পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

রাসমণির হাত ধরে মূলস্রোতে ফেরার চেষ্টা গ্রামের পিছিয়ে পড়া মহিলাদের - বর্ধমান

একদিন ডাইনি অপবাদ দিয়ে রাতের অন্ধকারে তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল কয়েকজন গ্রামবাসী ৷ আজ সেই রাসমণি মালিকের হাত ধরে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন গ্রামের অন্য মহিলারা ৷ স্বনির্ভর হয়ে সংসারের হাল ধরছেন ৷

women trying to become Self-reliant by making toys
খেলনা তৈরি করছেন মহিলারা

By

Published : Dec 13, 2020, 2:49 PM IST

Updated : Dec 13, 2020, 3:17 PM IST

বর্ধমান, 13 ডিসেম্বর : ডাইনি অপবাদ দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল । লজ্জায়, অপমানে কোনও উপায় না দেখে আত্মহত্যা করার চিন্তাভাবনাও করেছিলেন ৷ কিন্তু ছেলে-মেয়েদের মুখ চেয়ে পারেননি ৷ পরবর্তীকালে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় নতুন জীবন ফিরে পান । আজ তাঁর হাত ধরে বাঁচার চেষ্টা করছেন বিভিন্নভাবে পিছিয়ে পড়া বেশ কয়েকটি গ্রামের মহিলারা । তাঁদের স্বনির্ভরতার পাঠ দিয়েছেন তিনি ৷

রাসমণি মালিক ৷ বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান শহর সংলগ্ন হাটশিমুল গ্রামে । 2014 সালে তাঁকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে রাতের অন্ধকারে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী । পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে আত্মহত্যা করার কথা চিন্তা-ভাবনাও শুরু করেন । কিন্তু সংসারে ছেলে-মেয়েদের কথা ভেবে সেই ইচ্ছে ত্যাগ করেন ৷ মনের জোরে শুরু করেন বাঁচার লড়াই ৷ আর সেই লড়াইয়ে পাশে পান দেবশিশু ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ।

আজ রাসমণি মালিকের হাত ধরে নতুন করে বাঁচার লড়াই শুরু করেছেন গ্রামের বেশ কয়েকজন মহিলা ৷ গাংপুরের হাটতলায় ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাত ধরে খেলনা তৈরি করে ধীরে ধীরে স্বনির্ভর হচ্ছেন তাঁরা ৷ তাঁদের তৈরি খেলনা একটা কম্পানির মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন বাজার ও মেলায় । গ্রামের পিছিয়ে পড়ার মহিলাদের খুঁজে বের করে তাঁদের স্বনির্ভর করার চেষ্টা করছেন রাসমণি । এই মহিলাদের কেউ কেউ আর্থিক ভাবে পিছিয়ে, কেউ কেউ আবার সংসারে নানাভাবে বঞ্চিত । সংসারের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে তাঁরা পরিশ্রম করে চলেছেন ।

রাসমণির হাত ধরে মূলস্রোতে ফেরার চেষ্টা গ্রামের পিছিয়ে পড়া মহিলাদের
রাসমণি মালিক বলেন, "সমাজের পিছিয়ে পড়া মহিলাদের খুঁজে বের করে তাঁদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি ।" জানান, সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে খেলনা তৈরির কাজ । প্রথমে কয়েকমাস তাঁদের কম্পানিতে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয় । ট্রেনিং শেষে তাঁদের বাকি হাতের কাজ দেখিয়ে দেওয়া হয় । চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রথম শুরু হয়েছিল খেলনা তৈরির কাজ । কিন্তু প্রথম তিন মাস কাজ চলার পরে লকডাউনের জেরে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায় । ফলে মহিলারা ফের সমস্যায় পড়েন ৷ তবে আনলক পর্বে ফের কাজ শুরু হয়েছে । এই মুহূর্তে সেখানে কাজ করছে 15 জন ৷ বলেন, "আজ তাঁরা এখানে নতুন একটা পরিবার পেয়েছেন । হাসিমুখে কাজ করে তাঁরা তাঁদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারছেন ।"বর্ধমানের চৈত্রপুরের বাসিন্দা সাগরিকা বাগ । খেলানা তৈরির কাজ করেন ৷ বলেন, "সংসারে আর্থিক অনটন ৷ আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাতে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়েছি । হাতের কাজ শিখে এখানে খেলনা তৈরি করছি । প্রতিদিন আমরা গড়ে 200 টি করে খেলনা তৈরি করি ।" অপর এক মহিলা ভানু বৈদ্য জানান, তাঁর বাড়িতে তিন মেয়ে ছেলে রয়েছে । মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে । তবে একটা মেয়ে তাঁর কাছেই থাকে । 5 জন নাতি-নাতনি আছে । ছেলে দেখে না । বলেন, "সংসারের হাল টানতে এই বয়সে অন্য কোথাও কোনও কাজ করতে পারিনি । রাসমণির হাত ধরে এখানে কাজ করছি । নতুন পরিবারে ভালোই লাগছে ।"
Last Updated : Dec 13, 2020, 3:17 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details