নন্দীগ্রাম, 2 জুলাই : আমফানের ক্ষতিপূরণের তালিকায় এলাকার বহু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নাম না থাকলেও ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন পঞ্চায়েত সদস্যার বাড়ির লোক । তাই এবার ক্ষতিপূরণের দাবিতে পঞ্চায়েত সদস্যার বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দারা । নন্দীগ্রাম দু'নম্বর ব্লকের ভেকুটিয়া এলাকার ঘটনা । পরে ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্থানীয়রা ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সামনেও দীর্ঘক্ষণ ধরে বিক্ষোভ দেখান ।
নন্দীগ্রাম দু'নম্বর ব্লকের ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার 28 নম্বর বুথের পঞ্চায়েত সদস্যা মেহেরা বিবি ৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, তাঁর এলাকায় মোট 30 জন সরকারি অনুদান 20 হাজার টাকা করে পেয়েছেন । বাড়ি পাকাপোক্ত হওয়া সত্ত্বেও ওই তালিকাতেই তিনি নাম তুলেছিলেন নিজের শ্বাশুড়ির ।
পঞ্চায়েত সদস্যা মেহরা বিবির শাশুড়ির নামে ক্ষতিপূরণের 20 হাজার টাকা এসেছে, এখবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয়রা ক্ষোভে ফেটে পড়েন । তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা । পরে মেহরা বিবি ক্ষতিপূরণের টাকা প্রধানকে ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করায় বিক্ষোভকারীরা ফের ক্ষতিপূরণের দাবিতে পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করেন । যদিও পঞ্চায়েত অফিস বন্ধ থাকায় দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ চলার পর তা তুলে নেওয়া হয় ।
এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শেখ রবিউল খান অভিযোগ করে বলেন, "পঞ্চায়েত সদস্যা মেহেরা বিবির কাছে আমফানের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম কিন্তু কোনও টাকা পাইনি । আমরা দিনমজুরের কাজ করি । ত্রিপল টাঙিয়ে বাড়িতে রয়েছি তাও আমাদের জন্য কোনও সাহায্য নেই । অথচ পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ির চারজন ক্ষতিপূরণ পেয়েছে । ওরা কমিটির মধ্যে রয়েছে তাই সব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে । আমরা সাধারণ মানুষ সবকিছু থেকেই বঞ্চিত হচ্ছি । গতকাল ফের BDO-র কাছে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়ে এসেছি ।"
আমফানের ক্ষতিপূরণ বাবদ 20 হাজার টাকা পেয়েছিলেন বলে স্বীকার করে নিয়েছেন পঞ্চায়েতের সদস্যা মেহরা বিবি । তাঁর দাবি, দলীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমার শাশুড়ি আলেহারা বিবি ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা পেয়েছিলেন । তিনি বলেন, "আমাদের বাড়ি পাকা হওয়ায় সাধারণ মানুষ যাতে বঞ্চিত না হয় তাই সেই টাকা গতকাল প্রধানের কাছে ফেরত দিয়ে দিয়েছি । বাড়ির আর কোনও সদস্যের নামে টাকা আসেনি । মোট 30 জন ক্ষতিগ্রস্ত টাকা পেয়েছেন ।"
এ বিষয়ে তৃণমূলের নন্দীগ্রাম বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান মেঘনাদ পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "সরকারিভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল দ্রুত তালিকা জমা দেওয়ার । আর তাই সেই তালিকা তৈরি করতে আমাদের নির্ভর করতে হয়েছিল পঞ্চায়েত সদস্যদের ওপর । যে কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে পঞ্চায়েত সদস্যরা নিজেদের নাম সেই তালিকায় নথিভুক্ত করে দিয়েছেন যা অত্যন্ত অন্যায় । পরে দলীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে যখন আমরা তা জানতে পেরেছি সবাইকেই প্রধানের কাছে টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । ওই টাকা BDO-র কাছে ফেরত যাওয়ার পর প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে । সাময়িক ভুল হলেও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় নয় । আমরা ভুল শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করছি ।"