বর্ধমান, 10 জুলাই : কোরোনা রুখতে মার্চ থেকে শুরু হয় লকডাউন ৷ মে মাসে তার মেয়াদ শেষ হলেও দেশের পরিস্থিতি দেখে ফের কয়েকটি রাজ্য লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে ৷ লকডাউনের জেরে চার মাসের বেশি বন্ধ স্কুল কলেজ ৷ কোরোনা সংক্রমণ রুখতে বন্ধ রাখা হয়েছে রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের পঠনপাঠন ৷ ফাঁকা পড়ে রয়েছে খেলার মাঠও ৷ আজ বাচ্চা থেকে বড় সকলেই ঘরবন্দী ৷
পড়াশোনা চালু রাখার জন্য অনলাইন ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার ৷ যে যার বাড়ি বসেই ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারবে ৷ যার দরুণ পড়াশোনার জন্য ভরসা হয়ে উঠছে মোবাইল ৷ যে মোবাইল থেকে শিশুদের দূরে রাখার চেষ্টা করা হত, পড়াশোনার তাগিদে সেই মোবাইলই বর্তমানে ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দিচ্ছেন বাবা-মায়েরা ৷ পড়াশোনা থেকে বিনোদন, সবেরই ভরসা মোবাইল ৷ কিন্তু, সারাদিন মোবাইল ব্যবহার করায় আসক্তিও বাড়ছে সকলের ৷ আর তাতেই শুরু চিন্তার ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু গেম খেলা নয়, দীর্ঘক্ষণ ধরে মোবাইলে পড়াশোনা বা অন্য কারণে ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করলেও শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়ে থাকে ৷
মোবাইল আসক্তি শিশুদের বদমেজাজি করে তুলবে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা স্নায়ু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে শিশুদের জীবনে বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায় ৷ কারণ, ইন্টারনেট থেকে তথ্য জানার প্রবণতা কম দেখা যায় নতুন প্রজন্মের মধ্যে ৷ ফোন হাতে পাওয়া মানেই তাদের কাছে বিনোদনের আগ্রহ তৈরি হয় ৷ আর এতেই পড়ছে কুপ্রভাব ৷ রাতের পর রাত কাটছে মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে ৷ এই আসক্তি কমাতে সচেতন হতে হবে অভিভাবকদেরই ৷ তাঁদের নিজেদেরও প্রয়োজনের বেশি ফোন ব্যবহার চলবে না ৷ খাওয়ার বা ঘুমানোর সময় কিংবা সময় বের করে বাড়ির শিশুদের সঙ্গে একসঙ্গে সময় কাটাতে হবে ৷ তাদের অন্য কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে ৷ আঁকা, গান, আবৃত্তি-সহ অন্যান্য পাঠ্যক্রম বহির্ভূত ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে তাদের যুক্ত রাখলে খুবই ভালো ৷
অভিভাবক রমা দাস বলেন, "স্কুল বন্ধ থাকার কারণে ছেলে ঘরবন্দী । মাঠে যাওয়ার উপায় নেই । তাই মোবাইল ফোনেই গেম খেলে, কার্টুন দেখে দিন কাটছে তার । তবে মোবাইলে আসক্তি বাড়লে স্কুল খোলার পর একটা চিন্তার বিষয় থেকেই যায় । টিভি থাকলেও মোবাইল ফোনেই বেশি সময় কাটায় তারা ।"
চাইল্ড হেলথ অ্যাক্টিভিস্ট সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, "চার মাস স্কুল বন্ধের কারণে ছেলেমেয়েদের মধ্যে মোবাইলে গেম খেলার প্রবণতা অনেক বেড়েছে । অনলাইনে ক্লাসের নামে চলছে দীর্ঘক্ষণ ধরে মোবাইলে গেম খেলা । এতে তাদের শরীরের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মানসিক বিকাশ ব্যহত হচ্ছে । এক্ষেত্রে অভিভাবকদের নিজেদেরই এগিয়ে এসে তাদের সময় দিতে হবে । চারাগাছ রোপন, ফুলের বীজ এনে তাদের গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে ।"
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্নায়ু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুব্রত সেন বলেন, "শিশু-কিশোরদের মোবাইল আসক্তির কারণে কিছু তাৎক্ষণিক ও কিছু সুদূরপ্রসারী ফল হতে পারে । স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে । দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটির ফলে চোখের উপরে চাপ পড়ছে । মাথা ব্যথা করবে । কাজকর্ম কম থাকায় তাদের শরীরের ওজন বাড়তে থাকে । যেভাবে ওজন বাড়তে থাকে সেটা পরবর্তীকালে স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো জিনিস নয় । শুধু তাই নয়, তাদের মনোসংযোগ নষ্ট হচ্ছে । স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে শুরু করবে । একটুতেই শিশু বিরক্ত হয়ে যাবে, রেগে যেতে শুরু করবে । কারণ মোবাইল ফোন-সহ যে কোনও আসক্তির ক্ষেত্রেই ব্রেনের উপরে চাপ পড়ে । তখন ব্রেনে ডোপামিন নামে হরমোন নিঃসরণ হয় । এর ফলে সেই জিনিস দেখার প্রবণতা আরও বেড়ে যেতে থাকে । সেই সময় মোবাইল ফোন কেড়ে নিলে তারা রেগে যায় । সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয় । শিশু তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে । যা মাঝে মাঝে অবসাদের রূপ নেয় । ফলে অনেক ছাত্রছাত্রীই রাগের বশে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে বসে । তাই অভিভাবকদেরও নিজেদের সচেতন হতে হবে । তাদের আলাদা করে ছেলেমেয়েদের সময় দিতে হবে । না হলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে ছেলেমেয়েদের ।"