কোলাঘাট, 21 জুন : কয়েকবছর ধরে বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়েছে প্লান্ট থেকে নির্গত ছাই ৷ আস্তরণ পড়েছে এলাকার পুকুরগুলিতে, চাষের জমিতে ৷ পুকুরের মাছ এই দূষণের ফলে প্রায়ই মরে যায় ৷ অন্যদিকে, চাষে ফসলের ফলনও ছাইয়ের দূষণের কারণে ভালো হয় না ৷ এই দূষণ যেভাবে হোক, বন্ধ করা হোক ৷ এমনই আর্জি জানিয়েছেন কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে থাকা বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা ৷
রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে 1984 সালে তৈরি হয়েছিল কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৷ মোট ছ'টি ইউনিটে লাগাতার বিদ্যুতের উৎপাদনের কারণে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন বেশি হতে শুরু করেছে । রাজ্যে বিদ্যুতের ঘাটতি বর্তমানে মিটেছে ৷ কিন্তু, কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কয়লা পোড়া ছাই ও ছাই মিশ্রিত জল নির্গত হওয়ার কারণে দূষণে আক্রান্ত এলাকা । বর্তমানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন তিনটি ব্লকের অধিকাংশ জমি ও পুকুরে ছাই ও দূষিত জল মিশে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে মাছ চাষ ও কৃষিকাজের । ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষক ও মাছ চাষিরা ৷ অবিলম্বে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ নিয়ন্ত্রণের আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা । স্থানীয়দের করা আবেদনের পর স্থানীয় ও রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ শুরু করেছে । কিন্তু কবে দূষণমুক্ত হবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা সে দিকেই তাকিয়ে সকলে ।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিমনি থেকে ছাই নির্গত হওয়ায় প্লান্ট সংলগ্ন কোলাঘাট, শহিদ মাতঙ্গিনী ও পাঁশকুড়া ব্লকের অধিকাংশ জমির উপরই ছাইয়ের স্তর তৈরি হয়েছে । প্লান্টের কয়লা পোড়া ছাই বের করার জন্য যে ক'টি সাইলো প্রজেক্ট রয়েছে তাও ভরতি ৷ এর কারণে মেদিনীপুর ক্যানেল ও বাঁপুর খালে দূষিত জল ফেলা হচ্ছে । আর সেই দূষিত জল চাষের জমি ও পুকুরে মিশে মাছ চাষ ও কৃষিকাজে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে । যে কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার কৃষিকাজ । বর্তমানে শহিদ মাতঙ্গিনী ও কোলাঘাট ব্লকের বহু কৃষক জমিতে ফসল না ফলায় চাষ করাই ছেড়ে দিয়েছেন । তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণের প্রভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের শান্তিপুর, মোহিষগোট, বড়নান এলাকা । কোলাঘাট ব্লকের রাইন, গোপালনগর ও সাগরবাড়েরও একই অবস্থা । ক্ষতিগ্রস্ত পাঁশকুড়া ব্লকের নারায়ণ পাকুড়িয়া, অগড়াজলা-সহ একাধিক গ্রাম ।
কৃষিনির্ভর জেলায় বিস্তীর্ণ জমি কৃষিকাজের অযোগ্য হয়ে ওঠায় ক্ষোভ জমছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে । একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দূষণ নিয়ন্ত্রণের দাবি জানালেও তার কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের । নিজেদের জমি ও পুকুর থাকা সত্ত্বেও চাষ করতে না পেরে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই । শুধু কৃষিকাজে যে প্রভাব পড়েছে তা নয়, বাতাসে ছাই মেশায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির মতো রোগেও ভুগতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা । তবে সমস্যা মেটাতে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে ৷ এমনই জানান শান্তিপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ সেলিম আলি । তিনি জানান, প্লান্টের তিনটি ইউনিট বন্ধ রেখে সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়েছে । সেই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই তিনটি ইউনিটকে গড়ে তোলা হচ্ছে দূষ নিরোধক হিসেবে ।