বর্ধমান, 21 জুন : আমফানে বিধ্বস্ত হয়েছে রাজ্যের একাংশ । বিদ্যুৎ ও পানীয় জল না পেয়ে কলকাতায় নেমে এসেছিল অন্ধকার । সেই তুলনায় অনেকটাই ভালো জায়গায় ছিল পূর্ব বর্ধমান । টানা লোডশেডিং নিয়ে ভুগতে হয়নি জেলাবাসীকে । অথচ যেসব কর্মীর হাত ধরে চরম ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেয়েছিল বর্ধমানবাসী সেইসব অস্থায়ী কর্মীরাই আজ কাজ হারিয়ে, বেতন না পেয়ে অন্ধকারে । এমনই অভিযোগ উঠেছে । আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছেন বিদ্যুৎবিভাগের কয়েক হাজার অস্থায়ী কর্মী ।
পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রায় 4 হাজার অস্থায়ী বিদ্যুৎকর্মী বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত । লো টেনশন, হাই টেনশন, মোবাইল ভ্যান কর্মীরা দিনরাত কাজ করে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন । সাব স্টেশনের অপারেটর হেল্পাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন । যখন কোনও জায়গায় লোডশেডিং হয়, সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কাজে যুক্ত থাকেন CFO কর্মীরা । ফলে ডকেট কল ও নতুন বিদ্যুতের কাজ সামাল দেওয়া সম্ভব হয় । এছাড়া বিদ্যুৎবিভাগের অফিস ও স্টোর আগলানোর মতো কাজের জন্যও অস্থায়ী পদে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হয় । শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎবিভাগের অফিসে কোনও হামলার মতো ঘটনা ঘটলে সেই ঝামেলা সামাল দেওয়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় নিরাপত্তারক্ষীদেরই । এছাড়া আছেন গাড়ির ড্রাইভার, মিটার রিডার, অস্থায়ী সাফাইকর্মী-সহ একাধিক বিভাগের অস্থায়ী কর্মীরা ।
অভিযোগ, বিভিন্ন বিভাগে জরুরি পরিষেবা দেওয়ার পরেও অস্থায়ী কর্মীদের নানা অজুহাতে ছাঁটাই করা হচ্ছে । কয়েকমাসের বেতন বকেয়া রাখা হচ্ছে । যেখানে সেখানে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে । অথচ স্থায়ী কর্মীদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর পে কমিশন বসে । তাঁদের দেওয়া হয় উৎসাহ ভাতাও । আমফান ঘূর্ণিঝড়ে যখন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় চলছিল টানা লোডশেডিং, সেই তুলনায় পূর্ব বর্ধমান জেলার মানুষকে টানা লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি । প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও পরিষেবা দিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের বিদ্যুৎ বিভাগের অস্থায়ী কর্মীরা । অথচ এই পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু কর্মীকে নানা অজুহাতে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ । বেশ কিছু কর্মীকে দেওয়া হয়নি চার থেকে পাঁচ মাসের বেতনও ।
এর আগেও তাঁরা একাধিক দাবি তুলে পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম , হুগলি, মুর্শিদাবাদ , বাঁকুড়া সহ একাধিক জেলা থেকে রাজ্য অস্থায়ী বিদ্যুৎ কর্মী সমন্বয় মঞ্চ গড়ে বধর্মানের জ়োনাল ম্যানেজারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন । কিন্তু লকডাউনের জেরে সেইসব বিষয় ধামাচাপা পড়ে যায় । এরমধ্যে আমফানের মধ্যেও তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন । তারপরও তাঁদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি ।
রাজ্য অস্থায়ী বিদ্যুৎকর্মী সমন্বয় মঞ্চের দাবি,
- স্থায়ী কর্মীদের মতো সমান কাজে সমান বেতন দিতে হবে ।
- ন্যূনতম বেতন হতে হবে মাসিক 21,600 টাকা ।
- বিদ্যুৎবণ্টন ক্ষেত্রে স্থায়ী কর্মীদের মতো অস্থায়ী কর্মীদের নিজস্ব বেতন কাঠামো চালু করতে হবে ।
- 60 বছর বয়স পর্যন্ত কাজের নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা দিতে হবে ।
- বাজারদরের ভিত্তিতে বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চালু করতে হবে ।
- ক্যাটেগরি ভিত্তিক সকল অস্থায়ী কর্মীদের সঠিক ভাতা দিতে হবে ।
- স্থায়ী কর্মীদের মতো অস্থায়ী কর্মীদের উৎসাহ ভাতা চালু করতে হবে ।
- সকল ড্রাইভারদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ESI চালু করতে হবে ।
- সকল কর্মীদের জাতীয় ছুটি ও অন্যান্য ছুটির দিন সবেতন ছুটি দিতে হবে ।
- অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে কর্মীদের মানসিক চাপ দেওয়া বন্ধ করতে হবে ।