বর্ধমান, 10 সেপ্টেম্বর: দুর্গাপুজোর হাতেগোনা আর কয়েকটা দিন বাকি ৷ একমনে কাজ করে চলেছেন বর্ধমানের মৃৎশিল্পীরা। পাশে সার বেঁধে রাখা আছে বিশ্বকর্মা, দুর্গা ৷ গণেশ, বিশ্বকর্মা পুজো হয়ে গেলেই নাওয়া-খাওয়া মাথায় উঠবে মৃৎশিল্পীদের। এইভাবেই চলে আসছে বছরের পর বছর। এই নিয়মের এখনও কোনও পরিবর্তন হয়নি। আজও বৃষ্টি হলে সেই টিনের ছাউনি, খড়ের চালের ফাঁক দিয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে ঘরে জল ঢোকে। প্রতিমা তৈরির পরে সেটা কোথায় কিভাবে শুকোনো হবে সেই চিন্তায় তাঁদের রাতের ঘুম উড়ে যায়। এইভাবেই দিন চলে। আগেও ছিল এই অবস্থা এখনও তাই। তার সঙ্গে দোসর হয়ে দেখা দিয়েছে করোনা প্যানডেমিক। আগে যদিও বা দু‘-একটা বড় কাজের বরাত পাওয়া যেত, এখন সেটাও মিলছে না। উল্টে প্রতিমার দাম পুজো উদ্যোক্তারা একলাফে চার থেকে পাঁচগুণ কমিয়ে দিয়েছেন। সরকার যেখানে পুজো কমিটিগুলিকে 50 হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সেখানে তাঁদের ভাগ্যে কিছুই জুটছে না। তবুও শিল্পীরা প্রতিমার ভাঙা অংশে প্রলেপ লাগানোর মতো করে আশায় আশায় দিন গুনছেন, সরকার হয়ত এবার তাঁদের দিকে মুখ ফিরে চাইবে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিটি পুজো কমিটিকে 50 হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। সেইসঙ্গে বিদ্যুৎ বিলে 50 শতাংশ ছাড়-সহ একাধিক সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় খুশি পুজো উদ্যোক্তারা। কিন্তু যে মৃৎশিল্পীদের হাত ধরে পুজোর বাজনা বেজে ওঠে সেই মৃৎশিল্পীদের কথা কোনও সরকারই ভাবে না ৷ আক্ষেপ শিল্পীদের । শুধু মৃৎশিল্পী কেন প্যান্ডেল তৈরির জন্য ডেকরেটার্স ব্যবসায়ীদেরও রয়েছে আক্ষেপ। বর্ধমান শহরের খালুইবিল মাঠ, বড়নীলপুর এলাকার পালপাড়া কুমোরটুলি নামে সকলের কাছে পরিচিত । মৃৎশিল্পীদের মতে, প্রত্যেক বছর বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাস থেকেই পুজো উদ্যোক্তারা বায়না দেওয়ার কাজ শুরু করে দেয়। সেইমতো তাঁরাও দুর্গার কাঠামোতে মাটি লেপার কাজ শুরু করেন। কারণ আগে থেকে মাটি লেপার কাজ শুরু না করলে সঠিক সময়ে সেই প্রতিমা ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু গত বছর থেকে পুজো উদ্যোক্তারা বাজেটে এক ধাক্কায় চার-পাঁচগুণ কমিয়ে দিয়েছে। দিন দুয়েক আগে রাজ্য সরকার পুজো উদ্যোক্তাদের 50 হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু মৃৎশিল্পীদের কথা ভেবে কোনও অনুদান দেওয়া হয়নি। তাই সমস্যা রয়েই গিয়েছে শিল্পীদের। সরকারের কাছে তাঁদের আবেদন, যে শিল্পীদের হাত ধরে পুজোর বাজনা বেজে ওঠে সেই শিল্পীদের কথাও সরকার ভেবে দেখুক। মৃৎশিল্পী সমীর পাল বলেন, "কোনও সরকারই আমাদের কথা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে না। দিনে দিনে আমাদের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। আগে যেখানে একটা প্রতিমার গড় দাম ছিল কুড়ি থেকে তিরিশ হাজার টাকা সেই প্রতিমার দাম আজ কমিটিগুলো চাইছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। প্রায় চার থেকে পাঁচগুণ কম। এর ফলে কিভাবে সংসার চালানো সম্ভব। তাই পুজো কমিটিগুলির মতো আমাদের নিয়েও চিন্তাভাবনা করুক সরকার।"