বর্ধমান, 1 ডিসেম্বর: একটা সময় ছিল যখন বর্ধমান শহরের এখানে ওখানে একটু চোখ মিলে তাকালেই দেখা মিলতো 'বুলাদি'র। বুলাদির টোল ফ্রি 1097-এ ফোন করলেই মিলতো এডস সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ। বর্ধমান শহরের প্রাণকেন্দ্র কার্জনগেট কিংবা স্টেশন লাগোয়া এলাকা ছাড়াও শহর জুড়ে আজ আর বুলাদির দেখা মেলে না। এইডস মানেই 'মৃত্যু' এই আতঙ্ক রয়েছে অনেকের মনে ৷ তবে নিয়মিত চিকিৎসা করালে এইডস নিরাময় সম্ভব, ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে জানালেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল তথা হাসপাতাল সুপার ডাঃ তাপস ঘোষ।
তিনি বলেন, "এইডস নাম নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত হবেন না। এইডস হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুস্থভাবে জীবনযাপন সম্ভব। এইডস মানেই মৃত্যু নয়। প্রথম দিকে এইডস নিয়ে অনেক সমস্যা ছিল কিন্তু দিনে দিনে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। মানুষ সচেতন হচ্ছে। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সচেতনতার বার্তা দেওয়ার ফলে সমাজে অনেক উন্নতি হয়েছে।"
স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, সচেতনার বার্তা দিলেও কী কী কারণ এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে? চিকিৎসক তাপস ঘোষ জানান, শুধুমাত্র অনিয়ন্ত্রিত যৌন সম্পর্কই নয়, এইডস বিভিন্ন কারণে হতে পারে। মূলত রক্তরস শরীরে প্রবেশের ফলেই এইডস সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই দূষিত রক্ত, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ কিংবা যাঁরা ড্রাগ নেন, তাঁদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি আছে।
শুধু শহরতলী বা কলকাতা নয়, গ্রামে গ্রামেও বাড়ছে এইডস রোগ নিয়ে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস ৷ সেক্ষেত্রে পূর্ব বর্ধমান জেলার গ্রাফ স্থিতিশীল বলে জানান চিকিৎসক ৷ তিনি বলেন, "বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটা সেন্টার আছে যেখানে নিয়মিত ভাবে রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। শুধু জেলা নয় জেলা লাগোয়া পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, হুগলি, বাঁকুড়া ছাড়াও ঝাড়খণ্ড থেকে রোগীরা চিকিৎসা করাতে আসছেন। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মানে কিন্তু রোগ বাড়ছে তা ঠিক নয়। যেহেতু এই হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায় তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগীরা এখানে আসছেন চিকিৎসার জন্য।
চিকিৎসক আরও জানান, আমরা একটা ধারণা ভেঙে দিতে চাই। অনেকেই মনে করেন যে এঁটো খাবার, কিংবা হাঁচি কাশি থেকেও এইডস ছড়াতে পারে। এটা ভুল ধারণা। রক্তরস থেকে রক্ত থেকে এবং অসতর্কতাবশত যৌন সম্পর্ক থেকেই এইডস হতে পারে। কিন্তু এইডসের রোগীকে মশা কামড়ানোর পরে সেই মশা অন্য কাউকে কামড়ালে এইডস হয় না। এটা ভুল ধারণা।"