিনি তাঁর প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে স্বচ্ছন্দ্যে জীবন জীবিকা চালাতে পারেন ।

একটা পা নেই ৷ ঠিক মতো কথাও বলতে পারেন না ৷ শরীরিক প্রতিবন্ধকতা 75% ৷ অথচ তা নিয়েই মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েই রেখেছেন 40 বছরের অনির্বাণ বসু ৷ মেদিনীপুর শহরের বাড়মানিকপুরে মাকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন অনির্বাণ । গত 2019 সালে বাবাকে হারিয়েছেন । মা মনামী বসু বর্তমানে হার্ট ও সুগারের রোগী । মায়ের ভাতা আর পেনশনের টাকায় কোনও রকমে চলছে সংসার । আর অনির্বাণের কাজ, দিনে ও রাতে থানায় উপস্থিত থেকে মানুষকে আইনি সাহায্য করা ৷

যাঁরা দূর-দূরান্ত থেকে নিজের অভিযোগ নিয়ে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় ছুটে আসেন, তাঁরা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না কীভাবে অভিযোগ পত্র লিখবেন বা কাকে লিখবেন । তাঁরা থানার বাইরে চক্কর কাটতে থাকেন । আর সেই অভিযোগ লেখাতে সাহায্য করেন অনির্বাণ । যখনই কারওকে সমস্যায় পড়তে দেখেছেন, তখনই তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন । এখন তিনি এতটাই পরিচিত মুখ যে, লোকে রাত বিরেতে তাঁকে ফোন করেন অভিযোগ লিখে দেওয়ার জন্য । কখনও জোটে 10 বা 20 টাকা ৷ আবার কখনও বিনামূল্যেই এই কাজ করে দিতে হয় ৷

এই ভাবেই বছরের পর বছর ধরে থানায়, আদালতে, পৌরসভায় গ্রাহকদের পরিষেবা দিয়ে আসছেন বিশেষ ভাবে সক্ষম অনির্বাণ । একটা পা না থাকায় একটি ক্যাম্প থেকে তাঁকে বিনামূল্যে একটি প্লাস্টিকের ফলস পা দেওয়া হয় । আর সেই প্লাস্টিকের পায়ে ভর দিয়েই নিজের সমস্যাকে দূরে ঠেলে নিত্যদিন কাজ করে চলেছেন অনির্বাণ । তবে তাঁর আক্ষেপ, বহুবার আবেদন নিবেদন জানিয়েও তাঁর একটা কাজ জোটেনি । যদিও এর আগে তিনি গ্রুপ-ডির একটি কাজ পেয়েছিলেন শিক্ষা দফতরে ৷ কিন্তু অভিযোগ, কয়েকজন মুষ্টিমেয় নেতার চক্করে পড়ে তাঁকে সেই কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় রাতারাতি ।

আরও পড়ুন:তিন হাজারি সংসারে নিত্য লড়াই, 85% শারীরিক প্রতিবন্ধকতা; তবু উচ্চমাধ্যমিকে 94 শতাংশ

তবে এখানেই জীবন থেমে থাকেনি । লড়াই চলেছে দীর্ঘ আট বছর ধরে । এই ঝড় জলের রাতেও তিনি তাঁর দায়িত্বে অটল ৷ এরই সঙ্গে থানার পুলিশ আধিকারিকদের গাড়ি থানায় ঢোকানো ও বের করার ক্ষেত্রেও তিনি হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার । সেই গাড়িগুলোকে পাস করিয়ে দেওয়ার বদলে জুটেছে এই থানায় থাকার অনুমতি এবং সঙ্গে আইনি সহযোগিতার পথ ।

অনির্বাণ বসু ইটিভি ভারতকে জানালেন, "বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারটা ভেসে যেতে বসেছিল । সেই সময় কাজের তাগিদে দৌড়ে আসা । মানুষ যা দেয় তাতেই আমি সন্তুষ্ট । তবে অনেক গরিব দুঃখী মানুষ আছেন যাঁরা লিখতে পড়তে জানেন না, কীভাবে অভিযোগ জানাতে হয় সেটা জানেন না । তাঁদের সাহায্য করতে পেরে বেশ ভালোই লাগে । এরইসঙ্গে পৌরসভা, হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন জায়গায় মানুষ অভিযোগ লিখতে না পারলে আমায় ফোন করে এবং আমি রাত বিরেতেও দৌড়ে যাই তাঁদের অভিযোগ লেখার জন্য । জীবনের একটাই দাবি, সরকার আমার দিকে নজর দিক, আমার একটা কাজের ব্যবস্থা করুক ।"

যদিও অনির্বাণের কাজে সাধুবাদ জানিয়েছেন থানায় অভিযোগ করতে আসা মানুষজন । আলপনা বিবি, রোকেয়া খাতুনরা বলেন, "অভিযোগ কীভাবে লিখতে হয় জানতাম না ৷ কিন্তু এই ছেলেটা আমাদের সাহায্য করেছে এবং আমরা ওর সাহায্য পেয়ে খুবই খুশি ।"

এক পুলিশ আধিকারিকের মতে, অনির্বাণের একটা পা যে নেই তিনি কারওকে সেটা বুঝতেই দেন না । আর এই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই তিনি এই থানায় এবং বিভিন্নভাবে সাহায্য করে মানুষের।

ABOUT THE AUTHOR

...view details