দিঘা, 28 জুলাই : শুধুই সমুদ্র নয়, দিঘা বলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠত ঝাউয়ের ঘন জঙ্গল এবং বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি । কিন্তু, এখন দিঘার সেই ছবি কোথায় ? দিনের পর দিন কাটা হচ্ছে বালিয়াড়ি । কেটে ফেলা হচ্ছে ঝাউবন । গড়ে উঠছে হোটেল, রিসর্ট । তৈরি হচ্ছে দোকান । যদি এমনটাই চলতে থাকে, সেক্ষেত্রে এর শেষ কোথায় ? আতঙ্কে স্থানীয়রা । জানাচ্ছেন, বালিয়াড়ি কাটা হতে থাকলে আগামীদিনে ভিটেমাটি হারাতে পারেন । বালিয়াড়ি ধ্বংসে চিন্তিত সমুদ্রবিজ্ঞানীরাও । স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনিক মদতে এই কাজ চলছে । উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের কথা ভাবছে না প্রশাসন । একসময় প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বালিয়াড়ি ছিল । এখন মাত্র তিন টুকরো বালিয়াড়ির অস্তিত্ব রয়েছে দিঘায় ।
অতীতের বীরকুলে ঝাউ আর বালিয়াড়ির রূপ দেখে মুগ্ধ হয়েছে বহু মানুষ । প্রশাসনের উদ্যোগে সেই সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটনশিল্পে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয় পাঁচ দশক আগে । গড়ে ওঠে সমুদ্র সুন্দরী দিঘা । সমুদ্র বিজ্ঞানীদের মতে, বালিয়াড়ি হল উপকূলের হৃৎপিণ্ড । আর সেই হৃৎপিণ্ডই ক্ষতবিক্ষত হওয়ায় সঙ্কটে প্রাকৃতিক ভারসাম্য । সৈকত নগরিকে সাজাতে নতুন নতুন হোটেল, রিসর্ট ,পার্ক, রাস্তা এবং যত্রতত্র দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে । দিনের পর দিন বালিয়াড়িকে ধ্বংস করা হয়েছে । অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণের ফলে বর্তমানে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে বালিয়াড়ি ।
আমফানের তাণ্ডবে ভেঙে পড়েছিল একের পর এক ঝাউগাছ । সেই ক্ষত সেরে না উঠতে না উঠতেই ফের কোদালের কোপে ধ্বংস হতে শুরু করেছে পুরোনো দিঘা বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি । এতদিন বালি মাফিয়া থেকে প্রোমোটারের বিরুদ্ধে বালি চুরির অভিযোগ ছিল । এইবার বালিয়াড়ির কেটে ফেলার অভিযোগ উঠল স্থানীয় দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে । যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান উত্তম দাস । জানিয়েছেন, অনেক পরিযায়ী শ্রমিকরা গ্রামে ফিরেছেন । তাঁদের 100দিনের কাজ দেওয়াও উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় প্রশাসনের । তাই পুরোনো দিঘার হাসপাতালে পিছনের খাদালগোবরা মৌজার সুবিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি কেটে ভরানো হচ্ছে ডোবা । উত্তম দাস বলেন, "ওটা বালিয়াড়ি নয় । বালির উঁচু ঢিবি মাত্র । হাসপাতলের পিছনে ডোবা থাকায় প্রচুর মশার উপদ্রব বেড়েছে । তাই ডোবাটিকে ভরানোর জন্য ঢিবি থেকে বালি নেওয়া হচ্ছে । কাজের সমস্ত পরিকল্পনাই প্রজেক্ট আকারে সরকারকে জমা দেওয়া হয়েছিল । তা পাশ হওয়ার পরই আমরা এই কাজ শুরু করেছি । এতে খুব বেশি ক্ষতি হবে না । প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হোক আমরাও চাই না । " এবং বালি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগও সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন তিনি । এইদিকে কর্মরত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বনসৃজনের জন্যই না কি কেটে ফেলা হচ্ছে বালিয়াড়ি ।