পুরানো জরাজীর্ণ একটি পাকা বাড়ি ৷ পাঁচিল ঘেরা বাড়িটির কাঠের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেই দেখা যাবে বেশ কয়েকটি ঘর ৷ বাড়ির ঘরগুলো আর পাঁচটা সাধারণ ঘরের মতো ৷ কিন্তু, একটি ঘরে ঢুকলে চমকে উঠবেন আপনি ৷ ঘরের ভেতর রয়েছে একটি বড় সুড়ঙ্গ ৷ এই বাড়ির ঠিক পাশেই রয়েছে একটি মাটির দোতালা বাড়ি ৷ টিনের চালা ও কাঠের পাল্লা রয়েছে বাড়িটিতে ৷
ঠিকানা বর্ধমানের ওয়াড়ি গ্রাম ৷ বর্ধমান শহরের বাঁকুড়া মোড় থেকে খণ্ডঘোষের দিকে 10 কিলোমিটার হেঁটে গেলেই পড়বে এই গ্রাম ৷ গ্রামে রয়েছে একটি স্কুল ৷ স্কুলের পাশ দিয়ে তিন কিলোমিটার গেলেই দেখতে পাবেন বাড়ি দুটো ৷ বাড়ির দুটোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাস ৷ তাই আজও বাড়ি দুটোকে আগলে রাখেন গ্রামবাসীরা ৷ মাটির দোতালা বাড়িটি বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর ৷ পাশের জরাজীর্ণ পাকা বাড়িটি নগেন্দ্রনাথ ঘোষের ৷ এই বাড়ির সুড়ঙ্গেই আত্মগোপন করেছিলেন বিপ্লবী ভগৎ সিং ৷
এই বাড়ি দুটোর ইতিহাস জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ৷ 1929 সালের 8 এপ্রিল ৷ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তখন চরম ব্যস্ততা ৷ ট্রেড ডিসপিউট বিল ও পাবলিক সেফটি বিল নিয়ে সেখানে ভোটাভুটি হবে ৷ দমনমূলক এই বিল পাশ করাতে তৎপর ব্রিটিশরা ৷ পার্লামেন্টের গ্যালারিতে সারি সারি দর্শক ৷ তাদের মাঝেই বসে দুই যুবক ৷ তাঁরাও আর সবার মতো মন দিয়ে দেখছেন পার্লামেন্টের কাজ ৷ ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে যাবেন স্পিকার বিঠলভাই প্যাটেল ৷ তখনই পড়ল বোমা ৷ কেঁপে উঠল পার্লামেন্ট ৷ শোনা গেল ইনক্লাব জিন্দাবাদ স্লোগান ৷ ফাঁকা জায়গায় বোমা ফেলায় কেউ আহত বা নিহত হয়নি ঠিকই ৷ কিন্তু, এই ঘটনা নড়িয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের ভিত ৷ ভগৎ সিং ও বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের এই কর্মকাণ্ড সেদিন দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল ৷ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন দু'জনেই ৷ 1938 সালে জেল থেকে মুক্তি পান বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত ৷
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই হামলার ছক কষা হয়েছিল বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওয়াড়ি গ্রামে ৷ মাটির দোতালা বাড়িটেতে ৷ 18 নভেম্বর 1910 সালে এই গ্রামে জন্মেছিলেন বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত ৷ এখানেই বেড়ে উঠেছিলেন তিনি ৷ এই বাড়িটিই এক সময় ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আতুঁড়ঘর ৷ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একেরপর এক ছক কষা হয়েছিল এই বাড়িতে বসেই ৷ বাড়িটির চার দেওয়াল সাক্ষী রয়েছে সেই কাহিনির ৷