বর্ধমান, 14 ডিসেম্বর: বর্ধমান স্টেশনে জলের ট্যাংক ভেঙে তিনজনের মৃত্যু ও 34 জন আহত হওয়ার ঘটনার পরে আতংক রয়ে গিয়েছে যাত্রীদের মধ্যে । বিশেষ করে বর্ধমান স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করা নিত্যযাত্রীরা বলছেন, বর্ধমান স্টেশনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নেই । পরিস্থিতি এমনই যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরবেন কি না, তা তাঁদের জানা নেই ।
বুধবার দুপুর নাগাদ বর্ধমান স্টেশনের 2 ও 3 নম্বর প্ল্যাটফর্মে মধ্যে থাকা একটা জলের ট্যাংক ভেঙে পড়ে । ঘটনায় মৃত্যু হয় তিনজনের । আহত হয়েছেন 34 জন । প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বুধবার দুপুরের দিকে একটা বিকট শব্দ হয় । তারপরেই শোনা যায় মানুষের আর্তনাদ । এদিকে তখন জলের ট্যাংক ভেঙে যাওয়ার ফলে হু হু করে উপর থেকে জল পড়তে শুরু করেছে । জলের প্রচণ্ড স্রোতে কয়েকজন রেললাইনেও পড়ে যায় । অনেকের মাথা-মুখ ফেটে যায় ।
যাত্রীদের অভিযোগ, বেশ কয়েকদিন ধরেই ওই জলের ট্যাংকে ফাটল ধরেছিল । সেখান থেকে জল চুঁইয়ে পড়তে শুরু করে । তাঁরা রেলের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন । কিন্তু রেল সেটায় গুরুত্ব দেয়নি । উলটে তাঁদের জানানো হয় দিন দশেক আগে সেই ট্যাংক পরিষ্কার করা হয়েছে । যদিও রেল জানিয়েছে, কাদের গাফিলতির জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা রেলের তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখছে । দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
বর্ধমান-রামপুরহাট লাইনে নিত্যযাত্রী যোগীন্দ্রনাথ সাউ । তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত আমাদের ট্রেন 2 কিংবা 3 নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসে । আমরা নিত্যযাত্রীরা এই জলের ট্যাংকের তলায় যে শেড আছে, সেখানে অপেক্ষা করি । শুধু তাই নয়, ট্রেনে আমরা নিত্যযাত্রীরা যে বগিতে উঠি, সেই বগিও এই জায়গায় পড়ে । গতকালও সকাল 9.40 পর্যন্ত ছিলাম । তাই দুর্ঘটনা যদি সকালের দিকে ঘটতো, তাহলে আমাদের প্রাণ যেত । ফলে আমরা রীতিমতো আতংকিত ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘রেলের তো গাফিলতি আছেই । কারণ, দিন দশেক আগে যদি এই জলের ট্যাংক পরিষ্কার করা হয়, তাহলে কি সেদিন ট্যাংকের অবস্থা খতিয়ে দেখা হয়নি ? যেখানে এই জলের ট্যাংক 133 বছর আগে ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা হয়েছিল । তাহলে তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তো রেলেরই । আর এত পুরনো জলের ট্যাংক রেল কেন ঝুঁকি নিয়ে রেখে দিয়েছে । অথচ রেলের গাফিলতির জন্য নিরীহ মানুষদের প্রাণ গেল । রেলের বিষয়টি নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত । আর রেলের যে ইঞ্জিনিয়রদের রাখা আছে, তাদেরই ভূমিকা কী ছিল ? এই যে মানুষদের প্রাণ গেল তার দায়ভার কে নেবে ?’’
নিত্যযাত্রী বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘ঘটনার জেরে আমরা রীতিমতো আতংকিত । আমরা 25 বছর ধরে ট্রেনে নিয়মিতভাবে যাতায়াত করছি । আমরা যে ট্রেনটা ধরি, সেই ট্রেনের জেনারেল বগি এই জলের ট্যাংকের নীচের দিকেই সাধারণত পড়ে ৷ ফলে আমরাও ট্রেন ধরতে এসে বিপদে পড়তে পারতাম । এককথায় বলতে গেলে বর্ধমান স্টেশনে যাত্রীদের কোনও নিরাপত্তা নেই । মাঝেমধ্যে দেখি স্টেশনে কাজ চলছে । অথচ দেখা যায় কাজের নামে স্টেশনকে রঙ দিয়ে সাজানো হচ্ছে । কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না । অথচ রেলের ইঞ্জিনিয়র থেকে অন্যান্য আধিকারিকেরা আছেন, তাঁদেরও একটা দায়িত্ব আছে । কিন্তু যেভাবে স্টেশনে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে, আমরা নিজেরাও জানি না আদৌ বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব কি না !’’
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘একটা দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে । খুবই দুঃখজনক ঘটনা । ঘটনার তদন্ত করার জন্য রেলের তরফে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । কাদের গাফিলতির জন্য এই ঘটনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে । দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’’
আরও পড়ুন:
- বর্ধমান স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে জলের ট্যাংক ভেঙে মৃত 3, আহত 34
- রেলের কামরা অপরিষ্কার, হয়নি স্যানিটাইজ়েশনও; অভিযোগ রেলযাত্রীদের
- থমকে ট্রেনের চাকা, বন্ধ রোজগার; আত্মহত্যা একাধিক হকারের