কলকাতা, 30 অগাস্ট : খাগড়াগড়কাণ্ডে চার বাংলাদেশি ও তিন ভারতীয়কে 10 বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল NIA-র বিশেষ আদালত ৷ বাকিদের মধ্যে ন'জনকে 8 বছরের ও তিন জনকে 6 বছরের সাজা শুনিয়েছেন NIA-এর বিশেষ আদালতের বিচারক । এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে জ়ড়িত থাকা, IPC-র 125 ও 120 B ধারা । আন ল ফুল অ্যাকটিভিটি অ্যাক্টের 17, 18, 20, 17এ, 17 বি, 18এ, 18বি ও 20 নম্বর ধারায় বেআইনি কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে । অন্যদিকে, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় মূল অভিযুক্ত কওসর ও ডালিম শেখসহ অন্য 12 জনের বিচার প্রক্রিয়া চলবে ।
দেখে নিন কাদের কী সাজা হল -
বাংলাদেশের বাসিন্দা রহমতুল্লা, সইদুল ইসলাম, রুবেল ও সাদিক সুমনকে 10 বছরের জেল ও 20 হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে । পাশাপাশি তারিকুল, লাল মহম্মদ ও হাবিবুর ওরফে জুহিদুলকে 10 বছরের জেল ও 20 হাজার টাকা জরিমানার সাজা দিয়েছেন বিচারক । আট বছরের জেল ও 20 হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে আবদুল হাকিম, রিয়াজ়ুল, ওয়াহাব, হাবিবুল, নুরুল হক মণ্ডল, মসিজুল আলি, শাহানুর, গিয়াসউদ্দিন ও আমজ়াদের ।
খাগড়াগড়কাণ্ডে জড়িত দুই মহিলা গুলশানারা বিবি ওরফে রাজ়িয়া, আমিনা বিবি ও এক যুবকের 6 বছরের জেল ও 20 হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে । গুলশানারা ও আমিনা বিবির ক্ষেত্রে অনাদায়ে আরও একবছর জেলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ।
রায় ঘোষণার আগে রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল কথা বলেন দোষী 19 জনের সঙ্গে । শেষবার দোষীদের কথা শোনেন তিনি । NIA-এর আইনজীবী শ্যামল ঘোষ অবশ্য আজ কোনও সওয়াল করেননি । তবে দোষীরা প্রত্যেকেই নানা পারিবারিক কারণ দেখিয়ে কম সাজার আবেদন জানায় বিচারকের কাছে । অনেকেই দাবি করে তারা সমাদজের মূল স্রোতে ফিরতে চায় । বিচারক জানান, মূল স্রোতে ফেরার জন্যই এই সাজা ।
যারা এই মুহূর্তে জেলে রয়েছে তাদের মূল সাজা থেকে সেই সাজার সময় বাদ দেওয়া হবে । যেমন আমিনা ও রাজ়িয়া বিবির ক্ষেত্রে তারা 2014 থেকে সাজা খাটছে তাই তাদের আর 1 বছর জেলে থাকতে হবে ।
2014 সালের 2 অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে । বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দু'জনের । তারা JMB (জামাত-উল মুজাহিদিন ,বাংলাদেশ)-র সদস্য ছিল । ঘটনার তদন্তভার যায় NIA-র হাতে । এই মামলায় 31 জনকে গ্রেপ্তার করা হয় । তালিকায় রয়েছে জামাতের অন্যতম মাথা বোমারু মিজ়ান তথা কওসর ৷ তাকে বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেপ্তার করে NIA ৷ ঘটনায় সর্বশেষ জহিরুল শেখকে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মধ্যপ্রদেশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় । ধৃতদের বিরুদ্ধে বিশেষ NIA আদালতে মামলা চলতে থাকে ৷ বুধবার মামলাটির শুনানিতে 19 জন অভিযুক্ত নিজেদের দোষ স্বীকার করে নেয় ।
খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন হাকিম । বিস্ফোরণের ঠিক আগে শাকিল আহমেদ ও সুবহান শেখের সঙ্গে হাত মিলিয়েই হাকিম খাগড়াগড়ে হাসান চৌধুরির বাড়ির দোতলায় বসে IED তৈরি করছিল । মৃত শাকিলের স্ত্রী গুলশানারা ওরফে রাজ়িয়া । দোষ স্বীকারকারীদের শেষতম গ্রেপ্তারি ছিল বোরহান শেখ । শিমুলিয়ার মাদ্রাসা থেকে 100 মিটার দূরে বোরহানের বাড়ি । বোরহানকে ছ'মাসের চেষ্টায় দু'বার ফস্কে যাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গ্রেপ্তার করে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট থেকে । সেটা 2017 সালের সেপ্টেম্বর । বর্ধমানের শিমুলিয়া মাদ্রাসাকে জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশের জঙ্গি প্রশিক্ষণের ঘাঁটি হিসেবে তৈরি করতে সাহায্য করেছিল সে । শিমুলিয়ায় বোরহানের কাঠের আসবাবপত্রের একটি দোকান ছিল । গিয়াসউদ্দিন মুন্সি নামে আরেকজনের কাজ ছিল বাংলাদেশের JMB নেতারা এলে তাদের আশ্রয় দেওয়া । সস্ত্রীক জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছিল এই গিয়াসউদ্দিন । এছাড়াও মতিউর রহমান বেলডাঙার জঙ্গি ডেরা এবং বোমা কলকারখানা দায়িত্বে ছিল । মতিউরের বাড়ি নদিয়া জেলার কালীগঞ্জের মির্জাপুরে । হাবিবুর রহমান মকিমনগর মাদ্রাসার রাঁধুনি । জঙ্গি প্রশিক্ষণের নানা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিল তার । এছাড়াও ঘটনায় জড়িত ছিল মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের বাসিন্দা আবদুল ওয়াহাব মোমিন ওরফে আহাব । এরা প্রত্যেকেই চোখে ধুলো দিতে একাধিক নাম ব্যবহার করত ।
আজ সব শেষে শ্যামল ঘোষ বলেন, " চারজন বাংলাদেশীকে সাজা দেওয়া হয়েছে । তারা হল সাদিক ওরফে সুমন ওরফে তারিকুল ইসলাম ওরফে রাইহান শেখ, শেখ রহমতুল্লাহ ওরফে সাজিদ ওরফে বুরহান শেখ ওরফে সুরত আলি, হাবিুবর রহমান ওরফে জ়াহিদুল ইসলাম ওরফে জ়াবিরুল ইসলাম ওরফে জ়াফর এবং লিয়াকত আলি প্রামাণিক ওরফে রফিক ওরফে রফিকুল ওরফে মহম্মদ রুবেল ।" এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শেখ রহমতুল্লাহ । তার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ফরাজিকান্দায় । রহমতুল্লাহের স্ত্রী ফাতেমা বেগম JMB-র মহিলা শাখার প্রধান । ভারতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের RAB তাকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে ।