বর্ধমান, 1 জুলাই : দূর থেকে দেখলে মনে হবে একটা ছোটো-খাটো মেলা বসে গেছে । সবুজ দোতলা বাড়িটি ঘিরে এঁকে-বেঁকে গেছে মানুষের লম্বা লাইন । আর তাঁদের ঘিরে বসেছে নানা দোকান, খাবারের স্টল । সপ্তাহের অন্য দিন এসব চোখে না পড়লেও রবিবার ছবিটা যেন সম্পূর্ণ অন্যরকম । কারণ, রবিবার সারাদিন যে ডাক্তারবাবু চেম্বারে বসেন । রোগী দেখেন বিনামূল্যে ।
বর্ধমান শহরের বিবেকানন্দ কলেজ মোড় থেকে আলমগঞ্জের রাস্তা ধরে মাত্র দুশো মিটার । পিচের বড় রাস্তা পেরিয়ে গলিতে ঢুকতেই সবুজ দোতলা বাড়ি । এখানেই থাকেন ডাঃ নিতাই প্রামাণিক । তিনি স্কিন স্পেশালিস্ট । স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রফেসর ।
ভিডিয়োয় শুনুন দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের বক্তব্য এই সংক্রান্ত খবর :টাকা নয়, সেবাই পরম ধর্ম রায়গঞ্জের ডাক্তারবাবুর
ডাক্তারবাবুর রোজকার রুটিন শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য । ভোর ছ'টা থেকে আটটা পর্যন্ত বাড়িতে রোগী দেখেন । তারপর নাকে-মুখে গুঁজেই সাইকেলে চালিয়ে যান বর্ধমান স্টেশন । সেখান থেকে ট্রেনে করে কলকাতা । গন্তব্যস্থান স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন । ফিরতে ফিরতে রাত দশটা । বাড়ি ফিরেই ফের রোগী দেখতে বসা । চলে সেই রাত আড়াইটে পর্যন্ত ।
রবিবার ছবিটা সম্পূর্ণ অন্যরকম । ভোরবেলা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত রোগী দেখেন নিতাইবাবু । মাঝখানে সামান্য কিছুক্ষণের জন্য বিরতি । স্নান, খাওয়া সেরে ফের শুরু চিকিৎসা । অন্যদিন ফিজ় নেন অতি সামান্য । তবে রবিবারটা পুরোটাই বিনামূল্যে । তাই ভিড়ও বাড়ে । রোগীর লাইনের সঙ্গে বসে যায় খাবারের দোকানও ।
বাঁকুড়া কোতুলপুরের সত্যকিংকর রায় বলেন, "গ্রাম থেকে অনেকেই ডাক্তারবাবুর কাছে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে গেছেন । সেই খবর শুনে আমিও এসেছি বর্ধমানে । এতটাই ভিড় যে সকাল ন'টা থেকে লাইন দিয়ে বেলা একটা বেজে গেলেও পৌঁছাতে পারেননি ডাক্তারবাবুর কাছে ।"
এই সংক্রান্ত খবর :ডাক্তার দিবসে 100 কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রমা সেন্টারের উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর
নিতাইবাবুর বাড়ির সামনে আইসক্রিমের ব্যবসা করেন মঙ্গলকোটের শেখ শাহজাহান । তিনি বলেন, "ভগবানের পরে যদি কারও স্থান হয়, তাহলে তিনি ডাক্তারবাবু নিতাই প্রামাণিক । আমাদের রোগ হলে ওঁর কাছেই যাই । এক পয়সাও নেন না ।"
যাকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই নিতাই প্রামাণিক কিন্তু নিরুত্তাপ । কিছুতেই যেন তিনি প্রচারের আলোয় আসতে চান না । তাঁর কথায়, "শুধু মানুষের সেবা করতে চাই । এটাই তো ধর্ম ।"