পূর্ব বর্ধমান, 18 অক্টোবর: বন্যা মানুষের জীবনে আতঙ্ক তৈরি করে ৷ কিন্তু, বন্যা আশার আলো দেখায় রতন নায়েক এবং শঙ্কর ঘোড়ুইদের জীবনে ৷ কারণ, বন্যা হলেই পূর্ব মেদিনীপুরের কেলেঘাই নদীর চরে বেড়ে ওঠে খড়াই ঘাস ৷ অর্থাৎ, কাশফুল ৷ এর নমনীয় এবং মজবুত কাঠি খড়াই ঘাস নামে পরিচিত ৷ যা দিয়ে সেখানকার মানুষ ঝুড়ি, মোড়ার মতো নানান নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করেন ৷ আর এই খড়াই ঘাসের শিল্পই এবার স্থান পেয়েছে বর্ধমান শহরের লাল্টু স্মৃতি সংঘের পুজোয় ৷ তাদের 'সোনার বাংলা' থিমে ৷ এই খড়াই ঘাস দিয়ে তৈরির নানান শিল্পকলা দিয়ে দীর্ঘ দু’মাস ধরে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ এবং তার অন্দরসজ্জা ৷
এবার 62 বছরে পদার্পণ করেছে লাল্টু স্মৃতি সংঘের পুজো ৷ উদ্যোক্তাদের ভাবনা ছিল গ্রামবাংলার শিল্পকে ফুটিয়ে তোলা ৷ তাই কাঁথির এক শিল্পীকে থিমের দায়িত্ব দিয়েছিল তারা ৷ সেই শিল্পীর ভাবনা থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের এই খড়াই ঘাসের হস্তশিল্পীকে দুর্গোৎসবে সামিল করা হয়েছে ৷ তবে, এই খড়াই ঘাসের উৎপাদন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কাছে অভিশাপের সমান ৷ কারণ, একমাত্র বন্যা হলেই এই ঘাস আকারে যেমন বেড়ে ওঠে ৷ তেমনি মজবুত হয় ৷ এমনই জানাচ্ছেন, এই খড়াই ঘাস থেকে নানান শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলায় দক্ষ শিল্পীরা ৷
সাধারণত 15 ফুটের কাছাকাছি বড় হয় এই খড়াই ঘাস ৷ তাঁরা জানাচ্ছেন, আষাঢ় মাসে বর্ষায় যদি কেলেঘাই নদীর জলস্তর বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবেই এই খড়াই ঘাস আকার অনেক বড় ও টেকসই হবে ৷ কিন্তু, নিজেদের পেশার জন্য কখনই বন্যা হোক তা চান না শঙ্কর ঘোড়ুই এবং রতন নায়েকরা ৷ তাই কেলেঘাই নদীর চরে তাঁরা এই কাশফুল চাষ করে থাকেন ৷ যাতে ভালো মানের ও বড় খড়াই ঘাস তৈরি হয় ৷ বারোমাস এই শিল্পীরা খড়াই ঘাস দিয়ে নানান শিল্প ফুটিয়ে তোলেন ৷ ঝুড়ি, মোড়া, ঘর সাজানোর সামগ্রী এমন নানান জিনিস ৷