বর্ধমান, 26 ফেব্রুয়ারি : বেপরোয়া গাড়ি চালানো নিয়ে সরকারের তরফ থেকে সর্তকতা জারি করা হয়েছে । সেই নিয়ম কি আদৌ মানা হয় ? ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী 2019 সালে দ্রুত এবং নির্দিষ্ট গতিবেগ অতিক্রম করে অতি দ্রুত যাওয়ার প্রবণতার কারণে মোট দুর্ঘটনার প্রায় 55.7 শতাংশ দুর্ঘটনা এই কারণে ঘটেছে । এছাড়া দ্রুতবেগে গাড়ি চালানো ছাড়াও বেপরোয়া মনোভাবের জেরে ওভারটেকিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে ।
24 ফেব্রুয়ারি বর্ধমানের পালসিট স্টেশন সংলগ্ন দুই নম্বর জাতীয় সড়কে পথ দুর্ঘটনায় 5 জনের মৃত্যু হয়েছে । গুরুতর জখম হয়েছেন 6 জন । এছাড়া 10 দিন আগে বর্ধমানের আলিশা সংলগ্ন দুই নম্বর জাতীয় সড়কে চারজন যাত্রীকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে পিষে দেয় একটি ট্রাক । অন্যদিকে শক্তিগড় এলাকায় জাতীয় সড়কে পথ দুর্ঘটনায় আরও একজনের মৃত্যু হয় । গতকাল জৌগ্রাম এলাকায় 2 নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে । অর্থাৎ গত 10 দিনে জাতীয় সড়কে 11 জনের মৃত্যু হল । স্বভাবতই পরপর মৃত্যুর জেরে জাতীয় সড়ক কার্যত মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে । এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । কিন্তু এত দুর্ঘটনা বাড়তে থাকার পরেও গ্রামবাসীদের উপায় না থাকায় রাস্তার ধারেই বাস ধরার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে । তাঁরা অভিযোগ তুলছেন, পথ নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসন প্রচার চালালেও দুর্ঘটনা কোনওভাবেই কমানো যাচ্ছে না।
সতর্ক পুলিশ, তবু কমানো যাচ্ছে না পথ দুর্ঘটনা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল বিকেলে দু'নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি মূলত একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে ঘটেছে । জানা গিয়েছে, দুই নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় দু'টি ট্রাক আগে পিছনে চলছিল । হঠাৎ সামনের ট্রাকটি ব্রেক কষে দেওয়ায় পিছনে ট্রাকটিও বাধ্য হয় ব্রেক কষতে । সেই সঙ্গে পিছনে থাকা ট্রাকটি পাশ কাটিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করে ।ট্রাকটির বাঁ দিকে মোটর সাইকেল ছিল । ট্রাকে খালাসি না থাকায় ড্রাইভার তাকে দেখতে না পেয়ে ধাক্কা মারে । মোটর সাইকেলটি রাস্তায় পড়ে গিয়ে ট্রাকের তলায় ঢুকে যায় । সেই অবস্থায় ট্রাকটি পালিয়ে যাওয়ায় চেষ্টা করলে প্রথমে একটা সাইকেল ওপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতে বাস ধরতে দাঁড়িয়ে থাকা আটজন যাত্রীকে চাপা দেয় । ঘটনায় 5 জনের মৃত্যু হয় । আরও পড়ুন : নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একের পর এক পথচারীকে ধাক্কা ট্রাকের, বর্ধমানে মৃত 4
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মতে রাস্তার মধ্যে যে ডিভাইডার কিংবা লোহার রেলিং দেওয়া থাকে তার মাঝখান দিয়ে বেশ কিছু এলাকায় অস্থায়ীভাবে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে । এবং দিনে দুপুরে ওই রাস্তা দিয়ে বেশ কিছু পথচারী কিংবা গাড়িচালকেরা রাস্তা পারাপারের জন্য সেই পথ ব্যবহার করেন । ফলে যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায় । এছাড়া সার্ভিস রোড থাকা সত্বেও বাড়তি পথ অতিক্রম করতে না চেয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে লেন ভাঙার একটা প্রবণতা সাধারণ মানুষের মধ্যে কাজ করে ।
বর্ধমান সংলগ্ন পালসিট, জৌগ্রাম এলাকায় জাতীয় সড়কের উপর একের পর এক দুর্ঘটনা, কারণ কী ? গ্রামবাসীদের মতে তারা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়ত করে । জাতীয় সড়কের পাশে বাস ধরার জন্য অপেক্ষা করতে হয় । তাই মাঝে মধ্যেই তাদের দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয় । কিন্তু উপায় না থাকার জন্য তারা বাধ্য হয় ঝুঁকি নিতে ।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের এসডিপিও (দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় সড়কে গত কয়েকদিনে দুর্ঘটনা বেড়েছে। জাতীয় সড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া রোড ইঞ্জিনিয়ারিং ঠিকঠাক নেই। রাস্তার কোথাও কোথাও কাট আউট আছে। মানুষের রাস্তা পারাপার করার জন্য যে ব্যবস্থা থাকা উচিত সব কিছু নেই। তবে খুব দ্রুত গতিতে কেউ যাতে গাড়ি জাতেন চালায় সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখছে পুলিশ।