পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Sikhsaratna : আদর্শ স্কুল গড়ে বর্ধমানের সুবীরকুমার দে এবার শিক্ষারত্ন

এর আগে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার, শিশু মিত্র পুরস্কার, অ্যাক্যাডেমিক এক্সেলেন্স আওয়ার্ড, জাতীয় পুরস্কার, যামিনী রায় পুরস্কার পেয়েছে বর্ধমান আদর্শ বিদ্যালয় । এবার সেখানকার প্রধান শিক্ষক সুবীরকুমার দে পাচ্ছেন শিক্ষারত্ন ৷

burdwan-school-teacher-subir-kumar-de-nominated-for-sikhsaratna-award-in-2021
Sikhsaratna : আদর্শ স্কুল গড়ে বর্ধমানের সুবীরকুমার দে এবার শিক্ষারত্ন

By

Published : Sep 5, 2021, 7:04 AM IST

Updated : Sep 5, 2021, 7:14 AM IST

বর্ধমান, 5 সেপ্টেম্বর :মূলত পিছিয়ে পড়া পরিবারের বসবাস এলাকায় । বেশিরভাগই আদিবাসী । সকাল হলেই পরিবারের পুরুষ-মহিলারা কাজে বেরিয়ে পড়েন ৷ ফলে ঘরের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর কারও কোনও তাগিদ নেই । হবেই বা কী করে ! বাইরে যদি কাজে না যাওয়া যায়, তাহলে যে দুবেলা দু’মুঠো ভাতও জুটবে না । অবশ্য মাঠে যাওয়ার আগে ছেলেমেয়েদের তাঁরা বলে যান স্কুলে যাওয়ার জন্য । কিন্তু বাড়িতে মা-বাবা নেই, তাই কেউ স্কুলে যায়, কেউ যায় না ।

আরও পড়ুন :Phuchka Special : বাহুবলী থেকে আইসক্রিম, বর্ধমানে পলাশের ফুচকায় জিভে জল আনা 37 রকমের স্বাদ

সেই এলাকায় অবিস্থিত বর্ধমান আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবীরকুমার দে শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাচ্ছেন এ বছর । কারণ, 2011 সাল থেকে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় একেবারে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে বর্ধমান আদর্শ বিদ্যালয়ের ৷ স্কুলের প্রবেশ পথের মুখে ডান দিক বরাবর বেশকিছু মাইল স্টোন করা আছে । বিদ্যাসাগর রাস্তায় থাকা মাইলস্টোন দেখে ইংরেজি সংখ্যা শিখেছিলেন । সেই ভাবেই এখানকার মাইল স্টোনে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সাল ও বিবরণ ৷ স্বাধীনতা দিবস, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, বঙ্গভঙ্গ রদ, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন-সহ একাধিক বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া রয়েছে ওই মাইল স্টোনে ৷

তাছাড়া সিঁড়ি বেয়ে এক তলা থেকে দোতলা কিংবা তিনতলার দিকে ওঠর সময় যে কোনও ছাত্র-ছাত্রী ইংরেজির তিন প্রকারের টেনস, বাংলা ব্যাকরণের কারক, বিভক্তি কিংবা সন্ধিবিচ্ছেদ, বীজগণিতের সূত্র-সহ সবকিছুর সঙ্গে পরিচিত হয়ে যাবে । সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে সিঁড়ির দিকে না তাকিয়ে উপরের ছাদের দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে রাতের আকাশে কিভাবে ক্যাসিওপিয়া থেকে সপ্তর্ষিমণ্ডল কিংবা কালপুরুষ আলোকিত করে আছে । চোখ কান খোলা রাখলে কখন যে পূর্ব বর্ধমান জেলার ম্যাপ, পশ্চিমবঙ্গের ম্যাপ কিংবা ভারতবর্ষের ম্যাপে সঙ্গে পরিচিত হয়ে যাবে ছাত্র-ছাত্রীরা টেরই পাবে না ।

বর্ধমান আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবীরকুমার দে

আরও পড়ুন :Sitabhog and Mihidana: বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানাকে ভারতীয় ডাকবিভাগের স্বীকৃতি

কিন্তু এই পরিস্থিতি আগে ছিল না ৷ তখন স্কুলে হাতেগোনা চার থেকে পাঁচটা ঘর । স্কুলে ইলেকট্রিক নেই । জল নেই । জানলা দরজা নেই । জানালায় পর্দা হিসেবে চট ঝোলানো থাকত । স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক চঞ্চল সেন বলেন, ‘‘আমি যখন স্কুলে যোগ দিয়েছিলাম, তখন স্কুলের ঘর বলতে সেরকম কিছু ছিল না । নামেই পাকা ঘর । দরজা-জানলা নেই । পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই । ইলেকট্রিক নেই বলে আমরা কয়েকজন শিক্ষক চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছিলাম ইস্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলে চলে যাব ।’’

তিনি জানাচ্ছেন, সুবীরকুমার দে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর পরিস্থিতি পালটে গেল ৷ একেবারে নতুন রূপ পেল স্কুল ৷ তার কারণ, পিছিয়ে পড়া এলাকার ছেলেমেয়েরা স্কুলে আসত না নিয়মিত ৷ তাই খেলার ছলে লেখাপড়া করাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে চঞ্চল সেনের দাবি ৷

স্কুলের সিঁড়ি

আরও পড়ুন :Female Referee in Football : গ্রামগঞ্জের বিস্ময় মহিলা ফুটবল রেফারি সীমা বৈরাগ্য

তাই কোনও লেখকের ছদ্মনাম কী, রাস্তায় কিভাবে চলাচল করতে হবে, সাপে কামড়ালে প্রাথমিকভাবে কী করা উচিত বা উচিত নয়, সব কিছুই দেওয়ালের এখানে-ওখানে তুলে ধরা হয়েছে । স্কুলের অশিক্ষক কর্মী কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসার পর স্কুলের চেহারাটাই বদলে গিয়েছে । ছেলেমেয়েরা মাঠে খেলা করতে করতেই ইতিহাস, ভূগোল, অঙ্ক, ব্যাকরণ সবকিছুর সঙ্গে পরিচিত হতে পারে । সবই সম্ভব হয়েছে প্রধান শিক্ষকের জন্য ।’’

সেই কারণে সুবীরবাবুর শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাচ্ছেন বলেই সহ-শিক্ষক থেকে অশিক্ষক কর্মী, সকলেই খুশি৷ আনন্দিত পড়ুয়ারাও ৷ স্কুলের নবম ছাত্রী সারিকা আঞ্জুম বলে, ‘‘আমি যখন ক্লাস ফাইভে ভর্তি হই, তখন ভাবতাম আমাদের স্কুলকে কেউ চেনে না । কিন্তু আজ শুধু জেলা নয় রাজ্যস্তরে আমাদের স্কুলের নাম পৌঁছে যাচ্ছে প্রধান শিক্ষকের হাত ধরে । আজ আমরা খুব খুশি ।’’

স্কুলে প্রবেশের মুখে থাকা মাইল স্টোন

আরও পড়ুন :Rash Behari Bose : বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে সুবলদহ গ্রাম আজও অবহেলায়

আর যাঁকে নিয়ে এত হইচই, সেই প্রধান শিক্ষক সুবীরকুমার দে বলেন, ‘‘যখন স্কুলে দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন খুবই চিন্তায় ছিলাম । আসলে আমাদের স্কুলের দু‘-তিন কিলোমিটারের মধ্যে বর্ধমানের নামকরা ছয় থেকে আটটা স্কুল আছে । স্বভাবতই সেখানে ভাল ভাল ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে । আমাদের স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রীই পিছিয়ে পড়া সমাজ থেকে এসেছে । তাই তাদের কিভাবে স্কুলমুখী করা যায় বিভিন্ন শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সেই চিন্তাভাবনা শুরু করি । অনেক অভিভাবক, বর্ধমান জেলা প্রশাসন, এনজিও সংস্থা সকলের কাছ থেকে পরামর্শ নিই ।’’

তারপর শুরু হয় বর্ধমান আদর্শ বিদ্যালয়কে সত্যিই ‘আদর্শ’ করে তুলতে সুবীরবাবুর লড়াই ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা মূলত খেলার ছলেই ছেলে মেয়েদের পড়ানোর জন্য স্কুলে মাইলস্টোন সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি গ্রামার কিংবা অঙ্কের সূত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়েছি । যাতে ছেলেমেয়েরা যখন স্কুলে ঢুকবে কিংবা টিফিনে ঘুরে বেড়াবে, সেই সময় যেন তারা পড়ার মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে ।’’

আরও পড়ুন :Bhagat Singh : খণ্ডঘোষের পাতাল ঘরে বসেই দিল্লি গণপরিষদে বোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনা ভগৎ সিংয়ের

তাঁর এই উদ্যোগ আগেই স্বীকৃতি পেয়েছে বহুবার ৷ এই স্কুল এর আগে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার, শিশু মিত্র পুরস্কার, অ্যাক্যাডেমিক এক্সেলেন্স আওয়ার্ড, জাতীয় পুরস্কার, যামিনী রায় পুরস্কার । কিন্তু যাঁর হাত ধরে বদল, সেই কান্ডারি এবার পুরস্কৃত হতে চলেছেন ৷ যদিও তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার আমাকে যে শিক্ষারত্ন পুরস্কার দিচ্ছে, সেই পুরস্কার আমি স্কুলের সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী, তাদের অভিভাবক, জেলা প্রশাসন, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, অশিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসর্গ করতে চাই ।’’

Last Updated : Sep 5, 2021, 7:14 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details