বর্ধমান, 17 জানুয়ারি: আদিবাসীদের শিকার উৎসব বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বর্ধমানের রথতলা রেনি কোড এলাকায় । সোমবার দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত চলে এই উত্তেজনা (Controversy on Tribal festival) । বর্ধমান থানার আইসি সুখময় চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিত সামাল দেন । পরে দুই পক্ষের আলোচনায় স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি ৷
অভিযোগ, সোমবার উৎসব চলার সময় আদিবাসীরা ইঁদুর, গোসাপ, কটাস, সজারু, বনবিড়াল শিকার করেন । দুপুর নাগাদ হঠাৎ সেখানে আসেন বনবিভাগের কর্মীরা । তারা শিকার করতে বাধা দেন আদিবাসীদের । এমনকী শিকার করা মৃত জীবজন্তু তাঁরা কেড়ে নেয় । এরপরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন আদিবাসীরা (Burdwan News) ।
সাধারণত, পৌষ সংক্রান্তির পাঁচ দিন আগে থেকে সহরায় শিকার উৎসবে মেতে ওঠেন আদিবাসীরা । উমমাহা পর্ব দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় । এরপর বঙ্গামাহা, খুন্টোও মাহা পর্ব, জালে মাহা ও সাকরাৎ মাহা পর্ব দিয়ে পরব শেষ হয় । সাকরাৎ মাহা পর্ব আসলে শিকার পর্ব । পুরনো ধর্মীয় সংস্কৃতি মেনে এদিন রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মতো রথতলা এলাকায় শুরু হয় শিকার পর্ব । গোদা, তালপুকুর এলাকার আদিবাসীরা এখানে শিকার করতে আসেন । দুপুর নাগাদ বনকর্মীরা শিকার করতে বাধা দিতেই শুরু হয় ক্ষোভ বিক্ষোভ । আদিবাসীরা বিক্ষোভ দেখান ৷ তাদের দাবি, প্রাচীন রীতি মেনে তাদের সমাজে চলে আসছে শিকার পর্ব । বন দফতর আগে থেকে তাঁদের সঙ্গে কেন কোনও আলোচনা করল না। কেন পরবের দিনে তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে ।
Bardhaman Tribal festival: আদিবাসীদের শিকার উৎসবে বাধা দেওয়ার অভিযোগ, উত্তেজনা বর্ধমানে
আদিবাসীদের শিকার উৎসব বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ (Tribal Festival in Burdwan) ৷ উত্তেজনা বর্ধমানের রথতলা রেনি কোড এলাকায় ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ ।
আরও পড়ুন: প্রত্যন্ত গ্রামের আদিবাসী ছেলেটাই আজ মার্কিন মুলুকের বিজ্ঞানী !
আদিবাসীদের পক্ষ থেকে মনা হেমব্রম বলেন, "দশ দিন ধরে আমার মকর সংক্রান্তির পরব চলছে সোমবার ছিল শেষ দিন । পশু শিকারের মধ্যে দিয়ে আমাদের এই পরব শেষ হয় । সেই রীতি মেনে এদিন আমাদের বাড়ির পুরুষ মানুষেরা ইঁদুর, কটাশ,গো-সাপ জাতীয় কিছু শিকার করেছে । এমনিতেই সকাল থেকে আমাদের বাড়ির লোকজন উপোস থাকে । অথচ এদিন পুলিশ ও বন বিভাগের লোকজন এসে তাদের আটকে রাখে । তাদের কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নেওয়া হয় । ফলে আমরা প্রতিবাদে নেমেছি ।"
তার কথার রেশ ধরেই সুন্দরী হাঁসদা বলেন, "আমাদের সমাজের রীতি মেনে এদিন শিকার করা হয় । সেই শিকারের জিনিস নিয়ে আমাদের পুজো হয় । প্রশাসনের যদি আপত্তি থাকে তাহলে আগে থেকে জানানো উচিত ছিল যে শিকার করা চলবে না । আমাদের বাড়ির বয়স্ক মানুষেরা উপোস করে থাকেন । এই শিকার করা জীবজন্তু না নিয়ে গেলে আমাদের পুজো সম্পূর্ণ হয় না । এটা আমাদের নিয়ম । তাহলে কেন আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে ।"