মেদিনীপুর, 24 জুলাই: একটা পা নেই ৷ কিন্তু সে জন্য সহযোগিতার হাত বাড়তে কখনও দু'বার ভাবেননি মেদিনীপুরের অনির্বাণ ৷ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই বিনামূল্যে গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়ান মাধ্যমিক পাশ এই ব্যক্তি । সে জন্য কখনও মেলে 10 বা 20 টাকা ৷ তবে অনির্বাণের আক্ষেপ, জীবনে একটা কাজ তাঁর জুটল না, যা দিয়ে তিনি তাঁর প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে স্বচ্ছন্দ্যে জীবন জীবিকা চালাতে পারেন ।
একটা পা নেই ৷ ঠিক মতো কথাও বলতে পারেন না ৷ শরীরিক প্রতিবন্ধকতা 75% ৷ অথচ তা নিয়েই মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েই রেখেছেন 40 বছরের অনির্বাণ বসু ৷ মেদিনীপুর শহরের বাড়মানিকপুরে মাকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন অনির্বাণ । গত 2019 সালে বাবাকে হারিয়েছেন । মা মনামী বসু বর্তমানে হার্ট ও সুগারের রোগী । মায়ের ভাতা আর পেনশনের টাকায় কোনও রকমে চলছে সংসার । আর অনির্বাণের কাজ, দিনে ও রাতে থানায় উপস্থিত থেকে মানুষকে আইনি সাহায্য করা ৷
যাঁরা দূর-দূরান্ত থেকে নিজের অভিযোগ নিয়ে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় ছুটে আসেন, তাঁরা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না কীভাবে অভিযোগ পত্র লিখবেন বা কাকে লিখবেন । তাঁরা থানার বাইরে চক্কর কাটতে থাকেন । আর সেই অভিযোগ লেখাতে সাহায্য করেন অনির্বাণ । যখনই কারওকে সমস্যায় পড়তে দেখেছেন, তখনই তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন । এখন তিনি এতটাই পরিচিত মুখ যে, লোকে রাত বিরেতে তাঁকে ফোন করেন অভিযোগ লিখে দেওয়ার জন্য । কখনও জোটে 10 বা 20 টাকা ৷ আবার কখনও বিনামূল্যেই এই কাজ করে দিতে হয় ৷
এই ভাবেই বছরের পর বছর ধরে থানায়, আদালতে, পৌরসভায় গ্রাহকদের পরিষেবা দিয়ে আসছেন বিশেষ ভাবে সক্ষম অনির্বাণ । একটা পা না থাকায় একটি ক্যাম্প থেকে তাঁকে বিনামূল্যে একটি প্লাস্টিকের ফলস পা দেওয়া হয় । আর সেই প্লাস্টিকের পায়ে ভর দিয়েই নিজের সমস্যাকে দূরে ঠেলে নিত্যদিন কাজ করে চলেছেন অনির্বাণ । তবে তাঁর আক্ষেপ, বহুবার আবেদন নিবেদন জানিয়েও তাঁর একটা কাজ জোটেনি । যদিও এর আগে তিনি গ্রুপ-ডির একটি কাজ পেয়েছিলেন শিক্ষা দফতরে ৷ কিন্তু অভিযোগ, কয়েকজন মুষ্টিমেয় নেতার চক্করে পড়ে তাঁকে সেই কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় রাতারাতি ।