মহিষাদল, 6 জুন: স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে রাজার রাজত্ব, এই সবকিছুর জন্যই ইতিহাসের পাতায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে মহিষাদলের নাম । তবে রাজত্ব চলে গেলেও মহিষাদল রাজবাড়ির শতাব্দীপ্রাচীন রথযাত্রার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে রয়েছে গোটা বাংলায় ৷ রথযাত্রার দিন লাখ লাখ মানুষের সমাগমে গমগম করে গোটা এলাকা । তবে এবছরের জন্য সেসবে ইতি । কোরোনা সংক্রমণ রুখতে ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য এবছর মহিষাদলের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল ৷ মহিষাদল রাজবাড়ীর বর্তমান সদস্য ও মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির যৌথ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । তবে সমস্ত আচার মেনে রাজবাড়ির কুলদেবতা মদন গোপাল জিউ, শ্রীধর জিউ ও জগন্নাথ দেব ঘাঘরা গ্রামে মাসির বাড়ি যাবেন রাজবাড়ীর পালকি চড়ে ।
মহিষাদল রাজবাড়ির ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের সহধর্মিনী ধর্মপ্রাণ রানি জানকি দেবী মহিষাদলের রথের শুভ সূচনা করেছিলেন ৷ এরপর 1804 সালে জানকি দেবীর মৃত্যুর পর অল্পকালের জন্য মতিলাল পাঁড়ে মহিষাদলের রাজত্বভার গ্রহণ করেন । সেই সময় তিনি সুবিশাল একটি ১৭ চূড়োর রথ তৈরি করান । তারপর থেকেই সেই রথেই মহিষাদলের রথযাত্রা উৎসব পালিত হয় । 1852 সালে রাজা লছমন প্রসাদ গর্গ বাহাদুর কলকাতা থেকে চিনা মিস্ত্রি আনিয়ে 17 চূড়ো রথের সংস্কার করান । এরপর 1912 সালে স্থানীয় শিল্পী মাধব চন্দ্র দে রথের সামনের শ্বেত শুভ্র দুটি কাঠের ঘোড়া স্থাপন করেন । যা এখনও রয়েছে । প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে একের পর এক রথের চূড়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ১৭ চূড়ার রথ নেমে এসেছে ১৩-তে ৷ ৩৪টি চাকা বিশিষ্ট মহিষাদল রাজবাড়ির প্রাচীন এই রথের নাম পুরী, মাহেশের পরই জনপ্রিয়তার শিখরে স্থান করে নিয়েছে ।