পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ঘরে মোবাইল নেই, কীভাবে হবে অনলাইন ক্লাস ? - burdwan news

আপাতত 31 জুলাই পর্যন্ত বন্ধ থাকবে রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । এই সময় পড়াশোনায় যাতে কোনও খামতি না থাকে তার জন্য অনলাইন টিউশনের ব্যবস্থা হয়েছে । কিন্তু বাড়িতে নেই স্মার্ট ফোন । ফলে সমস্যায় একাধিক ছাত্রছাত্রী । যার কথা কার্যত মেনে নিচ্ছেন স্কুল শিক্ষক থেকে জেলা প্রশাসন সকলেই ।

বর্ধমানে সমস্যায় ছাত্র-ছাত্রীরা
বর্ধমানে সমস্যায় ছাত্র-ছাত্রীরা

By

Published : Jun 25, 2020, 1:52 PM IST

Updated : Jul 4, 2020, 3:55 PM IST

বর্ধমান, 25 জুন : দিন আনা দিন খাওয়ার সংসার । শিক্ষার চেয়ে এক মুঠো খাবারের চিন্তা তাদের কাছে অনেক বেশি । বাচ্চাদের মুখে ভাত জোগাতে সকাল হলেই মাঠে-ঘাটে কাজে বেরিয়ে পড়েন বাবা-মায়েরা । কেউ কেউ পরিচারিকার কাজেও চলে যান । ফলে সারাদিন আধপেটা খেয়ে দিন চলে বাচ্চাদের । স্কুল থাকলে সেখানে তাদের রেখে নিশ্চিন্ত হতেন বাবা-মায়েরা । খাবারও জুটত একবেলা । কিন্তু কোরোনার জেরে সেসব এখন অতীত । মার্চ মাস থেকে স্কুলের পঠন-পাঠন বন্ধ হওয়ায় এখন পড়াশোনাও শিকেয় উঠেছে । কারণ, তাদের নেই স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার। ফলে হচ্ছে না অনলাইন ক্লাস । এমনই চিত্র দেখা গেছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা, কাটোয়াসহ জেলার বিভিন্ন অংশে।

রাজ্যে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে মার্চের মাঝামাঝি থেকে । লকডাউন শুরু হতেই স্কুল-কলেজের পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যায় । কবে স্কুল-কলেজ খুলবে তা আপাতত অনিশ্চিত । গতকালই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্যে লকডাউনের সময়সীমা বাড়ছে । ফলে 31 জুলাই পর্যন্ত বন্ধ থাকছে স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । এই পরিস্থিতি কীভাবে এবছরের সিলেবাস শেষ হবে ? কীভাবেই বা পড়াশোনা করবে ছাত্র-ছাত্রীরা ? এইসব মাথায় রেখে রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলির পাশাপাশি সরকারি স্কুলও অনলাইনে পঠনপাঠন শুরু করে । সোশাল মিডিয়া অ্যাপ বা হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে চলছে নোটস বিনিময় । ভিডিয়ো কলিংয়ে চলছে ভার্চুয়াল ক্লাস । কিন্তু এর জন্য প্রাথমিকভাবে দরকার ইন্টারনেট ও স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার । কিন্তু যাদের দিন আন্তে পান্তা ফুরোয়, দু'বেলা দু'মুঠো খাবার ঠিকমতো জোটে না তাদের কাছে কোথা থেকে আসবে স্মার্ট ফোন ? কোথা থেকেই বা জুটবে ইন্টারনেটের খরচা ? ফলে মোবাইলের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে এইসব ছাত্র-ছাত্রীরা । যার কথা কার্যত মেনে নিচ্ছেন স্কুলশিক্ষক থেকে জেলা প্রশাসনের সকলেই ।

অনেক ছাত্র-ছাত্রীই বলছে, "স্কুল থেকে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে জানি। কিন্তু কী পড়াশোনা হচ্ছে বুঝতে পারছি না । আমাদের কাছে তো তেমন কোনও ফোন নেই । যাদের কাছে আছে শুধু তারাই পড়তে পারছে । আর কার থেকে মোবাইল চাইব ? কে দেবে কে দেবে না, জানি না । সিলেবাস কী করে শেষ হবে বুঝতে পারছি না । খুবই অসুবিধা হচ্ছে ।" অনেকেই আবার বলছে, আমাদের বাড়িতে তো ফোনই নেই । ক্লাস হচ্ছে যে সেটাই জানি না । আগে তা'ও পড়তে যেতাম, তাই বন্ধুদের সঙ্গে কথা হত। এখন তো কারও সঙ্গে যোগাযোগই করতে পারছি না । আর যাদের মোবাইল আছে, পড়ছে তারাও আর আমাদের কত পড়া দেবে ।

দেখুন কী বলছে পড়ুয়ারা ?

এবিষয়ে স্থানীয় এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুবীরকুমার দে বলেন, "আমাদের স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই দারিদ্রসীমার নিচে রয়েছে । তাদের কারও কাছে মোবাইল ফোন নেই । হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে । তারা জানতেই পারছে না । সকল ছাত্রছাত্রীকে বলা আছে, যারা পড়া নিতে পারছে তারা যেন বাকিদের দিয়ে দেয় । তবে যারা ক্লাস করতে পারছে না তাদের কীভাবে সেই নোট পৌঁছে দেওয়া যায় তার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে ।"

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ হাজরাচৌধুরি বলেন, "অনলাইনের মাধ্যমে পঠনপাঠন চললেও অনেক ছাত্রছাত্রীরই মোবাইল নেই । ফলে সমস্যা তো রয়েছেই । তবুও যথাসম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে ছাত্রছাত্রীরা পিছিয়ে না পড়ে ।"

Last Updated : Jul 4, 2020, 3:55 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details